
এই বছরে অনেক তারকাদের নতুন প্রেমের গুঞ্জন যেমন শোনা গেছে, তেমনি বিয়েও করেছেন অনেকে, অনেকের হয়েছে ছাড়াছাড়ি। কারো কারো ঘরে এসেছেন নতুন অতিথি, কেউবা এখনো অতিথির অপেক্ষায়। এই সব খবর আমরা সংবাদপত্র খুললেই পাই। এইসব সংবাদই কোনো কোনো সাংবাদিকদের রুটিরুজির ব্যবস্থা। আমাদের যাদের হাতে সময় কম, এইসবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে জীবনে, তারা একবার চোখ বুলিয়ে এইসব মনে রাখারও দরকার মনে করি না। তবে যাদের আছে অফুরন্ত সময়, করার মতো কাজ খুঁজে পান না, আড্ডায় এইসব গল্প তাদের জন্যে বিনোদনই বটে। এছাড়াও কিছু মানুষ আছেন, যাদের হয়তো অনেক জরুরি কাজ আছে, সেই কাজে মন লাগাতে পারেন না ঠিকমতো, সব সময় এক ধরণের বিষন্নতা তাড়িয়ে বেড়ায়, ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নেই। চোখের সামনে দেখেন পৃথিবী পাল্টাচ্ছে, বদলাচ্ছে মানুষ, বদল আসছে আশেপাশের মানুষের জীবনে, চিন্তায় চেতনায়; তবে নিজে বসে আছেন সেই একি জায়গায়, যেখানে কোনো পাত্তা পাওয়া যায় না, বদলানোর সুযোগ নেই, যেই যোগ্যতা আছে, তা নিয়ে ভদ্র সমাজে তাল মিলানো কঠিন, যখন নিজেকে নিয়ে প্রচন্ড হতাশার ফলে রাগে- ক্ষোভে ভেতর চৌচির, বলা বা সয়ে যাবারো অবস্থায় নেই, তারাই দেখা যায় মুখ দিয়ে বোমা ছাড়েন এই সোস্যাল মিডিয়ায় এসে। কখন, কোথাও কি বলছেন হুঁশ কাজ করে না ।
মিডিয়ার বাইরে তারকাদেরও একটা সাধারণ জীবন আছে। নাটক, সিনেমা, মডেলিং এইসব তাদের পেশা । তারকারাও মিডিয়ার বাইরে সাধারণ মানুষ, সকলের মতো ক্ষিধে পেলে খান, ঘুমান, টয়লেট করেন, আর সবই করেন যা সাধারনেরা করেন। তবে তাদের একটা বিষয় একটু আলাদা। তারা ব্যস্ত থাকেন, নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য দিতে জানেন, বেকার না, নিজের ইনকামে নিজেই চলেন; যার ফলে অন্য সাধারণ মানুষের থেকে তারা অনেক বেশি স্বাধীন স্বতন্ত্র, মুক্ত চিন্তার মানুষ। তারা যখন প্রেম করেন, তখন প্রেম সমুদ্রে হাবুডুবু খান, সবাইকে জানিয়েই করেন, কারো খেয়ে তো আর প্রেম করেন না যে, কৈফিয়ত দিতে হবে; তবে যারা প্রেম পিয়াসী হয়ে প্রেমের দেখা পায় না এসব দেখে, তাদের তখন জ্বলে বৈকি। জ্বলা মুখ দিয়ে বের হয়, আহা! নায়ক নায়িকাদের আবার প্রেম, আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে। আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে শুধু তারকারা নয়, যাদের সুযোগ, সাহস, যোগ্যতা আছে তারা সকলেই করেন। যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা সকলে জানি, প্রকাশ্যে যাদের পাওয়া যায় না, তারা ফেরেস্তার মতোই থেকে যান। তারকাদের বিয়ে মানেই, আম জনতার বস্তাপচা লেকচার, টিকবে না। আরে বাবা, সংসারে না পোষালে শুধু তারকারা নয়, সাধারণ মানুষেরও টিকে না।
