ফরিদ আহমেদ

লেখক, অনুবাদক, দেশে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। দীর্ঘ সময় মুক্তমনা ব্লগের মডারেশনের সাথে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের অনুবাদ করেছেন। বর্তমানে ক্যানাডা রেভেন্যু এজেন্সিতে কর্মরত অবস্থায় আছেন। টরন্টোতে বসবাস করেন।

সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা কতোখানি প্রাকৃতিক আর কতোখানি অর্জিত?

এখন থেকে খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, সমাজে প্রাকৃতিকভাবেই পুরুষের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করা ছিলো। পুরুষ তার সেই সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করুক, এটাই ছিলো তার কাছে সমাজের প্রত্যাশা। পুরুষের জন্ম হতো একজন শিকারি এবং আক্রমণাত্মক প্রাণী হিসাবে। যা কিছু সম্পদ তার কুক্ষিগত, সেটাকে সংরক্ষণ করা এবং এর বাইরে যা কিছু আছে, সেখান থেকে অতিরিক্ত কিছু নিজের দখলে আনা, এই ছিলো তার জৈবগত ভূমিকা। 

Forid Ahmed

পুরুষের এই ভূমিকা প্রথম ধাক্কা খায় বিংশ শতাব্দীর নারীবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে। শুধু যে পুরুষের ভূমিকাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলো এই আন্দোলন, তা নয়। দীর্ঘকালব্যাপী চলা অচল একটা সমাজে অসংখ্য পরিবর্তনের সূচনা করেছিলো এই আন্দোলন। সেই সব পরিবর্তনের মাঝে এই বিতর্কেরও জন্ম হলো এই আন্দোলন থেকে যে সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা কতোখানি প্রাকৃতিক আর কতোখানি অর্জিত। ধরা যাক, বাংলাদেশের এক পরিবারে পিঠাপিঠি দুই ভাই-বোন আছে। এদের একজনের নাম তমাল। আর আরেকজন তন্বী। তমাল বাইরে খেলতে যায়। গায়ে কাদামাটি মেখে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলে আসে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে মারামারি করে নাক-টাক ফাটিয়েও বাসায় ফেরে। অন্যদিকে তন্বী মূলত বাসায় থাকে। মেয়ে বলে তমালের মতো ঘরের বাইরে গিয়ে খেলার অনুমতি তার নেই। সে বাসায় বসে তার পুতুল নিয়ে খেলে। পুতুলের চুল আঁচড়ে দেয়, কাপড় পরায়, তাকে ঘুম পাড়ায় বিছানায় শুইয়ে। মা যখন ব্যালকনিতে বসে চা খায়, তন্বী মায়ের গা ঘেঁষে বসে থাকে আদুরে বিড়ালের মতো। তমালের এই আগ্রাসী এবং বহির্মুখী আচরণ আর তন্বীর এই নরম কোমল ঘরোয়া আচরণ কী জৈবিক? নাকি অর্জিত? তমাল যে ভূমিকাটা পালন করছে, সেটার পিছনে কি তার বাবা এবং অন্যান্যদের তার সক্ষম পুরুষ হয়ে ওঠার প্রত্যাশা কাজ করছে না। অন্যদিকে তন্বীর আচরণও কি পরিবার বা সমাজের প্রত্যাশা থেকে আগত নয়। সে বন্ধুদের সাথে বাইরে খেলতে যেতে চাইলে কিংবা মারামারি করে এলে তার মা কি তাকে বলবে না যে মেয়েদের এইসব কাজ করা ঠিক না?

