জান্নাতুল নাঈম নামের মানুষটি আলোচনায় এসেছে তার সংগ্রামী জীবন নিয়ে নয়, এসেছে আলোচনায় তার সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়ে। বলে রাখি, সুন্দরী প্রতিযোগিতাকে সকল সময়ই একটি অসুস্থ, বর্বর, গর্দভ, অমানবিক প্রতিযোগিতা মনে হয়েছে আমার কাছে। এর আয়োজকরা চতুর এবং অমানবিক, বিচারকরা গর্দভ এবং লোভী আর অংশগ্রহণকারীরাও লোভী এবং বোকা। আয়োজক এবং বিচারকদের প্রতি আছে ক্ষোভ, অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আছে করূণা ও আফসোস। আমার চিন্তায় বা কথায় এ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে না এটি নিশ্চিত জেনেও এটি নিয়ে কথা বলি, মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই বলি।
সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের একটি নিয়ম হলো অবিবাহিত হওয়া। এভ্রিল বাল্যবিয়ের শিকার ছিলো। এভ্রিল সে বিয়ে থেকে বেরিয়ে এসেছে সে অর্থে সে এখন আর বিবাহিত নয়। আয়োজকরা সম্ভবত অক্ষত সতীপর্দা চায়। যেহেতু কোনো এক সময় এভ্রিল এর বিয়ে হয়েছিলো, এভ্রিল সেই পুরুষের সাথে সঙ্গম করেছে কী করেনি, এর আগেই সে বিয়ে থেকে বেরিয়ে এসেছে কীনা তা এভ্রিল এবং সেই সংশ্লিষ্ট পুরুষ ছাড়া অন্যকেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না তবু এভ্রিলকে ক্ষত সতীপর্দাই ভাবা হয়েছে, কারণ সঙ্গম করো বা না করো বিয়ের সিল লেগেছে। আবার এভ্রিলের সতীপর্দা ছিলো কীনা তা এভ্রিলই ভালো জানে কেন না সকল মেয়ের সতীপর্দা থাকে না। আবার অবিবাহিত হলেই যে সঙ্গমহীন হবে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এরও কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। বহু মানুষ দেখেছি সে তার যৌনজীবন উপভোগ করছে কিন্তু অবিবাহিত টাইটেল সাথে আছে, বিয়ের বাজার বা সমাজ বাজার যাই বলা হোক না কেনো তার বাজার মূল্য আলাদা থাকেই। গায়ে বিয়ের সিল না পড়লেই হলো। সঙ্গম বা যৌনতাভিত্তিক এই যে বাজার এটাই অশ্লীল। পুরুষের চে নারী এই অশ্লীলতার শিকার বেশি।
সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজনে কুমারী থাকা বা অবিবাহিত হবার শর্তের পেছনে কিছু পরিকল্পনা থাকতে পারে, বলা যায় সেগুলিও কুপরিকল্পনা। পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারী যতোই স্বাধীনচেতা হোক না কেনো তাকে কিছু না কিছু বাধা অবশ্যই মেনে চলতে হয়, সেক্ষেত্রে অবিবাহিত নারী যতোটা ডেম কেয়ার হতে পারে ততোটা বিবাহিত নারী পারে না। যেহেতু অবিবাহিত নারী প্রচলিত অর্থে অক্ষত সতীপর্দা আর যেহেতু অক্ষত সতীপর্দার বাজার দর বেশি সেহেতু আয়োজকদের অবিবাহিত নারীই লাগবে। আয়োজকরা তাদের খরচ উঠানোসহ প্রচুর মুনাফা ওই অক্ষত সতীপর্দা দিয়েই মূলত উঠিয়ে আনবার প্রচেষ্টায় থাকে। বাইরের যে শারীরিক সৌন্দর্য্য বিবেচনা করা হয় ওটি চোখের জন্যে আর মগজের আরামের জন্যে অবিবাহিত তথা অক্ষত সতীপর্দা জরূরী। সম্পদের প্রায় পুরো মালিকানা পুরুষের, ভোক্তাও পুরুষ তাই ভোক্তার চাহিদার যোগান দিতে না পারা আয়োজকদের ব্যর্থতা এবং পুরো লস।
এভ্রিল এর সংগ্রামী জীবন নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাবার যোগ্য এবং উৎসাহের যোগানদার। কিন্তু তথ্য গোপন সহজ কথায় মিথ্যাচার করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ একটি চতুর কর্ম। এভ্রিলকে বোকা বলবো? নাকি সে মেয়ে বলেই তার এ চতুর কর্মটিকে এড়িয়ে গিয়ে সংগ্রামী জীবনটা তুলে এনে তাকে নিরীহ, নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করবো? নাকি কুৎসিত ভাষায় তার পরিবারসহ সমালোচনা করতে বসবো? দুটোই কিন্তু করা হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। দুটোকেই আমার বাতুলতা মনে হয়েছে।
এভ্রিল ঠিক যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় এসেছে এটি নিয়ে এবং এর সাথে সংশিলষ্ট নিয়ম, আচারগুলো নিয়ে কথা বললেই সেটি যথাযথ হবে বলে মনে করি।