জাফর ইকবাল স্যারকে ঠিক মধ্যপন্থী বলতে পারছি না। উনি কেমন যেন মিশ্রপন্থী। উনি খানিকটা ধর্মে আছেন আবার বেশ অনেকটা জিরাফেও আছেন। উনি বেশ সেকুল্যার আছেন আবার অনেকটাই আওয়ামীলীগেও আছেন। উনি ধর্মান্ধদের ব্যাপারে কথা বলেন আবার সময়ে মোনাজাতও ধরেন। অবশ্য এখানে ওনার দোষ নেই, বাংলাদেশে টিকে থাকতে হলে এছাড়া কোনো উপায় ও নাই।
হ্যাঁ এটা সত্য ব্লগার খুনের পর ওনার আবেগী প্রতিবাদ ছিলো। অভিজিৎ আর দীপনের এর জন্য উনি দোয়া করতে ভুলেন নি যেমন তেমনি ভুলেন নি তারেক, রণদীপম বা টুটুলের সুস্থ্যতার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে। ছুটে গেছেন এখানে ওখানের প্রতিবাদ সভায়। এরপরই আবার “ইসলাম বিতর্ক" বই এর কারণে শামসুজ্জোহা মানিকের ৫৭ ধারায় গ্রেফতারের পর সেই বই এর কয়টি লাইন শুনে উনি শিউরেও উঠেছিলেন। উঠতেই পারেন, বঙ্গদেশে বসবাস করতে হলে এসব বই এর দুই লাইনেই শিউরে ওঠা ওয়াজিব আছে।
এতকিছুর পরেও উনাকে আমার খারাপ লাগে না। খুব সম্ভবত আমার কৈশোরের বই পড়ার সুখস্মৃতি থেকেই এই খারাপ না লাগা। এছাড়াও মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করার ক্ষেত্রে ওনার অবদান অনস্বীকার্য, প্রমাণ হিসাবে তো আছেই ওনার বিজ্ঞান সংক্রান্ত বই বা গণিত অলিম্পিয়াড। কমুনিকেশন টেকনোলজির উপর ওনার বেশ কয়েকটা পেটেন্ট ও আছে। এছাড়া শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে ওনার কনট্রিবিউশনের কথা বাদই দিলাম। আর এসব ভালো লাগার এবং মানুষের ভালোবাসার কারণেই উনি এতটা জনপ্রিয়।
তারপরেও ওনার উপর হামলা হলো। হামলা করলো ওনার প্রিয় সৃষ্টিকর্তার এক নেক বান্দা। সেই নেক বান্দার দাবি জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু। এক্সকিউজ খুবই লেইম, কল্পিত নবী সোলায়মানকে নাকি জাফর ইকবাল অবমাননা করেছেন সেজন্য তাকে হত্যা করা সেই নেক বান্দার কাছে ফরজ হয়ে গিয়েছিলো।
উনি নাস্তিক না। উনার সেকুলারিজমও অনেকটা আওয়ামী ঘরানার কাঁঠালের আমসত্ব জাতীয় সেকুলারিজম। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত আবেগের কারণেই নাকি কি কারণে কে জানে আওয়ামীলীগের উপর ওনার আস্থার শেষ নেই। সেক্ষেত্রে উনি অনেকটাই এক চোখা হরিণ। উনার চোখে পড়বে না আওয়ামীলীগ নানাভাবে ইসলাম তোষণ করে যে বিষবৃক্ষের জন্ম দিয়েছে উনি সেই বিষবৃক্ষের একটি ডালের ছোয়া পেয়েছেন যেমনটা তার আগে অনেকেই পেয়েছিলো। দু:খজনক ভাবে সবাই ওনার মতো ভাগ্যবান ছিলো না।
তবে মন্দের ভালো কি জানেন হয়তো ওনার সুবাদে এবারের হামলাকারী বিচারের মুখোমুখি হবে। এর আগের প্রতিটি ঘটনার মতো বই, ব্লগ খতিয়ে দেখা হবে না, হয়তো আততায়ীদের গুম খুনও করা হবে না। এতদিনের আওয়ামী তোষণ তো আর বৃথা যেতে পারে না। আর আওয়ামীলীগেরও তো একটা এগজাম্পল করে দেখাতে হবে যে তাদের গা এ হাত দিলে তারাও ছেড়ে কথা বলে না।
যাই হোক, সুস্থ্য হয়ে উঠুন ডঃ জাফর ইকবাল। শুভকামনা রইলো শুধু পারলাম না আপনার মতো কোনো সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনার জন্য প্রার্থনা করতে।