সেদিন এক তারকার ডিভোর্স হতেই মন্তব্যতে দেখলাম, মিডিল ইস্টে থাকা এক ইতর লোক মন্তব্য করেছেন, এখনতো ডিভোর্স হয়ে গেছে, আসেন আমাদের বিদেশি ব্যাচেলর ভাইদের সাথে এক এক রাত করে থেকে যান। এই লিখার নিচেও অনেক লাইক দেখলাম। এইসব কথা দেখলে মনে হয়, এদের চোদ্দগুষ্টির কেউ ডিভোর্স দেয় নি। ডিভোর্স যদি খারাপ ভাবে দেখা হয়েই থাকে, তবে যিনি এই জাতীয় প্রস্তাব দিলেন, তিনি কোন জাতের ভদ্রলোক? বহু নারীদেরও দেখলাম বলছেন, সমস্যা নাই দুইদিন না যেতেই আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন। যেইসব পুরুষ এই জাতীয় মন্তব্য করেছেন, তাদের কথা শুনলে মনে হবে সারা শরীর-ই লিঙ্গ দিয়ে বেষ্টিত, ওখানে জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক বলতে কিছু নেই। মিডিয়ায় এসে নায়িকাদের গালি দেবে, দিন-রাত থাকবে মডেল, নায়িকাদের স্বপ্নে মত্ত, তারা কার সঙ্গে প্রেম করে, কারে বিয়ে করলো, কবে ছাড়াছাড়ি হচ্ছে, এদের ভাব দেখলে মনে হয়, জীবনে কোনো সুন্দরি মেয়ে এদের দিকে তাকায় নি অবশ্য বদমায়েশদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, সুস্থ মানসিকতার মানুষের এদের দিকে চোখ যাওয়ার কথা না। এরাই দেখা যায় দেশে এসে কচি মেয়ে চায় বিয়ের জন্যে। তারপর সেই বউকে মানুষ নয় যৌন বস্তু হিসেবে দেখে। আর নারীদের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, নিজে যা করার যোগ্যতা নেই, মানে শত অত্যাচারের মধ্যে থেকেও বেরিয়ে আসার যোগ্যতা নেই, বা বের হয়ে আসতে চান, তা না পারার ফলেই ভেতরের আকাংখা থেকে যেই অবদমন সৃষ্টি হয়, এটাই তার বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা উল্টালেই দেখা যায়, স্বামী পুড়িয়ে দিয়েছেন বা মারতে মারতে মেরেই ফেলেছেন, এমনকি অনেকে লাইভে এসেও বউকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেন না। বউ খারাপ হলে, বা না পোষালে তাকে সুস্থ -সুন্দরভাবে ডিভোর্স দেয়াই যায়। হত্যা করতে হবে কেনো? তবে সংবাদপত্রে যেই সব খবর বের হয় না আমরা তার খবরও পাই না। খবর না পেলেও, খবর অনুমান করা করা যায়, যখন আরেকজন তার নিজের খেয়ে, নিজের সুখের জন্যে, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আর সেখানে গিয়েও যখন দেখা যায় কিছু অথর্ব নারীরা বিরূপ মন্তব্য করছেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, তার আসল কষ্টটা কোন জায়গায়।
তারকাদের ঘরে খাবার না থাকলে, আপনি যেমন দিতে যাবেন না, তেমনি আপনাদের ঘরেও খাবার না থাকলে তারকাদের ঠেকা নেই। মানে, একজন মানুষ যদি তার, প্রেম, বিয়ে, সংসার বা ডিভোর্স নিয়ে ভালো থাকে, তাতে তো অন্যকারো সমস্যা হবার কথা না। এইটা নিয়ে বলার কি আছে দেখি না। তবে একটা কথা ঠিক, প্রেম, বিয়ে, বা ডিভোর্স দিতে যোগ্যতা লাগে। ডিভোর্স দিয়ে আবার নতুন সংসার শুরু করতেও সাহসের সঙ্গে যোগ্যতা লাগে। মানুষ মুখে যতই বলুক রূপেই নয়, গুণেই পরিচয়। কিন্তু হিসাব মিলায়, "আগে দর্শনধারী, পরে গুণ বিচারি"। তারকাদের চেহারা ভালো, ইনকাম ভালো, চেনাজানা ভালো ভালো উন্নত মানুষদের সাথে। তাদের নতুন সংসার গড়ে নিতে সমস্যা হবার তো কথাই না। সবাই ভালো থাকতে চায়, নিজেকে ভালো রাখতে চায়, তবে পারে