(পূর্ব প্রকাশিতের পর) কাঁথা মুড়ে শুয়ে পড়ি খড়ের ওপর, খড় ওম দেবে শীতে। ছটকু ঘুমিয়ে কাদা। ছটকু সেরাতে এভাবেই ঘুমিয়েছিল, মাথায় বালিশ পড়তেই ছটকুর ঘুম এসে যায়। ও না ঘুমোলে নির্ঘাত চেঁচাত, আর ওরা ঠিক গুলি করে মারত ওকে, কেবল ওকে কেন, যারা ঘুমিয়ে ছিলাম ও বিছানায়–আমাকে, ইয়াসমিনকে। আমি অবশ্য ঘুমোইনি, ঘুমের ভান করে পড়েছিলাম, যেন ঘুমের মধ্যে আমি তখন ঘুমরাজ্যের ঘুমপরীর সঙ্গে খেলা করছি, দোলনা দুলছি, যেন আমি আর মানুষের দেশে নেই, যেন আমি কিছুই টের পাচ্ছি না ঘরে অনেকগুলো বুট পরা লোক হাঁটছে, কাঁধে তাদের বন্দুক, তারা যে কোনও সময় হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে ইয়ার্কি করতে করতে গুলি করে মারতে পারে যে কাউকে, কেউ ঘুমিয়ে নেই জানলেই তার খুলি উড়ে যাবে গুলিতে, তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে ক্যাম্পে, ক্যাম্পে নিয়ে চাবকে চাবকে বেয়নেটের গুঁতোয় গুঁতোয় হাড়গোড় গুঁড়ো করা হবে। বুট পরা লোক যা খুশি করুক, তুমি ঘুমিয়ে থাকো মেয়ে, তোমার চোখের পাতা যেন না নড়ে, তোমার গা হাত পা কিছু যেন না নড়ে, হাতের কোনও আঙুল যেন না নড়ে, তোমার বুক যেন না কাঁপে, যদি কাঁপেই যেন বুকের কাঁপন ওরা, যখন মশারি তুলে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে, টর্চের আলো ফেলবে তোমার ওপর, তোমার মুখে, তোমার বুকে, তোমার উরুতে, চোখ থেকে লালা গড়াবে, জিভ বেয়ে আগুন ঝরবে আর কথা বলবে এমন ভাষায় যা তুমি বোঝ না, টের না পায়। টের না পায় তোমার এক ফোঁটা অস্তিত্ব, টের না পায় তুমি আছ, তুমি জেগে আছ, যদিও তুমি আছ, জেগে আছ।যদি পায়ই টের, তবে যেন ওরা বলতে বলতে চলে যায়, তুমি ঢেঙ্গি মেয়ে কেবল, তুমি কিশোরী হওনি, যুবতী হওনি, এখনও তোমার বুনি উডে নাই।
আমার গা বেয়ে ঠান্ডা একটি সাপ হাঁটছিল, সাপটি আমার গলা পেঁচিয়ে ছিল, আমার কষ্ট হচ্ছিল নিঃশ্বাস নিতে, তবু আমি নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম, টর্চের আলোয় আমার চোখের পাতা কাঁপতে চাইছিল, তবু আমি চোখের পাতা রাখছিলাম চোখের ওপর, ছটকুর ঠ্যাং একটি তোলা ছিল আমার ঠ্যাংয়ের ওপর, ঠ্যাংটিকে ওভাবেই পড়ে থাকতে দিচ্ছিলাম, আমার হাত একটি পড়ে ছিল ইয়াসমিনের পেটের ওপর, সেটিকে ইয়াসমিনের পেটের ওপরই পড়ে থাকতে দিচ্ছিলাম, কোলবালিশ ছিল আমার পিঠের পেছনে, সেটিকে পিঠের পেছনে দিচ্ছিলাম পড়ে থাকতে।
