কার্ল মার্কস বলেছেন, মানুষ নিজেই পুঁজিবাদকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে যখন সে দেখবে পুঁজিবাদ তাদের কোনো উপকার করে নি বরং তাদেরকে নি:স্ব করে দিয়েছে। যেমন এক জোড়া জুতো হলেই যেখানে চাহিদা মিটে যায় সেখানে পুঁজিবাদ মানুষকে ঐ নির্দিষ্ট কাঙ্খিত ব্র্যান্ডের জুতা কেনার জন্য এমন করে তুলেছে- যদি সে কিনতে না পারে তো নিজের ভেতর এক হীনমন্যতা চলে আসে। খালি জুতো হলেই চলবে না, শাহরুখ খান যার ব্র্যান্ড এম্বাসেডর সে জুতা্ই তার চাই…। এই কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি এবং তার পিছনে ছুটে মানুষ একদিন পুঁজিবাদকে গুডবাই জানাবে। মার্কস বলেছেন পুঁজিবাদ মানুষের চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন করবে এবং শ্রমিকদের আরো কম পয়সা দিবে এতে সে আরো গরীব হয়ে পড়বে। একইভাবে বেতন সংকোচন করে মধ্যবিত্তকে নিন্মবিত্ত করে তুলবে। তার ফলে পুঁজিবাদের উৎপাদিত পণ্য কেনার মানুষ কমে যাবে। পুঁজিবাদ একাই সব খেয়ে ফেলে ছোট ব্যবসায়ীদের মেরে ফেলবে। তার বাস্তব প্রমাণ আমরা দেখি বাদাম, ডালভাজা, ঝালমুড়ি পর্যন্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্যাকেট করে বাজারজাত করে বাজার ক্যাপচার করতে চাইছে। পুঁজিবাদ এভাবেই মানুষকে নিঃস্ব করে তুলবে পৃথিবীতে হাজারখানেক শীর্ষ ধনী পরিবার ব্যতিরেকে। এভাবেই পুজিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষেপে যাবে আর পুজিবাদের অবসান ঘটবে…। তার মানে এই না মানুষ তখন কমিউনিজমকে ডেকে আনবে নিজেদের জন্য। মানুষ মার্কস থেকে সহায়ত নিবে, বৈষম্যহীন সমাজ, কল্যাণকর মানব সমাজ গঠন করবে কিন্তু তার জন্য কমিউনিস্টদের ডেকে আনবে না শাসন করার জন্য। পুঁজিবাদকে বিদায় করে সে নিজের জন্য এমন কিছুকে মেনে নিবে না যে তাকে সেন্সর করবে। তার চিন্তাকে লাল দাগ দিয়ে সীমানা এঁকে দিবে- এটি মানুষ কোনোকালেই মেনে নেয় নি। মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়াই এক অবৈজ্ঞানিক চিন্তা। মানুষকে পেটভরে খাবার দেন, বাসস্থান দেন, নিশ্চিত ভবিষ্যত দেন, বিনিময়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে যান- মানুষ বিদ্রোহ করে বসবে!
মানুষের শিল্পকলা, সাহিত্য, ভাবুকতা, মননশীলতাকে মেনোফেস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীলতা। মানিক বন্দোপাধ্যায় মার্কসবাদী ছিলেন। কিন্তু তার ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ নিয়ে কমিউনিস্টদের আপত্তি ছিলো। মানিক নাকি তার লেখায় কমিউনিস্টদের দর্শন বিরোধীতা করেছেন। মানুষের সৃষ্টিশীলতার বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট শাসকদের বৈরীতার বহু উদাহরণ পৃথিবীতে আছে। যেমন আলেক্সান্ডার সোলঝেনিৎসিনকে সোভিয়েত রাশিয়া দেশ থেকে বের করে দেয় এবং তার নাগরিত্ব কেড়ে নেয় তার সোভিয়েত কমিউনিস্ট শাসনের সমালোচনা করে লেখালেখির কারণে। ১৯৭০ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করলে বামপন্থিরা এটাকে সোলঝেনিৎসিনর সাম্রাজ্যবাদীদে
১৪০০ বছর আগের রাষ্ট্র ধারণা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তা দিয়ে আজকের পৃথিবীকে যারা শাসন করতে চায় তারা ইসলামপন্থী। তারা ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে চায়। বাস্তবে সেটা সম্ভব হোক বা না হোক- এটা চাওয়াটাই অবৈজ্ঞানিক। বামাতী তারাই যারা ইসলামপন্থিদের মতো করেই তাদের স্বপ্নের রাষ্ট্র চাইছে। বিশ্বাস করে জগতের সমস্ত সমস্যার সমাধান আছে কমিউনিজমে। মানুষের একমাত্র মুক্তি এই তরিকায়। তারা মনে করে তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসে যারা বিশ্বাসী নয় তারা সবাই প্রতিক্রিয়াশীল।
আমেরিকা প্রবাসী একজন বামপন্থীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমেরিকায় কমিউনিস্ট শাসন চান কিনা। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, না। কারণ কমিউনিস্টরা যেটা চায় আমেরিকায় সেটা আছে। তার সুদীর্ঘকাল ব্যাপী আমেরিকা থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, কমিউনিজম দরকার বাংলাদেশের মতো চরম শ্রেণি শোষণের মতো দেশে…। অর্থ্যাৎ ভদ্রলোক শিকার করে নিয়েছে কমিউনিজমই একমাত্র সমাধান নয়। ইউরোপ আমেরিকার কমিউনিস্ট হতে লাগে নি নাগরিকদের সুনজরে দেখতে। কিন্তু একজন ইসলামপন্থীকে যেমন আপনি ইউরোপকে দেখিয়ে যতই বলেন এরা ইসলামী শাসন ছাড়াই তো বহুত কল্যাণে আছে তাহলে ইসলামী শাসনই একমাত্র সমাধান এটা কেনো বলছেন’- এসব বলে কোনো সদুত্তর পাবেন না। এগুয়ের মতই ‘মানবতার সমাধান ইসলাম’ বলে ঘাড় গুজে থাকতে। আওয়ামী ছাগুরা যেমন মনে করে তারা যে ইতিহাস বলবে সেটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এই চেতনাই উন্নয়ন, জাতির পিতার দেখানো পথেই মুক্তির সমাধান... ইত্যাদি। বামাতীরাও কমিউনিজমকে ধর্মের মতো করে, কাল্টের মতো করে নিয়েছে। এটিই একমাত্র সমাধান- এই অবৈজ্ঞানিক অবস্থানই একজনকে বামাতী করে তুলে। কারণ পৃথিবীতে কোনো কিছুই পরিপূর্ণ নয়...।