যখন ধর্ষণ অপরাধ সংঘটিত হয় তখন ধর্ষকের শাস্তি হিসেবে ধর্ষকের মা বোনকে ধর্ষণ করে দিতে চায় অনেকে। আবার অনেকে ধর্ষণরোধে যৌনপল্লী বাড়ানোর কথা বলে।
আজব না? যদি আজব মনে না হয় তবে নিঃসন্দেহে আমাদের মানুষের জীবন বোঝায় ঘাটতি আছে। উপরোক্ত দুটি সমাধানে পুরুষ বরাবরই অপরাধী আর নারীই তার শিকার। পুরুষের আবেদন, প্রয়োজন সকল সময়ই ঠিক থাকবে আর বলি হবার জন্যে নারী প্রস্তুত থাকবে।
মানবিক মানুষগণ, শিকার শিকারীর এই আবেদনাবলির খেলায় আপনারা কেমন বোধ করছেন?
ধর্ষণরোধে স্বকৃত নোমানের যৌন পল্লীর আবেদন আবারো প্রমান করে যে, পুরুষ মাত্রই নোংরা প্রাণী, নোংরামী সে করবেই আর নারী স্ক্যাভেঞ্জার মাত্র নোংরা ধারণ করাই তার কাজ। সবশেষে নারী যৌনবস্তু মাত্র। সকল নারী নয়। কিছু নারী স্ক্যাভেঞ্জার হবে। সে স্ক্যাভেঞ্জার ক্যাটাগরিতে আমি আপনি বা আমার আপনার পরিবারের কেউ থাকবে না। যারা থাকবে তারা কারো পরিবারের সদস্যও নয়। তাহলে ওরা কারা? ওরা আকাশ থেকে পুরুষের অর্ডার করা মাত্র আল্লাশ্বরভগবান ফেলতে শুরু করবেন।
কিছুদিন আগে একটি লেখা যেটি একটি নারী লিখেছিলো, টিজ রোধে যৌনপল্লী দরকার। সেটির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলাম। কারণ প্লাটফর্মটি ছিলো নারীদের অধিকার আন্দোলনের আর লেখক ছিলো নারী। কিন্তু যখন কোনো পুরুষ এমন প্রয়োজনের কথা বলে তখন অতোটা প্রতিক্রিয়া দেখাতে ইচ্ছে করে না কারণ আমি খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি যে, তুলনামূলকভাবে নারী মগজের থেকে পুরুষমগজ কম মানবিক। পুরুষ সকল সময় তার স্বার্থ ঠিক রাখবেই, তার নারীর জীবন বিপন্ন করে হলেও। বেশ্যাবৃত্তি আদিম, এটি পেশা এসব বলার আবরণে হলেও বেশ্যাবৃত্তির সমর্থন ওরা করবেই। আমরা যারা প্রশ্ন করছি এই বলে যে, নিজের মা বোনকে দিবেন এগুলো করতে? এরা সেটাও পারবে।
ইতিহাস সাক্ষী এবং বর্তমানও, পুরুষ তার নিজের বউ, মেয়েকে প্রয়োজনে বিক্রি করে দেয়, মেরেও ফেলে।
খদ্দের তথা পতিত পুরুষদের অন্ডকোষ এর বিনোদনের একটি নিষিদ্ধ জায়গা আছে, এর নাম বেশ্যালয় বা যৌনপল্লী, এসব পতিত আবার সমাজে ভদ্দরনোক। সমাজেও এদের অন্ডকোষ বিনোদনের ক্ষেত্র আছে। সমাজে স্বাধীনভাবে সকল নাগরিক এবং মৌলিক অধিকার ভোগসহ এরা বিচরণ করতে পারে কারণ বেশ্যালয় থেকে সমাজে ফেরত আসবার সুযোগ এদের রয়েছে। নিজেদের প্রয়োজনে এরা বেশ্যালয় তৈরি করে, বেশ্যাদের সমাজে নিষিদ্ধ করে আবার নিজেদের প্রয়োজনেই সমাজে নিজেদের করেছে সিদ্ধ এবং উন্মুক্ত। বেশ্যা পুরুষদের সতীসাবিত্রী নারীরা বর হিসেবে পেয়ে ধন্য হচ্ছে!
