সৌম্যজিৎ দত্ত

লেখক, ব্লগার, আইএসআই তে লেকচারার এবং গবেষণারত ছাত্র।

তসলিমা নাসরিনকে উৎসর্গিত সৌম্যজিৎ দত্ত’র কবিতা

অগ্নি উৎস তুমি তসলিমা নাসরিন।

তোমার আপসহীন আগুন কত মানুষ দেখেছে!

পদে পদে তোমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার, মৌলবী, ধর্মান্ধ ভক্ত।
যখন লড়েছো, ভয় তোমারও হয়েছে। 
তুমি ভেবে, "এই বুঝি কেউ এসে আমার মুন্ডপাত করে।" 
ভয় সবাই পায়। সেই ভয়তেও তুমি আপসহীন।
যত দেখি ততই মুগ্ধ হয়ে যাই, 
শরীরের প্রতিটা লোম খাড়া হয়ে যায় যখন 
তোমাকে বাংলা নির্বাসনের সময়গুলোতে অনুভব করি। 
রক্তের মধ্যে গরম স্রোত বয়ে যায়।

অগ্নি কন্যাকে নতুন কি আর ভাষা দেবো!
যে নিজে জ্বলন্ত আগুন তাকে 
ভাষার আগুনে উজ্বল করার ভাষা কম হয়ে যাবে।

যখন গোটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল, মৌলবী, রাষ্ট্রীয় মানুষ 
মূর্খামি করে তোমার রক্তের স্বাদ পেতে চেয়েছে,
তুমি তখন সদ্য যৌবনের একজন মানবিক লেখক, ধর্ম বিদ্রুপাত্মক।
সাহস করে সত্যিটা তুলে ধরেছিলে, 
কিন্তু এত মনের জোর তোমার ছিলো না।
ছিলোনা, কারণ পরিবারের টান, প্রাণের ভয়। 
সংসার, ভবিষ্যত তুমিও চেয়েছিলে।

সমাজের ভয়ঙ্কর রূপটা সবে প্রকট হচ্ছে, 
রাতের অন্ধকারে তোমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে, 
কেউ আশ্রয় দিতেও ভয় পাচ্ছে।
অন্ধকূপের মধ্যেও জীবন কাটিয়েছো, 
বাইরের জগতের আলো তোমার চোখে পড়ে নি।
সত্যি বলার শাস্তি। তুমি ভাবোনি কখনো, সত্যি বলার শাস্তি এত ভয়ঙ্কর!
দেশের দু-একজন বুদ্ধিজীবি তোমার সাথ হয়তো দিতে চেয়েছে,
পরে তারাও পিছিয়ে আসে পরিবারের চিন্তা করে। 
তাদেরই বা দোষ দিই কি করে?
দেশের সংবিধানের অসাংবিধানিক নীতি তোমাকে দেশ ছাড়া করে দিলো। 
মা, তুমি ঘুমের মধ্যেও রক্ত চোখ দেখতে, তাই না!
হয়তো ঘুমোতে, ক্লান্ত হয়ে! 
তোমার বুকের ভিতর প্রতিটা মুহুর্তে কেঁপে উঠেছে,
"এই বুঝি ঘরে ঢুকে এলো ওরা! 
এই বুঝি ছিন্নভিন্ন করে দিলো চাপাতির আঘাতে!
এই বুঝি সব থামিয়ে দিলো, শেষ করে দিলো আমাকে! 
এই বুঝি সত্যের পরাজয় হয়ে গেলো।"

সেই দেশ কখনো দেশ হয়ে উঠতেই পারে নি মা,
সেই দেশ কখনো সত্যের মুখোমুখি হতে চায় নি,
সেই দেশ ধর্মান্ধের কারাগার।
সেই দেশে মুক্ত চিন্তা নয়, সম্মোহনের খেলা চলে, 
সেই দেশ খুনিদের দেশ। 
সেই দেশ শুধু একটা রাষ্ট্র মাত্র।