বুটজুতোর লোকগুলো দাঁড়িয়েছিল খাটের কিনারে, এক হাতে মশারি, আরেক হাতে টর্চ আর চোখগুলো জিভগুলো লালাঝরা আগুনঝরা আমার চুলে চোখে নাকে কানে গলায় বুকে পেটে তলপেটে উরুতে ঠ্যাঙে পায়ে। ওদের গা থেকে গড়িয়ে ঠান্ডা সাপ সড়সড় করে নেমে এল আমার শরীরে, সারা শরীর হেঁটে বেড়ালো, পিঠে পেটে তলপেটে, যৌনাঙ্গে, শুঁকল। সাপ ঢুকে গেল আমার মাংসের ভেতর, হাড়ের ভেতর, রক্তে, মজ্জার ভেতর।
বন্দুক নিয়ে, খানিকটা নুয়ে, যেহেতু তাঁর মাথা দরজার মাথা ছাড়িয়ে যায়, খালেদ চলে যাওয়ার পর আমার হাড়ের ভেতর সেই ঠান্ডা সাপটি আবার হাঁটে। আমি চোখ খুলে রাখি যদি দেখতে পাই বুট পায়ে কেউ আসে, মাথায় হেলমেট পরা কেউ, জলপাই রঙের পোশাক পরা। খড়ের ওম, গায়ের কাঁথা, কিছুই আমার ঠান্ডা হয়ে থাকা শরীরকে উষ্ণ করে না। সাপ আমার শরীর ছেড়ে নড়ে না।
ওভাবে কতক্ষণ পড়ে ছিলাম আমি! কতক্ষণ ঘুমের মত করে না ঘুমোনো মেয়ে! মনে হচ্ছে বছর পার হচ্ছে, ওরা তবু টর্চের আলো নিবোচ্ছে না, যুগ পার হচ্ছে তবু মশারি ছাড়ছে না হাত থেকে। মনে হচ্ছে, ঠান্ডা হয়ে হয়ে আমি মরে যাচ্ছি। হালকা হয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীর, কবুতরের গা থেকে ঝরা একটি পালকের মত। আমি আর ঘুমে কাদা ছটকু আর ইয়াসমিনের মধ্যিখানে শোয়া নেই, আমাকে উত্তুরে হাওয়া এসে নিয়ে যাচ্ছে চাঁদের দেশে। সামনে বুট পরা কেউ আর দাঁড়িয়ে দেখছে না, সবার নাগাল ছেড়ে আমি অন্য এক দেশে।
চাঁদের বুড়ি চরকা কাটছে আর হাত নেড়ে আমাকে বলছে এসো হে এসো। ও চাঁদের বুড়ি গো আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে, জল দেবে? জল? চাঁদে তো জল নেই। কী বল, চাঁদে জল নেই! আমি যে তবে মরে যাব। তেষ্টায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। বুটের শব্দগুলো দূরে চলে যাচ্ছে, এ ঘর থেকে দূরে, আরেক ঘরে। চাঁদের বুড়ি বলে চোখ খোল মেয়ে, তুমি ঘামছ কেন শীতের রাতে! না বুড়ি আমি চোখ খুলব না, চোখ খুললে আমি আগুন দেখব আর লালা দেখব, ঠান্ডা একটি সাপ দেখব আমার গায়ে, আমি চোখ খুলব না। চোখ বুজেই ছিলাম, ইয়াসমিনের পেটের ওপর আমার হাত, আমার ঠ্যাংয়ের ওপর ছটকুর ঠ্যাং।