বেশ্যার চে বেশ্যার দালাল বেশি, দালালদের দাপটও বেশি, লাভও বেশি দালালদেরই। বেশ্যালয় হওয়া উচিত কী উচিত নয় এ প্রশ্নে বেশ্যাদের কিছু বলা অথবা নতুন করে বেশ্যালয় হওয়া উচিত কী উচিত নয় এ প্রশ্নে মেয়েদের কিছু বলার ব্যাপারে বেশ্যারা তো কথা বলারই সুযোগ পায় না এবং মেয়েরা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে এলে পুরুষরাই দেখি বেশি এগিয়ে আসে বেশ্যালয় থাকা এবং নতুন বেশ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করতে। পুরুষ যৌনপল্লীর পক্ষে থাকবে এটা অতোটা অবাক করে না যতোটা অবাক করে মেয়েরা যখন যৌনপল্লীর পক্ষে কথা বলে। যৌনপল্লীর সমর্থকরাও পরোক্ষভাবে যৌনপল্লীর দালাল।
যৌনপল্লীর দালালদের যখন প্রশ্ন করা হয় যে, এ সকল যৌনপল্লীতে আপনার পরিবারের নারীদের দিবেন অথবা আপনার মা বোন স্ত্রীকে দিবেন? তখন তারা বলে যে, মুমিনদের মতো মাবোন ডেকে আনেন কেনো? প্রশ্ন করি, নিজের পরিবারের নারীদের অথবা নিজের মা বোন স্ত্রী বাদ রেখে আপনারা তবে কার পরিবারের নারীদের, কাদের মা বোন স্ত্রীদের বেশ্যা বানাতে বলেন? কোনো বাচ্চা মেয়ে কখনো বলেছে কি যে, সে বড়ো হয়ে বেশ্যা হতে চায়? আমি শুনিনি।
বেশ্যার দালাল আরো বলে যে, 'আমার মা বোনদের, স্ত্রীকে এ পেশায় আসতে বলার আমি কে?' অথবা 'বাধা দেয়ার কে?' একদম ঠিক। আপনি তেমনই অন্য পরিবারের মেয়েদেরকেও 'স্বেচ্ছা' বাহানায় এনে যৌনপল্লীর চাহিদা মিটাতে পারেন না। অন্য মা বোন স্ত্রীদের এ কাজে আসতে বলার আপনারা কারা? আর বাঁধা দেয়ার ব্যাপারটি ঘটবে কী ঘটবে না এটা তখনই স্পষ্ট হবে যখন আপনাদের মা বোন স্ত্রী প্রকাশ্যে বেশ্যাবৃত্তি করতে চাইবে।
যৌনতা ক্রয়বিক্রয়যো
তারা আরো বলে, 'এটি একটি পেশা এবং স্বাধীন পেশা।' প্রায় সকল পেশাই সেবামূলক কিন্তু কিছু পেশা আছে সরাসরি সেবামূলক যেমন ডাক্তার, নার্স। বেশ্যার দালালদের ইডিওলজি অনুযায়ী বেশ্যাগিরিও একটি সেবামূলক কাজ। তারা আরো বলে যে, স্বেচ্ছায় যদি কোনো মেয়ে বেশ্যাগিরি করতে চায় তাহলে বাধা দেয়ার অধিকার আমরা রাখবো কেনো? স্বেচ্ছায় একটি মেয়ে ডাক্তার হলে তার পেশাদারী সেবা মেয়েটির বাবা ভাই নিতে পারে, স্বেচ্ছায় বেশ্যাগিরি করা মেয়েটির বাবা ভাই যৌনসেবা নিতে পারবে? যেহেতু আপনি এটাকে পেশা বলছেন তাই প্রশ্ন রইলো। একটি মেয়ে স্বেচ্ছায় বস্ত্র বিক্রেতা হলে তার থেকে তার বাবা ভাই ছেলে বস্ত্র কিনতে পারে। একটি মেয়ে স্বেচ্ছায় বেশ্যা হলে তার থেকে তার বাবা ভাই ছেলে যৌনতা কিনতে পারবে? বলছিলাম কারণ আপনি বলছিলেন যৌনতা একটি পন্য এবং যৌনতা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করা একটি পেশা।
যৌনতাকে যারা বিক্রয়যোগ্য মনে করছেন এবং বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করা একটি স্বাধীন জীবিকার অধিকার বলছেন, পক্ষে নানা নুলো যুক্তি তুলে ধরছেন এদের অনেকেই আবার পরনির্ভর বিবাহিত নারীর যৌনতা বিক্রির বিনিময়ে পেটেভাতে জীবন চালাবার বিপক্ষে বিয়ে প্রথার বিরোধিতা করছেন। এই স্ববিরোধিতা
যে পুরুষতান্ত্রিক