নিরাপত্তার খোঁজে চলে এলে ভারতে,
আশ্রয় পশ্চিমবাংলা।
উষ্কখুষ্ক মুখে তুমি ভেবেছিলে এখান থেকে লড়াই শুরু করবে,
দেশে ফেরার লড়াই।
কিন্তু এখানেও তোমার ভাষা থামিয়ে দিতে উঠে আসলো বজ্জাত সরকার।
সরকার নয়, 
ওরা মাওবাদী।
তোমার লেখা "দ্বিখন্ডিত"কে খন্ড খন্ড করে জলে ভাসাতে চেয়েছিলো।
পুলিশ কমিশনারকেও রাজনীতির দালাল বানিয়ে 
তোমাকে হুমকি দিয়েছে।
রিজওয়ান ঘটনার সুযোগ নিয়ে মুসলিম জাতিকে 
তোমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে।
আরও কত কি করেছে, 
মনে করতে পারো সেসব মেয়েমা!
বাংলা এখনও মানুষ হয় নি, 
বাংলা আজও রাজনীতির একটা মঞ্চ মাত্র।

পুরুষতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, সরকারতন্ত্র 
বারেবারে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। 
অগ্নিউৎস বলেই 
তুমি আজও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই লড়ে যাচ্ছো।
আজ আর তোমার লড়াইকে ওরা থামাতে পারবে না, 
আজ তুমি সম্পূর্ণ ভিন্ন "তসলিমা নাসরিন"।
এই বাংলাতেও তোমার প্রত্যাবর্তন হবে, 
বঙ্গকন্যা ফিরবেই, 
আমি বাজপাখির দৃষ্টিতে সেইদিন দেখতে পাচ্ছি।
তোমার আবিষ্কার আমি, 
তোমার আদর্শে গড়া অগ্নিদূত হয়ে ফেটে পড়বো,
ফিরিয়ে আনবো তোমাকে এই বাংলায়, 
সম্মানের সাথে, 
নৈতিকতা দিয়ে।

গেরন 

ছোট্ট আদর মাখা মুখটা চাইত সব নিয়ম ভাঙতে,
ছিল স্বপ্ন চোখে, ঘর পেরিয়ে বাইরে যেতে,
নিয়ম শুধু নিয়মই ছিলো বাবার ধমকানিতে।

.....................................................................

বাড়ির দেওয়াল প্রাচীর ভয়ে কাঁপে,
শৃঙ্খলা পরায়নের শেকল বাঁধা পায়ে,
সমাজ ব্যবস্থার রীতিনীতি, আত্মসম্মান, বংশগৌরবের ইমারত বহন করে,
ধর্মের রক্ষাকবজ ঘিরে থাকে প্রতিটি ইটে। 
ছোট্ট মেয়েটি লজ্জা পায়।

....................................................................

বয়স তখন চৌদ্দ কি পনেরো,
মেট্রিক পরীক্ষার হাতছানি, সেকি ভীষণ রকম পড়াশোনা!
বাবার তৈরি নিয়ম, "শুধু খাও, পড়ো। ভোররাতে উঠে পড়ো, সারাদিন পড়ো,
গোটা বই বারবার করে পড়ো, প্রতিটা পাতা, প্রতিটা লাইন ঠোটস্থ করে ফেলো।
বাড়িতে কেউ টু-শব্দটি করবে না, করলেও ফিসফিস করে কথা বলবে।
সবার চোখের নজরবন্দি করে রাখো, ঘন্টায় ঘন্টায় খাবার খাওয়া চায় পড়তে পড়তে।"
এমনসব কড়া নিয়মে মেয়েটি হাসফাঁস করে ওঠে, তবু চুপ থেকে সব কথা শোনে।

পরীক্ষার সময় উপস্থিত হলে বাবা এনে দেয় কোনো মন্ত্রপুত রক্ষা কবজ,
পরীক্ষার সময় পরে থাকলে নাকি, "সমস্ত পড়া মনে থাকবে, পরীক্ষা ভালো হবে।" 
মেয়েটি প্রতিবাদ জানিয়ে ওঠে, "পড়া মনে থাকলে এমনিই থাকবে, যা পড়েছি,
তাই লিখে দিয়ে আসবো।
বরং সেটি থাকলেই সব ভুল হয়ে যাবে।" 
বাবার জেদের সামনে হেরে গিয়ে তাকে কবজ পরতেই হয়। 
মাথার চুলের সাথে তাকে কবজ বেঁধে নিতে হয়। 
সে যে কি ভীষণ লজ্জার!
"চুলের সাথে কবজ পরে বাইরে বেরোবো, পরীক্ষা দেবো!
বন্ধুরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে, সবাই দেখবে, হাসবে।" 
পরীক্ষা দিতে দিতেও মেয়েটির মন বারবার চলে যায় চুলে বাঁধা কবজটার দিকে,
বারবার কপালের সামনে এসে পড়ছে, খুব সাবধানে সে আড়াল করছে সেটা। 
সে ঠিক করে, "যত যাই হোক, কবজ আমি পরবো না।" 
বাড়িতে এসে বায়না ধরে, "কবজ বাঁধবো না, তাতে পরীক্ষা খারাপ হয়, হোক।" 
বাবার জোর জবরদস্তিতে তাকে আবারও সেটা বাঁধতে হয়।

.......................................................................