সিমোন দ্য বোভোয়ার তাঁর “দ্য সেকেন্ড সেক্স" বইতে লিখেছিলেন, ““One is not born, but rather becomes, a woman”। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, “কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, ক্রমশ নারী হয়ে ওঠে।” একটা সময় জুড়ে যেগুলোকে আমরা নারীর বৈশিষ্ট্য বলে জানি, সেগুলো যে নারী প্রাকৃতিকভাবে পায়নি বরং সমাজের অর্জিত বৈশিষ্ট্য হিসাবে পেয়েছে, এই ধারণাটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদের বক্তব্য ছিলো, সমাজের অনেক সমস্যা এবং বৈষম্যকে দূর করা সম্ভব ছেলে বাচ্চা আর মেয়ে বাচ্চাকে ভিন্নভাবে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে। তাদের পরামর্শ ছিলো, মেয়েদের নানা ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নিতে দাও, এবং এর বিপরীতে ছেলেদের কোমল অংশকে বিকশিত করতে বলো। দেখবে, পৃথিবীটা বসবাসের জন্য অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।

নারীর নারী বৈশিষ্ট্য সমাজসৃষ্ট, আদতে নারী এবং পুরুষের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই, এটা নারীবাদী এবং আরো কিছু চিন্তাবিদদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিলো প্রায়। গত দুই দশক ধরে এই জায়গাতেও ভিন্ন ধারণা এসে জায়গা করে নিচ্ছে একটু একটু করে। নারী-পুরুষের মধ্যে জৈবগত পার্থক্য আছে, এবং সেটা মূলত জন্মগত, অর্জিত নয়। একসময় পুরুষালী এবং রমণীয় রূপকে সমাজসৃষ্ট হিসাবে চিন্তাবিদরা মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু, এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। নতুন নতুন জেনেটিক ব্যাখ্যা এসে যাচ্ছে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এবং সেগুলো নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক পার্থক্যকেই তুলে ধরছে।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কিছু কিছু কাজে পুরুষেরা নারীদের চেয়ে দক্ষ। ফুটবল কিংবা টেনিস খেলার কথা ধরুন। এই খেলাগুলোতে নারী-পুরুষ কখনোই মুখোমুখি হয় না। হলেও, পুরুষেরা জিতে যাবে প্রায় প্রতিটা খেলাতেই। শিকারি এবং খাদ্য সংগ্রাহক হিসাবে পুরুষ লক্ষ বছর কাজ করেছে। তাদের জেনেটিক কোডে এই বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে বয়ে চলেছে। বয়ঃসন্ধির পরে মেয়েরা শারীরিকভাবে পরিপূর্ণতা ছেলেদের চেয়ে আগে পেলেও, ছেলেদের হৃৎপিণ্ড মেয়েদের চেয়ে বড়, মাংসপেশি সুগঠিত, ফুসফুসের সামর্থ্য বেশি, বিশ্রামের সময় হার্টবিট মেয়েদের তুলনায় কম। এগুলো পুরুষদের মেয়েদের তুলনায় অধিক শারীরিক পরিশ্রম করার সক্ষমতা দিয়েছে।

নৃবিজ্ঞানী ডেসমন্ড মরিস আজকের সমাজে নারী-পুরুষের যে পার্থক্য তা আদিম সমাজে তাদের ভূমিকার মাঝে খুঁজে পেয়েছেন। আদিম সমাজে পুরুষেরা যখন খাদ্য সংগ্রহে বের হতো, মেয়েদের দায়িত্ব থাকতো বাচ্চা-কাচ্চাদের দেখভাল করা। এর ফলে, পুরুষেরা হয়েছে সবল, সুগঠিত এবং পুরুষালী। গড়পড়তায় পুরুষেরা নারীদের তুলনায় তিরিশ ভাগ বেশি শক্তিশালী, ওজনে দশ ভাগ বেশি এবং দৈর্ঘ্যে সাত ভাগ উঁচু। তাদের দৃষ্টিশক্তি নারীদের তুলনায় প্রখর। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার প্রতি ঝোঁকও এদের বেশি, নারীর মতো অতি সতর্ক এবং ভীতও তারা নয়। দীর্ঘসময়ব্যাপী কাজ করার প্রতিও এদের মনোনিবেশ প্রচুর। মরিসের বক্তব্য হচ্ছে, বিবর্তন নিশ্চিত করেছে যে আমাদের মাঝে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে জীবনকে দেখার বিষয়ে এবং এই পার্থক্য বাচ্চা বয়স থেকেই শুরু হয়। ছেলে-বাচ্চা এবং মেয়ে বাচ্চার এই পার্থক্য কিন্ডারগার্টেন পর্যায় থেকেই লক্ষ্য করা যায়। এর পিছনে আমরা তাদের কীভাবে ট্রিট করি, কীভাবে শিক্ষা দেই, সেগুলো দায়ী নয়, দায়ী হচ্ছে তাদের জিন।