স্বেচ্ছায় একদুজন যদি কেউ করে থাকে যৌনতা বিক্রি মূলত সমাজ তাকেই বেশি ঘৃণা করে কারণ পুরুষ চায় বেশ্যাদের একটা আলাদা জায়গা থাকুক যেখানে ধর্ষণ করতে পারবে নটিদের আবার সমাজে সতীও থাক যাদের বিয়ে বা অবিয়ে যেভাবেই হোক ভোগ করা যাবে। স্বেচ্ছায় শরীর বেচে কোনো মেয়ে আবার কারোর বউ হয়ে যাবে এটি কি হতে দেয়া যায়! এ আতঙ্কে পুরুষকুল অস্থির আর এজন্যেই সে চায় আলাদা জায়গা যার নাম যৌনপল্লী।
বেশ্যালয় থাকা বা নতুন যৌনপল্লী স্থাপিত হওয়া এসবে মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া, স্বাধীনতা, মেয়েদের সুরক্ষা এসবের কোনো ব্যাপারই জড়িত নেই। যা আছে তার সবটাই পুরুষের স্বার্থ, পুরুষের যৌনস্বার্থ, পুরুষের ক্ষমতার স্বার্থ, পুরুষের অর্থনৈতিক স্বার্থ। বেশ্যার উপার্জনের অর্থে দালালরা বেশ বেঁচেবর্তে থাকে সমাজে সহী পুরুষরুপে।
একজন ডাক্তার মেয়ে এমনকি একজন ঝাড়ুদার মেয়েও প্রকাশ্যে তার কাজ করে সে অর্থ উপার্জন করে, বলতে পারে তার কাজের কথা, একটা নির্দিষ্ট সময়ে সে ঘর থেকে বাইরে গিয়ে কাজ শেষে ঘরে ফিরে আসে, সমাজের মানুষের সাথে উঠাবসা করতে পারে, সমাজের সুবিধে কমবেশি ভোগ করতে পারে, পরিবারে সে ফিরতে পারে, পরিবারের লোকজনের হাসিকান্নার ভাগীদারও হতে পারে বিনা বাধায়। একজন বেশ্যার পক্ষে কি এসব সম্ভব? কোনো মেয়ে কি তার পরিবারকে বলতে পারে যে --মা বাবা যাচ্ছি, গেলাম ( যৌনতা বিক্রি করতে)? আবার কাজ শেষে পরিবারে ফিরতে পারে? ফিরে সকলের সঙ্গে মিশে যেতে পারে? পারে না বরং বেশ্যাদের জন্যে তৈরি হয়েছে নির্দিষ্ট একটি জায়গা যেখানে তার পরিবার নেই, স্বজন নেই। নিজের অসহায় অবস্থা দরদ দিয়ে ভাগ করার মতো কেউ নেই, তার একটি নিজস্ব পরিমন্ডল থাকে না যেখানে সে নিজের মতো করে বাঁচবে, মন চাইলে সন্তান জন্ম দিবে, মন চাইলে ঘুরে বেড়াবে। তাহলে এটি পেশা হয় কী করে? ! মানবিক হয় কী করে?
নিজেরা ভালো থাকার জন্যে গুটিকয়কে মন্দ জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করতে বলার আমরা কে? এই মানসিকতা কি বর্বর, সামন্তবাদী নয়?
আমার এক ছেলে বন্ধু বলেছিলো, তোমরা কি ছেলেদের কামলা মনে করো নাকি যে পুলক দেয়ার জন্যে স্ট্যান্ডবাই থাকবে সকল সময়? বলেছিলাম, না তা চাই না কিন্তু ছেলেরাই কামলা দিতে চায় সকল সময়। এবং তারা মনে করে মেয়েরা তাদের যোনি নিয়ে যেকোনো সময় যৌনসেবা দেয়ার জন্যে শোয়া অবস্থা হতে দ্বিমত পোষণ করবে না, অথচ মেয়েরা তা মোটেও প্রত্যাশা করে না।
আসলে যৌনপল্লীতে গিয়ে পুরুষরা টাকা দিয়ে ধর্ষণ করে আসে। ধর্ষণপল্লী বলা উচিত জায়গাটিকে। এই ধর্ষকরা ওখানে টাকার পাওয়ারে ধর্ষণ করে আবার সুযোগ পেলে সমাজেও ধর্ষণ করে ক্ষমতা প্রদর্শন করে। আর দশটা পেশার মতো হলে অন্য পেশার মতো প্রত্যেকে নিজ নিজ পরিবারে না থেকে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় আলাদা করে পরিবারবিচ্ছিন্ন থাকতে হয় কেনো? নাকি বলবেন, বিশেষ বাহিনীর মতোই এরাও আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে? বিশেষ বাহিনীর মর্যাদা আর অর্থ উপার্জন এদের সাথে তুলনীয়? বিশেষ বাহিনীর পেশাদার তার পরিবারকে সাথে রাখতে পারে বেশ্যারা পারে না কেনো?
বেশ, আমাদের সমাজের মেয়েরা তাদের ইচ্ছেমতো যৌনতা বিক্রি শেষে বাড়ি ফিরবে আমরা তাকে স্বাভাবিক অন্য সব পারিবারিক সদস্যের মতোই আচরণ করবো, হতে পারে সে আমার বা আপনার মা, বোন, মেয়ে এবং বউ। ঠিক আছে? আছে তো, নাকি?