দূর থেকে ভেসে আসে বাঁশির সূর, কে বাঁশি বাজায় এত রাতে। কে আমার ঘুম ভাঙাতে চায় অসময়ে, আমি আজ রাতে আর জাগব না, শুনশান রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়, চোখ বোজ সকলে, ঘুমমেঘ তোমাদের ওড়াতে ওড়াতে চাঁদের দেশে নিয়ে যাবে, চাঁদের বুড়ি কোনও টুঁ শব্দ করবে না, চরকা কাটা ফেলে বুড়িও মেঘের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাবে।
এ আসলে বাঁশির মত, বাঁশি নয়। এ আমার মা’র ফোঁপানো কান্না। মা কোথাও কাঁদছেন, ঘরে নয়, ঘরের বাইরে। মা সেই মাটিতে লুটিয়ে কাঁদছেন, যে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন বাবা। রাসু খালু বলছেন না মরে নাই, বড়বু কাঁইন্দোন না, দুলাভাই মরে নাই। কিন্তু মরার মত। রাসু খালু নারকেল গাছের পেছনে দু’হাত বাঁধা বাবার বাঁধন খুলে দিলেন আর তাঁর কাঁধ থেকে বাবার মাথা পিছলে গেল, পিছলে যেতে যেতে মাটিতে, ঘাসে, উপুড় হয়ে।
বাবার শরীরখানা টেনে ঘরে তোলেন তিনি। ঘরের মেঝেয় পড়ে থাকে প্রায় নিস্পন্দ শরীর, রক্ত ঝরছে মুখ থেকে, বুক থেকে, পেট থেকে। রাসু খালুর এ বাড়িতে থাকার কথা নয়, এসেছিলেন দরদালানের ফাঁক ফোকরে লুকোতে। আমাদের থাকার কথা দাপুনিয়া। হাঁসপুরে ঘরপোড়া ধোঁয়া ওড়ে, তাই হাসঁপুর থেকে অন্ধকারে পালাতে হয়েছিল দাপুনিয়া। সেখানে, পাকা রাস্তার কিনারে বাড়ি খালেদের, হাশেম মামার হরিহর আত্মার, সে বাড়ির ভেতরে গা ঢেকে বসে ছিলাম। শহর থেকে বাতাস ভেসে আসে খবর নিয়ে, গন্ডোগোল থামছে। সেই বাতাসের পেছন পেছন তহবনের ফতফত শব্দ তুলে হাত বৈঠার মত নেড়ে হন হন করে হেঁটে এসে নানা, দাপুনিয়া বাজারের দক্ষিণে, খালেদের বাড়িতে, বলেন–চল চল বাড়ি চল, গন্ডোগোল থামছে। নানার চিবুকের দাড়ি বাতাসে নড়ে, ডানে বাঁয়ে। শুনে, পুঁটলি-পাঁটলিসহ, প্লাস্টিকের ঝুড়িসহ নানি আমি মা ছটকু ইয়াসমিন রওনা দিই শহরের দিকে। নানি চলে গেলেন এঁদো গলির পুকুর পাড়ে, চৌচালা ঘরে। আর মা তাঁর দু মেয়ে নিয়ে অবকাশের কালো ফটক খুলতেই বাবা বলেন–এ কী করলা, শহরে আইছ কেন, যুদ্ধ শেষ অয় নাই তো!