মেয়েটির মনে অনেক প্রশ্ন। 
"আমার জন্ম কবে হয়েছে? কখন হয়েছে?
দাদা'দের জন্ম তারিখ, সময় সবকিছু বাবা লিখে রেখেছে,
আমারটা কোথাও লেখা নেই কেনো?"
মেয়েটি জানতে চায় তার জন্মের তারিখ, সময়।
মা'কে জিজ্ঞাসা করে, পরিচিত মানুষদের জিজ্ঞাসা করে, নানিকে জিজ্ঞাসা করে,
বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন উত্তরে সে অস্থির হয়ে ওঠে। 
কেউ বলে "অমুকের জন্মের মাসে তোর জন্ম,
তো কেউ বলে মাথা উঁচিয়েছে তালগাছের মতো, কুড়ি-বাইশ হবি।"
মেয়েটি ভাবতে থাকে, "ছেলেদের জন্ম তারিখ লেখা হয়, মেয়েদের কেনো হয় না?"

.........................................................................

মেয়েটি অনেক অনেক নিয়ম ভাঙতে চায়, নিয়ম ভাঙতে তার ভালোলাগে। 
জিন্সপ্যান্ট পরতে চায়, গিটার বাজাতে চায়, প্রেম করতে চায়। 
নারীর প্রতি গড়া সমাজের সব নিয়ম ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চায়। 
পরিবারের বাধা উপেক্ষা করেই সে প্রথম নিয়ম ভেঙে ফেলে,
বাড়িতে প্রথম গিটার এনে। 
ধ্যান, জ্ঞান সব গিটারটাই হয়ে ওঠে। 
গিটার কিনে বাজানো, নিজের শখ পালন করার অনুমতি পেয়ে সে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়।

.........................................................................

ধম্মটম্ম'কে কখনই সে তোয়াক্কা করে না,
স্বপ্ন তখন আকাশ ছোঁয়া। 
খোলা আকাশে সে উড়তে চায়, বাতাসের ঘ্রাণ নিতে চায়,
গলি পেরিয়ে বড়রাস্তার মাথায় সে একাই হাঁটতে চায়,
দৃষ্টান্ত হতে চায় সমাজ শৃঙ্খলে আবদ্ধ নারীজাতির সামনে। 
উঁচিয়ে সে উঠবেই, ভরা যৌবনের রক্তের তেজ, মনে অদম্য সাহস'কে সে তুলে ধরবেই,
বাঁচার মতো করে বাঁচবে - 
পরাধীনতার দেওয়াল ভেঙে চুরমার করে দিয়ে।

