সুষুপ্ত পাঠক

বাংলা অন্তর্জালে পরিচিত "সুষুপ্ত পাঠক" একজন সমাজ সচেতন অনলাইন একটিভিস্ট ও ব্লগার।

হিজাব আমার অধিকার, বুঝে বলছেন তো!

মুসলিম পুরুষের ‘তিন তালাক’ দেয়ার ধর্মীয় ক্ষমতা রক্ষার জন্য যখন মুসলিম নারীদের দাবী জানাতে দেখা যায় সেটা খুব বেশি একটা অবাক হবার বিষয় নয়। উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলিম নারীদের অতিমাত্রায় ধার্মীক হতে দেখা যায় অথচ এই দুটি ধর্মই নারীকে মাংসপিন্ড ছাড়া আলাদা কোনো মানুষের সত্তা বলে নারীদের স্বীকারই করে নি। ধার্মীক নারী পুরুষতন্ত্র এবং ধর্মের চাপে জন্মকাল থেকে মানসিক বৈকল্যের শিকার। তার মাথার চুল দেখাও পাপ তাই এটাকে ঢেকে রাখতে হবে হিজাব পরে- এই ঘৃণ্য লজ্জাকর অবস্থানকে জারি রাখতে মেয়েরাই আওয়াজ তোলে, -হিজাব আমার অধিকার! ভারতের পার্লামেন্টে তিন তালাক বাতিল হবার পর মুসলিম নারী সংগঠনগুলো যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে তেমনি আরেক দল মুসলিম নারী যারা পুরুষের তিন তালাক ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে! পশ্চিম বাংলার ‘গার্লস ইসলামিক অর্গানাইজেশনের’ সম্পাদিকা মাইমুনা খাতুন, জেলা সভাপতি রমিশা খাতুন, নাজিমা আলেয়া বেগমদের মতো নারীরা মুসলিম পুরুষকে তিন তালাকের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হিজাব-বোরখায় নিজেদের ঢেকে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

একবার এ তালিমের দাওয়াত দেয়া পাড়ার খালাম্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, খালুজান যদি আরেকটা বিয়ে করে তিনি কি সেটা মেনে নিবেন? …খালাম্মা এরপর থেকে আর আমার সঙ্গে কথা বলেন না। আরেকবার কলেজের ইসলামী মাইন্ডের সহপাঠিনীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিয়ের পর তার স্বামী যদি তাকে স্বামীর হেরেমের দেখভাল করার সর্দারনী বানায় তাহলে কি সে সন্মানবোধ করবে? সে বলেছিলো, এমন স্বামীর মুখের উপর সে লাথি দিবে। পাল্টা প্রশ্ন তাকে, পরকালের বেহেস্তে তো তাকে আল্লা স্বামীর হুরদের সর্দারনী হবার সন্মান দিবেন…? প্রথমে বিশ্বাস করতে না চাওয়া মেয়েটি বিব্রত হয়ে ধর্ম নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করতে নিষেধ করে প্রসঙ্গ এড়িয়েছিলো।… এগুলো মানসিক বৈকল্যের কিছু উদাহরণ। নিজেকে অসহায় অচ্ছুৎ ভোগ্যপণ্য বানানোর কলে তেল জোগান দেবার কারণ একটাই- মানুষের আদিম মৃত্যু পরবর্তী কাল্পনিক পরকালে ঈশ্বর নামক এক শাস্তিদাতার আগুনে পোড়ানোর হুমকি…।

মুসলিম পুরুষকে আল্লাহ খেয়াল খুশি বসত নারীদের তালাক দেয়া অধিকার দিয়েছেন। এমনকি স্ত্রী দীর্ঘকাল স্বামীর সেবা করে বৃদ্ধ অক্ষম হয়ে যাবার ‘অপরাধে’ আল্লাহপাক একজন পুরুষকে তিন তালাক দেয়া অধিকার দিয়েছেন। নবী মুহাম্মদের তার প্রথম স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুর পর বিধবা সাওদা বিনতে যামআকে বিয়ে করেছিলেন সংসার এবং সন্তানদের দেখাশোনার জন্য। কিন্তু সাওদা শারীরিকভাবে অক্ষম হবার পর নবী তাকে তালাক দিতে চাইলে সাওদা তার জন্য ভাগের রাত্রী নবীর অন্য তরুণী স্ত্রীদের দিয়ে দেবার আর্জি জানিয়ে নবীকে তালাক না দিতে অনুরোধ করেন। কুরআনে এই সমস্ত অক্ষম নারীদের স্বামীদের উপেক্ষার আশংকা করলে উপদেশ দেয়া হয়েছে সুরা নিসাতে। ‘যদি কোনো নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পরের কোনো মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোনো গুনাহ নাই’ সুরা নিসা, আয়াত ১২৮ (৪:১২৮)। সুরা নিসার এই আয়াত সম্পর্কে হযরত আয়েশার তাফসির করেছিলেন এভাবে, এতে সেই স্ত্রীর কথা বলা হচ্ছে যার স্বামী তাকে রাখতে চায় না, তাকে তালাক দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। সে বলে – অন্য মেয়েকে বিয়ে করো, কিন্তু আমাকে তালাক দিয়ো না, আমার ওপরে খরচও করতে হবে না, আমার সাথে শুতেও হবে না (সহিহ্‌ বোখারি, ভল্যুম ৭, হাদিস ১৩৪)।

…এমন সুমহান সন্মান আর নিরাপত্তার কৃতজ্ঞতায় সিক্ত মুসলিম নারীরা তাই পুরুষের তিন তালাক, বহু বিবাহ, বোরখা-হিজাবের অধিকারের জন্য গলা তুলছে!...

3445 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।