যুদ্ধ শেষ হয়নি তা পাড়া দেখেই টের পেয়েছি। অর্চনাদের বাড়ি খাঁ খাঁ করছে, প্রফুল্লদের বাড়িও। বিভাদের বাড়িতে বিভারা নেই, অদ্ভুত সব মানুষেরা, ভিন ভাষায় কথা বলে।
বাবা বলেন, বিহারিরা সব হিন্দু বাড়ি দখল কইরা রইছে।
উঠোনে ঘাসগুলো আমার মাথা সমান লম্বা হয়ে গেছে, যেন এ বাড়িতে হাজার বছর ধরে কেউ থাকে না। মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ি দেখেছিলাম এমন, দালান থেকে চুনসুরকি ইট খসে পড়ছে, লম্বা ঘাসের ভেতর সড়সড় করে সাপ হাঁটছে আর ঘরগুলোর ভেতর হু হু হু হু করে ভুতের সঙ্গে ডাংগুটি খেলছে বাতাস।
উৎকণ্ঠার গলা-জলে ডুবে বাবা বলেন, শহরের অবস্থা ভাল না। ডাক বাংলায় মিলিটারি ভর্তি। রাইতটা কাটাইয়া সকালে রওনা দেও।
হ্যাঁ, তাই কথা ছিল। মা বড়দাদাকে পাঠিয়ে নানিকে ডেকে আনেন অবকাশে। চৌচালা ঘরে, টোকা দিলে খসে পড়বে দরজা জানালা, আবার না ডাকাতি হয়ে যায়। নানিও বোরখার তলে দু’হাতে প্লস্টিকের ঝুড়ি চেপে রিক্সা করে পৌঁছে যান দালানে, নিরাপত্তায়। রাত গিয়ে সকাল হলেই দাপুনিয়া রওনা হতে হবে। নিঝুম বাড়িতে নানি পেতেছিলেন জায়নামাজ। জায়নামাজের কিনারে, দেয়াল ঘেঁসে রেখেছিলেন নীল প্লাস্টিকের ঝুড়ি। চিঁড়ামুড়ি,গুড়। নামাজে বসলেও নানি ক্ষণে ক্ষণে দেখেন ঝুড়িটি, ঠিক ঠিক আছে কি না। ঝুড়ি নড়ে না, নানি নড়েন। হাঁসপুকুরের বাড়িতে ঝুড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়েছিলাম চিঁড়ে গুড় খাব বলে, নানি তখন নামাজে দাঁড়িয়ে হাতদুটো হাঁটুতে রেখে নুতে যাচ্ছিলেন, তাঁর আর নোয়া হয়নি, সেজদা হয়নি, চিলের মত ছোঁ মেরে নিয়ে নিলেন ঝুড়িটি।
বলেছিলাম, চিঁড়া খাইতে ইচ্ছা করতাছে।
নানি ধমকে ওঠেন, চিঁড়া খাইতে অইব না। ভাগ।
নামাজ প্রায় পড়া শেষ করে এনেছেন, এমন সময় কালো ফটকে শব্দ হয় ভীষণ। ভীষণ সেই শব্দ, যেন এক পাল বুনো হাতি এসেছে কলাগাছের মত দাঁড়ানো বাড়িটি খেতে।
রাসু খালু দৌড়ে এসে নানিকে বলেন, পালান পালান মিলিটারি।
মা বসে কোরান পড়ছিলেন ঘরে, যে ঘরে ছটকু আমি ইয়াসমিন সবে শুয়েছি। রাসু খালুর পালান পালান শব্দ কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে কোরান ফেলে, পড়তে গিয়ে কোরানের ওপর রাখা ছিল অনন্ত বালা দুটো, ফেলে, মা ছুট ছুট।
মা আর নানি উঠোনের অন্ধকারে হারিয়ে যান, মেথর ঢোকার দরজা গলে খাঁ খাঁ করা প্রফুল্লদের বাড়ি।
বাবার শরীর পড়ে থাকে মেঝেয়। নানি অন্ধকার থেকে ফিরে জায়নামাজ পাতা জায়গায় হাতড়ান, আবছা আলোয় হাতড়ান আর বিড়বিড় করে বলেন, আমার ঝুড়ি কই, এই রাসু এই ঈদুন, আমার ঝুড়ি কই?