 
রওডন স্ট্রিটের বাড়িটা

রওডন স্ট্রিটের বাড়িটা আজ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে,
এক বিষণ্ণ সময় যেন থমকে গেছে দেওয়ালগুলোতে আবদ্ধ বাতাসে,
দরজা, জানালাগুলো নিষ্প্রাণ শুধু দাঁড়িয়ে আছে,
ভিতরে ভ্যাঁপসা গন্ধটা নিঃশব্দে প্রতিবাদ জানাচ্ছে মৃত প্রায় হয়েই, 
ওরা কথা বলে না,
ওরা চিৎকার করে না, 
মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি করে না, 
ওরা শুধু প্রতিবাদ করে অনুভূতির পর্দায় ধাক্কা দিয়ে,
ওরা প্রতিবাদ জানায় তাদের কাছেই যারা বিবেকের দরজা বন্ধ করে দেয় নি,
ওরা রাজনৈতিক দেওয়াল ভেদ করে আত্মপ্রকাশ করতে শেখে নি। 
তসলিমা নাসরিন তুমি শুনতে পাও ওই দেওয়ালগুলোর রাতের নিঃশব্দ কান্না!
ওই যে দেওয়াল জুড়ে তোমার কতশত ছোঁয়া খেলা করেছে,
তোমার আঁকা ছবিগুলোকে ওরা বুকে ধরে রেখেছিলো পরম স্নেহে! 
ওই যে মেঝের শীতল ছোঁয়া যখন তোমার পায়ে পায়ে খেলা করেছে আপন করে
যেভাবে ধরণীর মাটি খেলা করে শিশুপায়ে!
ওই যে পড়ার টেবিলে বসে তুমি তৈরি করেছিলে 
ন্যায়ের তহবিল!
মানুষের বিবেকে জোর ধাক্কা দিয়ে ছিটকে দিতে চেয়েছিলে চিন্তার গোঁড়ামিকে!
মানুষের চিন্তাতে কিছু এসে যায় নি তাতে,
কিন্তু ওই ঘর, ওই বারান্দা, ওই পড়ার টেবিল, ওই দেওয়ালগুলো হারিয়েছিলো তাদের 
পরম স্নেহে ধরে রাখা মানুষটাকে,
যেদিন তুমি নির্বাসনে চলে গেলে ওদের একা করে দিয়ে,
ওরা সেদিন অনাথ হয়ে গেছিল, 
আজও অনাথ হয়ে পড়ে আছে কোলাহলের শহরে একপ্রান্তে মাথা গুঁজে,
কারোর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ওই ইট পাথরে গড়া বাড়িটার একাকীত্বে।

যদি পারতাম লেখার জাহাজে উড়িয়ে এক মুহূর্তে তোমাকে ওদের কাছে এনে দিতে,
যদি পারতাম ওই অনাথ হয়ে যাওয়া বাড়িটাকে ওদের ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে,
যদি পারতাম আবার ঘরময় আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিতে,
যদি পারতাম আবার দরজা জানালাগুলো দিয়ে প্রথম সূর্যের কিরণ দিতে!
ওদের মতো নিজেকেও বড্ড অসহায় লাগে আজ,
ওদের মতই আমিও যেন অনাথ হয়ে পড়ে আছি এই বাংলায়,
আমারও দীর্ঘশ্বাস পড়ছে মুহূর্তে মুহূর্তে,
চাপা কান্নার হাহাকার উঠছে নাভিশ্বাস ঠেলে,
আমিও আজ তলিয়ে যাচ্ছি ওই ঘরবন্ধ ভ্যাঁপসা বাতাসের মধ্যে দিয়ে অন্ধকারের অতল গভীরে,
হারিয়ে যাচ্ছি ক্রমশ নিজেরই অস্তিত্ব থেকে।
আমার বুকে বাংলা আজ বড় অসম্পূর্ণ -

তুমি ছাড়া ..
প্রেম ছাড়া ..

 

বাংলা তোমায় প্রণাম।

আমার বাংলা তোমায় প্রণাম,

ছোটবেলাতে আমার বলা প্রথম ভাষা তুমি,

আমি যখন ব্যথা পেতাম, আমার কান্নাতে ঝরে পড়তো তোমার অক্ষর,

আমি যখন হাসতাম, হাসিতেও তোমার ছোঁয়া লেগে থাকতো,

আমি যখন প্রথম অঙ্ক শিখি, সেখানেও তোমার সংখ্যা গুনতাম,

আমি যখন প্রথম ডাকে মা'কে গর্বিত করেছিলাম, সেটাও তোমারই শব্দ,

যে ভাষায় আদর্শ শিখেছি তা, শুধু তোমারই।

আমার বাংলা,

তোমায় শত কোটি প্রণাম।

 

বাংলা, আজ আমি ভালো নেই,

আমার আদর্শ আজ অপমানিত,

অপমানিত আমার লেখক,

অপমানিত তার প্রিয় ভাষার লেখা।

আজ তোমার ভাষার অপব্যবহার হয়, তোমার ভাষায় কটুক্তি ভেসে আসে,

তোমার ভাষায় লেখা বই'তে আগুন জ্বলে,

জ্বালায় তারাই যারা তোমার ভাষা'কে নিয়ে গর্ববোধ করে।

তারা গর্ব করে নিজেদের অজ্ঞানতার পরিভাষা নিয়ে,

তাদের গর্ব তুমি নও,

তারা গর্ব করে হেফাজতি ইসলামে,

তারা গর্ব করে গোঁড়া হিন্দুত্ব নিয়ে,

তুমি শুধুই তাদের কথা বলার বস্তু।

আমার সোনার বাংলা, ওরা তোমাকে কলঙ্কিত করে ফেলেছে,

চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে যেমন কালো দাগগুলো স্পষ্ট দেখি,

