নয়ন চ্যাটার্জি নামের ইসলামী পেইজ যখন অভিনেতা মোশাররফ করিমকে নিয়ে ইসলাম অবমাননার উশকানি দিয়েছিলো তখনই বুঝেছিলাম জল অনেক দূর গড়াবে। এক বছর আগে এই পেইজটি মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে নবী সুলাইমানের অবমানরার অভিযোগ তুলে উস্কানি দিলে ঠিক এক বছর পর সেই জেরে জাফর ইকবালের উপর হামলা ঘটে। ব-দ্বীপ প্রকাশনীর একটি পাঁচ বছরের পুরোনো বই নিয়ে উস্কানি দিয়ে মেলাতে মুসলমানদের হামলা চালাতে আহ্বান জানায়। পরবর্তী ঘটনা তারপর সবাই জানেন।
এই পেইজ অভিযোগ তুলে আর সরকারের নানা সংস্থা সেই অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামায়। মোশাররফ করিমকে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে দাবী করে নয়ন চ্যাটার্জি উস্কানি ছড়াচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে মোশাররফ ষড়যন্ত্র করছে। মেয়েদের ধর্ষণের কারণ হিসেবে ইসলামপন্থিরা ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে নারীদের পোশাককে দায়ী করে থাকে। ছোট ছোট বাচ্চা যাদের বয়স চার-পাঁচ বছর তাদের ধর্ষণ কি পোশাকের কারণে ঘটে? মাদ্রাসায় পরা মেয়েদের কঠোর পর্দানশীনতার পরও তারা হুজুরদের লালসার শিকার হয়। এমনকি ছাগল কুকুরকে বলৎকারের ঘটনা ইদানিং ঘটতে দেখে মানুষ টিপ্পনি কেটেছে- এখন কি কুকুর-বেড়ালকেও পর্দা করতে হবে? চ্যানেল-২৪ অনুষ্ঠানে মোশাররফ করিম ঠিক এই প্রশ্নটা করেছেন এভাবে, ‘পোষাক যদি নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী হতো, তবে ৫ বছরের শিশু বা বোরকা পরা নারী নির্যাতিত হচ্ছে কেনো’?
ভাবতে পারেন এই বক্তব্য দেয়ার কারণে মোশাররফ করিমকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে! তার এই বক্তব্য নাকি মুসলমানদের মনে আঘাত করেছে! বাইতুল মোকাররমে মুসল্লীরা এরপর এই অভিনেতার কল্লা চাইলে অবাক হওয়ার কি আছে? ভারতের স্টার প্লাসে আমির খান, শাহরুখ খান, মোশাররফ করিমের অনুষ্ঠানের মতো একই ধরণের সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে অকপটে অনেক মন্তব্য করতেন। স্টার প্লাসের অনুকরণে বাংলাদেশের চ্যানেল২৪ তাদের অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমকে নেয়।
এই দেশটার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মানসিক অবস্থাটা কোন পর্যায়ে গেছে যে মোশাররফ করিম এরকম যৌক্তিক কথা বলেও মাফ চাইতে হচ্ছে। এখন তো এদেশের আর কেউ নিরাপদ নয়। নাস্তিক ব্লগাররা কত খারাপ তারা ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করে- এখন মোশাররফ করিমকে মডারেটরা কি করে ডিফেন্স করবে? ‘ভূতের বাচ্চা সোলাইমান’ বাচ্চাদের একটা বইয়ের নাম এরকম হলেও তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন। যারা ঢেড়ষ চাষ করে এখনো নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন তারা নিজেরা যেদিন ফেঁসে যাবেন সেদিন কি এই ইতরদের বিপক্ষে ফুঁসে উঠবেন?
সাধারণ মুসলমানরা নাকি উগ্রবাদী ইসলামকে পছন্দ করে না। অথচ জুম্মা ফেরত জঙ্গি মুসলমানদের হাতে সিলেট-নাসিরনগরের মতো সাম্প্রতিকতম ভয়াবহ তান্ডবের কথা আমরা জানি। সবগুলোই ইসলাম অবমাননার অভিযোগে ঘটেছিলো। ‘তৌহদী জনতা’ ‘মুসল্লী’ শব্দগুলো এখন ভায়োলেন্ট হয়ে পড়েছে। এইসব মুসল্লি সাধারণ মানুষের ভয়েই মোশাররফ করিম ভীত হয়ে পড়েছেন। তার হয়তো অতীতের অনেকের পরিণতির কথা মনে পড়ে গিয়েছে। তিনি জানেন ৯০ ভাগ অসুস্থদের দেশে তার এইসব কথাকে তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক লাগবেই…।
এই লেখাটা যখন লিখছি তখন শুনলাম বরিশালে প্রফুল্ল হালদার নামের এক পল্লী চিকিৎসককে সাধারণ ইসলাম প্রেমি মুসলমানরা ইসলাম অবমাননার অভিযোগে মেরে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে!