আরিফ জেবতিক

সাংবাদিক

তারেক রহমানের পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব সমাচার

ফেসবুক ফিডে দেখছি অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে ধারনা না থাকায় ঠিকমতো বিষয়টি এড্রেস করতে পারছেন না। তাঁদের জন্য সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা যাক।

১. যেখান থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্টটি বাংলাদেশে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি একটি ইমিগ্রেশন রিপোর্টিং সেন্টার। যুক্তরাজ্যে ১৪টি এরকম রিপোর্টিং সেন্টার আছে। কারো ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আবার ভিসার জন্য এপ্লাই করতে হয়। যদি ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে ইমিগ্রেশন থেকে চিঠি দিয়ে এসব রিপোর্টিং সেন্টারে গিয়ে হাজির হতে বলা হয়। আবার কেউ যদি রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করে তবে তাঁদেরকেও এই রিপোর্টিং সেন্টারে হাজির হতে বলা হয়। সবক্ষেত্রেই নিজ নিজ পাসপোর্ট নিয়ে উপস্থিত হতে হবে। রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করলে নিজ দেশের পাসপোর্ট এসব রিপোর্টিং সেন্টারে জমা দিতে হবে। রাজনৈতিক আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে হয় ডিপোর্ট করবে নয়তো আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত হলে এরপর পাসপোর্টটি ফেরত দেবে। এটি মোটামুটি কয়েক মাস থেকে বছর খানেকের প্রক্রিয়া। এখন যদি সবশেষে কেউ এই পাসপোর্ট ফেরত না আনেন, (বিশেষ করে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে বা অন্য কোনো কারণে) তাহলে এই পাসপোর্টটি ঐ দেশের দুতাবাসেই পাঠিয়ে দেয়ার কথা। মনে রাখতে হবে যে পাসপোর্টের মালিক আসলে রাষ্ট্র, তাই সেটি দুতাবাসে পাঠিয়ে দেয়াটাই যৌক্তিক।

২. পাসপোর্টের সাথে নাগরিকত্ব বর্জনের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। বিদেশে বসে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করতে হলে সংশ্লিষ্ট দুতাবাসে গিয়ে একটি ফরম/আবেদনপত্র জমা দিয়ে সাথে নির্দিষ্ট অংকের ফি জমা দিতে হয়। তারপর বাংলাদেশ এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং প্রয়োজনে সার্টিফিকেট ইস্যু করে সত্যায়িত করবে যে উনার আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলো। 

কেউ নিজে আবেদন করে নাগরিকত্ব বর্জন না করলে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব বাতিলের কোনো পদ্ধতি বাংলাদেশে নেই। গোলাম আযমের নাগরিকত্ব খারিজ করার পর সেটি উচ্চ আদালতে টিকে নি। এ বিষয়ে 'আমি ধারনা করি', 'আমি মনে করি'-এরকম মন্তব্য করার কোনো উপায় নেই।

৩. বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় আর বিদেশের নাগরিকত্ব এক জিনিস নয়। যুক্তরাজ্য সরাসরি নাগরিকত্ব দেয় না। প্রথমে দেয়া হয় আইএলআর (ইন্ডেফিনিট লিভ টু রিমেইন)- এর মানে হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার। এই সময়ে যুক্তরাজ্যের বাইরে টানা ২ বছর থাকা যাবে না। এছাড়া তেমন কোনো কঠিন শর্ত নেই। যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার সরকারি সুবিধা এসময় পাওয়া যায় এবং কাজ করা যায়। তারপর কয়েকবছর থাকার পরে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। এখন কেউ যদি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব না নিয়ে সেখানে আইএলআর নিয়ে সারাজীবন থাকতে চায়, তবে থাকতে পারবে। ওখানে বড় কোনো অপরাধ না করলে আইএলআর বাতিল হওয়ার নজির চোখে পড়ে নি।

৪. যুক্তরাজ্য দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকার করে তাই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব নিলেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকবে। তবে রাজনীতিবিদদের জন্য অসুবিধা হচ্ছে সেক্ষেত্রে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিলে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিধান নেই। (তবে দ্বৈত নাগরিকদের বিষয়ে বিধান কী, সেটি আমি এখনও ঘেটে দেখি নি)

৫. কেউ রিফিউজি/পলিটিক্যাল এসাইলামে থাকলে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বিশ্বের সব দেশে ঘুরতে পারবেন শুধু নিজের দেশে আসতে পারবেন না। তবে ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিলে তিনি সব দেশেই যেতে পারবেন।

1731 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।