তোমার গায়ে লাগা কালিটাও আমি স্পষ্ট দেখতে পাই।

চোখের সামনে দেখি তোমার ভাষা বহনকারী মানুষগুলো -

তোমাকে ভরা বাজারে নিলাম করছে,

চোখের সামনে দেখি তারা তোমার ভাষাতে মেয়েদের অশ্লীল করছে,

চোখের সামনে দেখি তোমার ভাষায় আমার লেখক নির্বাসিত,

চোখের সামনে দেখি ওরা তোমার ভাষা'কেই ধর্ষণ করছে দিনে রাতে।

অনুভব করি আমার লেখক তোমার ভাষায় ফুঁপিয়ে উঠছে,

অনুভব করেছি সে তোমার ভাষাতে কথা বলতে -

আকুল চিত্তে ঘরে এপাশ ওপাশ করছে,

বুক ফেটে চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে তবু তোমার ভাষায়-

দুটো লাইন কাউকে শোনাতে পারছে না।

এত নিষ্ঠা, এত প্রেম বুকে নিয়ে যে আজও তোমার ভাষাকে অঞ্জলি দেয়,

সেই কিনা তোমার ভাষা'তে নির্বাসিত!

আজ তুমি সত্যিই কলঙ্কিত।

 

আমি ভালো নেই আমার প্রিয় বাংলাভাষা,

তুমি ভালো থেকো।

 

সত্যের যোদ্ধা তসলিমা নাসরিন

আজ রবিতে আমি দেখেছি রবিকন্যা,
কলমাস্ত্র হাতে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে,
ইউরোপীয় সভায় বাংলার মুখ উজ্বল করছে। 
প্রতিনিধিত্ব করছে ব্লগার-লেখক, মুক্তচিন্তকদের হয়ে,
গড়ছে সংগঠন। 

কখনো সে ছিলো এক পড়ুয়া,
কখনো সে পত্রিকাতে নিজের নামে লেখা দেখে ছুটে বেড়িয়েছে ঘরময়,
কখনো সে স্বপ্ন দেখেছে ভালোবাসাময় জীবনের,
কখনো সে ভেসেছে আনন্দ পুরস্কারে। 

কখনো সে চাকরি করেছে ডাক্তারির স্বল্প পারিশ্রমিকে,
কখনো সে শান্তির সংসার চেয়েছে স্বাধীন পরিপাটিতে। 
কখনো সে "লজ্জা" লিখেছে সমাজের লজ্জা দেখে,
কখনো সে ভয়ার্ত চোখে বেড়িয়েছে কোর্ট চত্বরে।
সমাজ বিভীষিকায় সে হারিয়েছিলো সমস্ত সম্মান, 
হারাতে বসেছিলো প্রাণভোমরা টুকুও,
প্রিয় ব্রহ্মপুত্র ছাড়তে হয়েছিলো, 
ছাড়তে হয়েছিলো স্বদেশ ভিটেও। 
আরেক বাংলা তাকে দিলো প্রতারণা, ঘাড় ধাক্কা,
ছুটতে ছুটতে এদিক ওদিক,
দিগ্বিদিক ক্লান্ত পথিক,
ধাতস্থ হয়ে আবার শুরু নতুন করে আদর্শের লড়াই।
লড়াই আর উদারতা রক্তে মিশে,
বিষ মায়াবী অন্ধকারে আলোর দিশা নিয়ে আজ, তসলিমা নাসরিন
তুমি একাকী বীর শ্রেষ্ট যোদ্ধা। 

লক্ষ, কোটি কন্ঠস্বরে ভাসিয়ে দেব জনজোয়ার,
চারিদিক গমগমে আওয়াজে,
ফেটে পড়বে মুক্তচিন্তার জয়ধ্বনি,
সত্যের আওয়াজে সত্য জিতবে,
জিতবে মানবতা। 
ইতিহাস লিখবে সত্যাগ্রহ যুদ্ধ,
কলমের কালিতে পিছলে পড়বে মৌলবাদ ও পুরুষতন্ত্র,
একটাই নাম আর হাজারো জনজোয়ারে,
সত্যের যোদ্ধা তসলিমা নাসরিন।

 

2376 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।