শামা আরজু

নোয়াখালির একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন শামা আরজু।

"তুমি"

জিরোপয়েন্ট নামলাম রাত প্রায় পৌনে একটা। চিরচেনা এলাকা এখন স্বদেশ নয় যেন। যেন এ দেশ এ গ্রামের আমি কেউ না। এ রাত কেবলই নরের। মনে পড়ে যায় ইয়াসমীনকে। নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়, যখন শকুন নেমে আসে সোনার বাংলায়। এ কেমন সোনার বাংলা যেখানে মানুষকে বড় নমানুষ মনে করতে হয়। পুরুষসঙ্গী ছাড়া মেয়ে মানুষকে নেহায়েত একা, ভয়ঙ্কর একা মনে করে সবাই।

দু'গুন দামে রিকশা নিলাম। দানবদের বাজার পেরিয়ে গলিতে ঢুকতেই মনে সেই দানবীয় রাতের কথা। তোমার সাথে রাস্তা পার হবো ওরা দিলো না। ওদের ছোট্ট হাতে বড় অস্ত্র নিয়ে ওরা আমাদের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায়। অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা তোমায় জড়িয়ে ধরে ছবি তুলতে বাধ্য করলো। তুমি লজ্জা পাচ্ছিলে কেবল। পুরুষ লজ্জা পায় বাবার পর তোমায় দেখলাম। আমি তোমায় রক্ষা করার জন্য ওদের সব মেনে নিলাম। ওরা দু'লাখ টাকা দেবো মর্মে ব্ল্যাংকস্ট্যাম্পে আমাদের স্বাক্ষর নিল। ওদের গডফাদার আছে। প্রায় তিনঘন্টা আটকে রেখে ওরা আমাদের ছেড়ে দিল।

রাতেই এক সাংবাদিক ছোটভাইয়ের সাথে সব শেয়ার করলাম। পরদিন এলাকার কাউন্সিলর এবং কথামতো মেয়রের সাথে কথা বলে থানায় একটা জিডি করলাম। ওরা আমাদের স্ট্যাম্প ফেরত দিলো না। আমিও ভাবলাম খাক ওসব তাবিজ বানিয়ে। তাবিজ দিয়ে নাকি কতো কিছু করা যায়!

একটা স্বপ্ন দেখি। যেদিকেই তাকাই জল ছাড়া আর কিছুই দেখি না। আমি একা জলের মধ্যিখানে। 'কুল নাই কিনার নাই। 'আবার মাঝেমাঝে এমনও দেখি আমার চার পাশে কেবল সাপ আর সাপ গিজগিজ করছে আমি সাপের ভয়ে কোথাও দাঁড়ানোর যায়গা পাচ্ছি না। ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। পালানোর পথও পাচ্ছি না। ঘুম ভাঙলেই প্রচন্ড বুক ধড়ফড় করে। আমি বুকের ভেতরকার শব্দ বাইরে থেকে শুনি। আমার দম নিতে কষ্ট হয় পরে বুঝতে পারি এ নিছক স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা আমায় ঘুমের ভেতরও তাড়িয়ে বেড়ায়।

এ কেমন সোনার বাংলা? এখানে ঘরে ঘরে দূর্গ তো হয়নি হয়েছে নেশাখোর আর অস্ত্রবাজদের রক্তের হোলিখলা আমার মতো মানুষদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। তোমার কেনা কেক ছিলো সেটা খেয়েই শুয়ে পড়া। দাঁত মাজার অভ্যাস ছিলো না, তোমাকে মনে করে তাই করি। রান্না ঘরের আলোটা জ্বালালে শোবার রুম খানিকটা আলোকিত হয়। পুরো অন্ধকারে ভয় হয়। শুয়ে পড়ি। শুচিবাই তোমার। পা মোছার কাপড়টা আলাদা। আমার মাথার কাছেই ঝোলানো ছিলো। খুসখুসে কাশি। গলায় কাপড় না জড়ালেই এই এক সমস্যা। উঠতে ইচ্ছে করছে না। তোমার পা মোছার কাপড়টা টেনে নিয়ে গলায় জড়ালাম। ঘেন্না করবে কেনো? পা তো ধুয়েই মোছো। আর তোমারই তো পা। তুমিই তো। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রায় দেড়টা। জানালা খোলার যো নেই। সারাক্ষণ নেশাখোরদের। হরিপদ কেরানীর ঘর মনে পড়ে যায়। নিজের বোনের ঘরে খাবার আবদার করি না। মামাতো বোনের ঘরেই খাবার কতা ছিলো। অতো রাতে জাগালাম না। জার্নিতে কেউ কখনও কিছু কিনে দেবার মতো কেউ ছিলো না আমার। আজকাল মেয়েটা দেয়, সঙ্গে তুমিও।

8302 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।