নারীবাদ একটি মতবাদ, এবং এই মতবাদের উপর ভিত্তি করে যে আন্দোলন, সেটা নারীবাদী আন্দোলন। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে, সমতা ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়া। কিন্তু কেনো? কারণ হচ্ছে মানুষের মুক্তি। বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় থেকে মানুষের মুক্তি সম্ভব না। নারীবাদ মতবাদে যিনি সমর্থন করেন, এবং তার লক্ষ্যে কাজ করেন, তিনি নারীবাদী। যারা নারীবাদী তারা যার যার অবস্থান থেকে, চোখ, কান, নাক, মুখ খোলা রেখেই অত্যন্ত সচেতন ভাবে, সমাজে নারীপুরুষের বৈষম্যলোপে কাজ করে যান।
একজন নারী যখন নিজের ইচ্ছায় ঘরে থাকা এবং গৃহস্থালি সামলানোর কাজ বেছে নেন, তিনি সেটা নিতেই পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঘর গৃহস্থালির কাজ করে, একজন নারী কোনো আয় করেন না। মানে এইখানে তার শ্রম, তার মেধা, তার ধৈর্য্য সর্বোপরি তার সমস্ত সময় তিনি ব্যয় করছেন এমন একটি কাজে, যেখান থেকে তার নিজস্ব আয় হচ্ছে না। আমরা সেই ব্যাক্তিকেই স্বাবলম্বী বলি, যিনি শারিরীক মানসিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্যের উপর নির্ভর করেন না।
যিনি সংসারকে সময় দেয়ার জন্য চাকরি ছেঁড়ে দিচ্ছেন, তিনি এক ক্ষেত্রে তার অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়েই কাজটা করছেন। এই ক্ষেত্রে, অনেকে বলতে পারেন যে, স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক বোঝাপড়া থেকেই ব্যাপারটা ঘটছে। হ্যাঁ সেই ব্যাপারটা একটা গভীর বিশ্বাস থেকেই হচ্ছে। কিন্তু মানুষের মন এবং বিশ্বাস একটা আপেক্ষিক এবং ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার। তাই এই বিশ্বাস করে, চাকরি ছেঁড়ে দিয়ে সকল নারীই যে সুখি হবেন এমন কোনো কথা নেই কারণ, অর্থনৈতিক যেকোনো ব্যাপারে সেই নারী কে নির্ভর করতে হবে তার ঘরের পুরুষের কাছে।
নারীর উপার্জনহীন ঘরে থাকাকে আমি সমর্থন করি না, ঠিক তেমনি ভাবে আমি সমর্থন করি না, একজন পুরুষ ঘরে থাকবে কিংবা নারী কাজ করবে। কারণ এটাও যদি হয় তবে সেই পুরুষকেও নির্ভরশীল হতে হবে নারীর উপর। তাই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকতে হবে নারী পুরুষ সকলের। এখন নারী পুরুষ যদি বাইরে কাজ করতে যায়, তাহলে বাচ্চার দেখাশোনার ব্যাপারটা এবং গৃহস্থালীর কাজ কর্ম এগুলোর কি হবে?
এইখানেই চলে আসে জেন্ডার শ্রম বিভাজনের বিষয়টি। একজন নারীর মতোই একজন পুরুষ সেই সমস্ত কাজ করতে পারে যা একটি শিশু পালনে এবং ঘরের কাজ করার জন্য প্রয়োজন। পুরুষ শুধু পারে না গর্ভ ধারণ করতে এবং স্তন্য দান করতে, ঠিক যেমন নারীও পারে না শুক্রাণু সরবরাহ করতে।
ঘরের কাজ এবং শিশুপালন এই দুটো কাজ নারী পুরুষ ভাগাভাগি করে নিতে পারে। আর এই জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিসর্জন দেয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আর তাই যে নারীকে সংসারের কাজ করতে হবে, বা সুন্দর ভাষায় বললে, পরিবারকে সময় দিতে হবে বলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হয়, আমি সেই নারীটিকে বঞ্চিত মনে করি।
এখন কোনো নারীর একাউন্টে যদি পয়সা থাকে, মানে যে কোনো ভাবেই যদি সে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হয়, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে জানে, তাহলে সে ঘরে থাকুক, কিংবা পরিব্রাজক হয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াক সেটা সেই নারীর নিজের পছন্দ এবং সিদ্ধান্ত।