আদিম সমাজে বিকশিত নানা ধরনের স্কিলগুলো আধুনিক সমাজেও আমরা বহন করে চলেছি। ম্যাপ রিডিং এর কথাই ধরুন। খালি চোখেই দেখবেন, ম্যাপ রিডিং এ ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে দক্ষ। বাংলাদেশে ম্যাপ দেখে গাড়ি চালানো হয় না। সেই সাথে নারী ড্রাইভারও অনেক কম। তাই, ওখানে এটা টের পাওয়া যাবে না। কিন্তু, পাশ্চাত্যে যারা গাড়ি চালান, তারা এই বিষয়টা নিশ্চিতভাবেই খেয়াল করেছেন। পুরুষদের এই স্কিল যে বেশি, সেটা গবেষণা দিয়েও প্রমাণিত হয়েছে। প্যারিসের গেসটাল্ট ইন্সটিটিউট সাম্প্রতিককালে একটা গবেষণা করেছে। সেই গবেষণায় দেখা গেছে এই ফলাফল। ম্যাপ রিডিং এ পুরুষ নারীর তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ। পুরুষের এই দক্ষতা এসেছে শিকারি-সংগ্রাহক ভূমিকা থেকে। খাদ্য জোগাড় করতে গিয়ে তাদের চলে যেতে হয়েছে বন-জঙ্গলের ভিতরে বহু দূর। দিন শেষে নানা চিহ্নকে মনে রেখে তাদের ফিরে আসতে হয়েছে বাড়িতে। নারী যেহেতু বাড়িতেই থেকেছে, এই দক্ষতার কোনো প্রয়োজন তার পড়েনি।

পুরুষের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে গেছে বিবর্তন আর সংস্কৃতির পরিবর্তনের গতির অসম পার্থক্য। বিবর্তন হেঁটেছে শ্লথগতিতে, অন্যদিকে মানুষের সংস্কৃতি পরিবর্তিত হয়েছে অনেক দ্রুত লয়ে। পুরুষের শারীরিক শক্তিমত্তা, শিকারিসুলভ দক্ষতা বুনো সমাজের জন্য প্রবলভাবে কার্যকর। কিন্তু, আধুনিক সমাজে, যেখানে যন্ত্রপাতি শারীরিক শক্তিকে অপ্রাসঙ্গিক এবং বাহুল্য করে তুলেছে, কর্মক্ষেত্রে আন্তঃ-ব্যক্তিক সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেখানে পুরুষের দশা হয়েছে খুবই করুণ। এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পুরুষ হঠাৎ করে উপলব্ধি করেছে আধুনিক সমাজে টিকে থাকার জন্য সঠিক এবং কার্যকর অস্ত্র তার হাতে নেই।