না। নিজে যা কামনা করে, চোখের সামনে অন্যকে সেটা ভোগ করতে দেখে জ্বলুনি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ওই সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখাটাও জরুরি। শুধু তারকারা নয়, বহু মেরুদন্ড ওয়ালা সাধারণ মানুষও আছেন, যারা ঝগড়াঝাটি, জোড়াতালির সংসার থেকে বেরিয়ে এসেছেন, নিজেদের মতো করে সুখী জীবন যাপন করার চেষ্টা করছেন। সুখী হওয়াটা জানতে হয়। আপনাকে সুখী করার দায়িত্ব আপনার নিজের।
এই যে এতো কথা বলে মুখের চুলকানি মিটানোর চেষ্টা করেন; পেরেছেন ভয় দেখিয়ে কোনো যোগ্য লোকের বিয়ে বা ডিভোর্স আটকাতে? তারা যা করার করবেন। যতোদিন সংসার করবেন ততোদিন প্রেমের সাথেই করবেন। প্রেম নাই তো সংসার নাই। সাধারণেরা তো সারা জীবন এক সাথে থেকে, বছরে বছরে বাচ্চা পয়দা করেও প্রেমের নাগাল পান না। বেশিরভাগই স্বামী/স্ত্রী নিজেদের নিয়ে সুখী না। প্রথমত সমাজের ভয়ে, দ্বিতীয়ত যোগ্যতার অভাব, তৃতীয়ত অনিশ্চিত জীবন ( বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে, তারা ভয়ে থাকেন, এই বরকে ছেড়ে দিলে আরেকজন হয়তো পাওয়া যাবে না, মানসিক, সামাজিক বাদ দিলেও শারীরিক চাহিদার ব্যপারে এসে একটু সরে দাঁড়ান, ভাবখানা এমন, " নাই মামুর চেয়ে কানা মামু ভালো)।
কথা হচ্ছে, আপনি ব্যাচেলর আছেন, বা যা চাচ্ছেন তা পাচ্ছেন না বা ব্যক্তি জীবনে সুখি না, তাতে কেউ ঠেকায় নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে গালি দিলে বা বিরূপ মন্তব্য করলেই যে, আপনার ভয়ে, এখানেই সবকিছু থেমে যাবে, তাও নয়। তারচেয়ে নিজেকে যোগ্য করুন, ভালো ভালো কাজ করুন। এমন না যে, আপনি সোস্যাল মিডিয়ায় এসে যা ইচ্ছে তাই বলবেন, আর সামনাসামনি হলে ভদ্রলোক সাজবেন। মনে রাখবেন কোনো কিছু লুকিয়ে করার জায়গা নেই এই সোশ্যাল মিডিয়ায়। আজ আপনি যা করবেন, সব রেকর্ড থেকে যাবে। কয়দিন নিজের অবদমিত ভেতর লুকিয়ে রাখবেন। তার থেকে নিজেকে পাল্টান। সাংবাদিকরা এইসব লিখে করে খান। তাদের নিউজ দরকার। অন্যের ব্যক্তি জীবন নিয়ে আজে বাজে কথা বলা আপনার/ আপনাদের পেশা না। বিনোদন নিন পরিবারের কাছ থেকে। নিজের পরিবারের মানুষকে সুখে রাখার চেষ্টা করুন; ভাই, বোন, মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে, তাদের সময় দিন। আজ আপনি অন্যদের নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করছেন, কাল আপনার পরিবারের কারো জীবনেও বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে, ঘটতে পারে অন্য কোনো দূর্ঘটনা। নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না, কম বয়সে আপনার বোন, মেয়ে বিধবা বা ডিভোর্স হলে একাকী জীবন কাটাক। যদি তা নাই চান, তবে অন্যদের নিয়ে এইসব বাজে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
কামনা করি নিজের পরিবার নিয়ে সকলে ভাল থাকুন। তবে নিজেকে সুস্থ সুন্দরভাবে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজের। নোংরামী দিয়ে সমাজ পাল্টানো যায় না।
