সুষুপ্ত পাঠক

বাংলা অন্তর্জালে পরিচিত "সুষুপ্ত পাঠক" একজন সমাজ সচেতন অনলাইন একটিভিস্ট ও ব্লগার।

ক্ষমতার জন্য ইসলামকে ব্যবহার বাংলাদেশের একটি বাস্তবতা

যেসব আলেম ওলামারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো সেটা করেছিলো ইসলামের জিহাদের আওতায়। ইংরেজদের হাত থেকে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করে ‘দারুল ইসলাম’ বানানোর ধর্মীয় উদ্দেশ্যই এখানে কাজ করেছিলো। মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ ‘পাকিস্তান’ গঠনের দাবি উঠলে অবিভক্ত ভারতবর্ষের ওলামারা এটারও বিরোধীতা করেছিলো ধর্মীয় খিলাফত চিন্তা থেকে। ভারত ভাগ হয়ে যদি মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ হয় তাহলে অপর অংশকে কোনদিনই মুসলমানদের দেশ (দারুল ইসলাম) করা সম্ভব হবে না। এ জন্যই তারা পাকিস্তানের বিরোধীতা করেছিলো। এটাকে আজকে ‘অসাম্প্রদায়িক’ করে দেখানোর মতো জঘণ্য বিকৃতি আর হতে পারে না! মোল্লারা চেয়েছিলো গোটা ভারতকে ইসলামিক খিলাফতের আওতায় আনার। তিতুমীর, শরীয়তুল্লাহদের তাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী বলতে আমি নারাজ- তারা ছিলেন ইসলামিক জিহাদী। তারা বামপন্থি ও ইসলামিকদের কাছে ফ্রিডম ফাইটার হতে পারে -উনারা সেই দাবি করেনও।

একই দাবি গতকালের সংবর্ধনা শেষে বিশেষ একটি দালাল শ্রেণিরাও করছে। তারা বলছে, কওমি হুজুররা ‘অবিভক্ত অসাম্প্রদায়িক ভারত’ চেয়ে ইংরেজেদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন। এই তথ্য শতভাগ শঠতার একটি নমুনা। হেফাজতের সঙ্গে আঁতাতকে হালাল করতে গিয়ে যে মুসলিম লীগের তরুণ শেখ মুজিবকে, যিনি সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য জান দিয়ে লড়েছিলেন তাকে হেয় করা হচ্ছে ‘অসাম্প্রদায়িক ভারত’ চাওয়া হুজুর চরিত্র বানাতে গিয়ে সে খেয়াল এদের নেই! তরুণ বয়েসে শেখ মুজিব সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান চেয়েছিলেন আর হুজুররা চেয়েছিলো অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষ! কেমন হলো জিনিসটা? ঘোমটা দিতে গিয়ে যে পাছার কাপড় উঠে যাচ্ছে!

কিছু ছবি ফেইসবুকে দেখা যাচ্ছে, কওমি ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের সামনে সেলফি তুলছে, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ঐতিহাসিক ছবি দেখছে…। এগুলো দেখিয়ে বলা হচ্ছে, এই মাদ্রাসার ছাত্রদের দেশ জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিলো। উনি (নাম বললে মামলা হবে তাই বললাম না) ঢাকায় এনে ওদের এই সুযোগ করে দিয়েছেন। রাতারাতি কিছু হয় না। ৭৫-এর পর অনেক কিছু ঘটে গেছে। এখন সেগুলোকে লাইনে আনতে হলে প্রথমে তাদের সঙ্গে মিশতে হবে। মিশে গিয়েই এদের গতিবিধি ঠিক করে দিতে হবে। উনার চেয়ে কি দেশের প্রতি আপনার টান বেশি নাকি? উনি এই হুজুরদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিক্ষা দিয়ে দেখবেন ঠিক লাইনে এনে ফেলেছে…।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক মোল্লাদের ডেকে এনে তার পাশে বসাতেন। হেন সুযোগ সুবিধা নেই যা দিতেন না। রাজনৈতিকভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে পাকিস্তানের রাজনীতিতে হুজুরদের একটা ফ্যাক্ট করে দিয়ে যান জিয়াউল হক। জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি চুলকে দিয়ে নিজের অবৈধ শাসনকে জিয়াউল হক পোক্ত করতে গিয়ে তার দেশের সর্বনাশ করে গিয়েছিলেন। আজকে পাকিস্তানের আধা তালেবানী শাসনের জন্য দায়ী জিয়াউল হক। তার পথ ধরে বেনজির ভুট্টু, নেওয়াজ শরীফ, ইমরান খানও সমান তালে জনগণের ইসলামিক বিখাউজকে চুলকে দিচ্ছে ক্ষমতাকে পোক্ত করতে।

বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন কিছু নয়। ক্ষমতার জন্য ইসলামকে ব্যবহার এদেশের একটি বাস্তবতা। তবে এর বাইরে অন্য একটি কারণ বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে থাকে। বাঙালি মুসলমানসহ উপমহাদেশীয় মুসলমানদের জিন…।

জিন কথা বলে! আরব রক্তে হঠাৎ হঠাৎ তাদের পূর্বপুরুষের কন্ঠই কথা বলে উঠবে। সূর্যসেন, খুদিরাম বসুর রক্ত আরব বেদুইনদের কথা বলে উঠবে না। যতই চেতনার দাবি করুক বখতিয়ারের ঘোড়ার খুড়ের শব্দ বুড়া বয়েসে ঠিকই রক্তে শোনা যাবে। সবই জিন বহন করে চলেছে। আর যাই হোক, সায়েন্সকে তো আর অস্বীকার করা যাবে না…।

1514 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।