রাসু খালু চাপা স্বরে বলেন, বাড়ি লুট হইয়া গেছে।
মা ঘর থেকে ঘরে মোমবাতি হাতে ঘোরেন। আলমারি খোলেন, টাকা পয়সা নেই। কোরান আছে, কোরানের ওপর রাখা অনন্ত বালা নেই। নানির ঝুড়ি নেই।
পলকের মধ্যে এত কিছু ঘইটা গেল, নোমানের বাপরে মাইরা ফালাইয়া রাখল, বাড়ি লুট অইল। কী পাপে যে শহরে আইছিলাম! ও মা গো এ কী অইল গো! মা ফুঁপিয়ে বলতে থাকেন।
নানি হাতড়াতে থাকেন সারা ঘর। ঝুড়ি নেই। বাবার মুখ থেকে শব্দ বেরোয় আহ উহ, পানি দেও। রাসু খালু পানি ঢালেন বাবার মুখে। বাবার শরীর নড়ে না, ঠোঁট নড়ে। রাসু খালুর গা কাঁপে, ভয়ে। বাড়ির মেয়েমানুষদের বাইরে পাঠিয়ে তড়িঘড়ি তিনি লুকিয়েছিলেন খাটের তলে। মেয়েমানুষের প্রতি এদের বিষম লোভ, দেখলেই, কিশোরী কি মাঝবয়সী, এদের পান্তলুন ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে শক্ত দন্ড। বিছানার চাদরে গা মুড়ে বসেছিলেন তিনি খাটের তলে যেন দেখলে মনে হয় লেপ কম্বলের বস্তা। বিড়বিড় করে কলমা পড়ছিলেন, মরার আগে আগে কলমা পড়লে ঈমান মজবুত থাকে। বেরিয়ে এসেছেন কালো ফটকের বাইরে বুটের শব্দ মিলিয়ে যাওয়ারও পর। গা এখনও কাঁপছে তাঁর, খাটের তলে যেমন কেঁপেছিল। বাবাকে পানি খাইয়ে গায়ের গেঞ্জি তুলে বুকে থু থু দেন রাসু খালু।
মার শরীরখানা ধপাশ করে মেঝেয় পড়ে–সব্বনাশ অইয়া গেছে। মা’র ঝুড়ির ভিতরে চল্লিশ ভরি সোনা ছিল। বিশ হাজার টাকা ছিল। ঝুড়ি নাই।
এত সোনা কই পাইছেন আম্মা? রাসু খালু চোখ গোল করে জিজ্ঞেস করেন। বাড়ির সব বউ ঝিগোর সোনা। পাড়া পড়শির সোনা। পারুলের, ফজলির, রুনুর, ঝুনুর, সোহেলির মা’র, সুলেখার মা’র, আর সাহাব ভাইএর বউএর গয়নাগাটি। মা আমার লক্ষ্মী বইলা মা’র কাছে ওরা রাখতে দিছিল। মা ঘুমায় নাই। এক রাইতও ঘুমায় নাই। মাইনষের আমানত আগলাইয়া রাখছে।
ভূতে পাওয়া চিকন গলায় মা বলেন।
ঘরে মোমবাতি জ্বলে নিবু নিবু। মা বসে থাকেন মেঝেয়, বাবার না নড়া শরীরের কাছে। ফুঁপিয়ে কাঁদেন মা।
রাসু খালু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, মাইনষে ত মাটির নিচে গয়নাগাটি টাকা পয়সা রাইখা দিছে। আম্মা আবার এইগুলা নিয়া চলতে গেছেন ক্যান? জান বাচানি ফরজ বড়বু। আপনাগোর ইজ্জত বাঁচছে, এইডা বড় কথা।
নানি হাতড়ান সারাঘর। খাটের তলে, সোফার তলে, জায়নামাজের তলে। ঝুড়ি নেই তবু ঝুড়ি খোঁজেন।
গ.
নানি হাতড়ান হাড়গুলো। শহরের বড় মসজিদের কুয়ো থেকে হাড় তোলা হয়েছে। হাজার হাজার হাড়। হাড় দেখতে ভিড় করেছে অগুনতি মানুষ, হারিয়ে যাওয়া ছেলের হাড়, স্বামীর হাড়। নানি হাড়গুলো হাতড়ান। পায়ের হাড়, বুকের পাঁজর, হাতের হাড়, মাথার খুলি। নানি হাশেমের হাড় খোঁজেন। সন্ধে হয়ে আসে। মানুষেরা রুমালে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরে যায়। নানি মসজিদের কুয়োর পাড়ে বসে, হাড়ের পাহাড়ে ডুবে হাশেমের হাড় খোঁজেন।