পুরুষ যেখানে আকস্মিকভাবে আবিষ্কার করেছে আধুনিক সমাজে আসলে সে একজন মিসফিট, এর বিপরীতে, নারীরা বিস্ময়ের সাথে অনুধাবন করেছে আদিম সমাজে তার যে অদক্ষতা তাকে পুরুষের অধীনস্থ করে রেখেছিলো ,সেই অদক্ষতাই আধুনিক সমাজে তার জন্য দক্ষতা হয়ে ফিরে এসেছে, তাকে পুরুষের চেয়ে অধিকতর সুবিধা দিচ্ছে। আদিম সমাজে পুরুষ যখন বল্লম, বর্শা নিয়ে খাবার জোগাড় করতে ঘরের বাইরে গেছে, নারী তখন ঘরে বাচ্চা-কাচ্চাদের যত্ন নিয়েছে। এর সাথে অসংখ্য কাজ তাদের করতে হয়েছে গৃহস্থালি কর্ম হিসাবে। এগুলো করার জন্য পর্যাপ্ত সময় তার ছিলো না, ছিলো না সময়ের বিলাসিতা। ফলে, সে তার অসংখ্য কাজকে গুরুত্ব অনুসারে ভাগ করেছে। কাজকে প্রায়োরাটাইজ করার মাধ্যমে সে তার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার চেষ্টা করেছে। একই সাথে সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে কথা বলার সক্ষমতাকে বা যোগাযোগের দক্ষতাকে সে উন্নত করেছে। মরিস যেমন বলেছেন, “আমরা জানি কথা বলায় মেয়েরা পুরুষের চেয়ে দক্ষ। এটা কোনো অস্পষ্ট বা অপ্রতিষ্ঠিত ধারণা নয়। একই ধরনের ভার্বাল টাস্ক দেবার পর নারী এবং পুরুষের মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে এই উপসংহারে আমরা উপনীত হয়েছি। ভার্বাল সমস্যা সমাধানের সময় নারীরা পুরুষের তুলনায় মস্তিষ্কের অনেক বেশি এলাকাকে ব্যবহার করে। ভার্বাল কমুনিকেশনকে নারীরা যেভাবে সামাল দেয়, সেটা পুরোপুরি বায়োলজিক্যাল। এই পার্থক্য অর্জিত দক্ষতা থেকে আসে নাই। নারীদের এই জৈবিক দক্ষতা এবং এর সাথে বাচ্চাকাচ্চা এবং অন্যদের যত্ন-আত্তি করার তাদের জন্মগত গুণাবলী যদি একত্রিত হয়, তবে সমাজ জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়, আগে যেখানে পুরুষেরা আধিপত্য বিস্তার করে ছিলো, সেগুলো এখন নারীদের দখলে চলে যাবে। এবং বাস্তবে হচ্ছেটাও তাই। পুরুষ তার আধিপত্য হারাচ্ছে, তার সাম্রাজ্য বেদখল হচ্ছে আর অন্যদিকে নারী হয়ে উঠছে অধিকতর কর্তৃত্বপরায়ন এবং হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে সুকঠিনভাবে সংকল্পাবদ্ধ।

নারীর শ্রবণেন্দ্রিয় পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। সন্তান প্রতিপালনের জন্য খুব সম্ভবত এই দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরুষের তুলনায় নারীর শ্রবণ ক্ষমতা দ্বিগুণ বেশি। অস্পষ্ট বা দূরবর্তী শব্দকে পুরুষের তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ বেশি চিহ্নিত করতে পারে নারী।

শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ই নয়, নারীর স্পর্শানুভূতিও পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি বিকশিত। নারীর ত্বকে পুরুষের তুলনায় দশগুণ বেশি রিসেপ্টর রয়েছে এবং এই ত্বক স্পর্শে অনেক বেশি সংবেদনশীল। স্পর্শের সাথে সম্পর্কযুক্ত হরমোন অক্সিটোনিক এবং প্রোল্যাক্টিন এর উপস্থিতি তার স্পর্শ করার এবং স্পর্শকাতরতার চাহিদাকে বৃদ্ধি করে। এজন্য দেখবেন, নারীরা ভালবাসার জনকে অনেক বেশি স্পর্শ করে থাকে, একই ভাবে তারাও ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে অহরহ স্পর্শ কামনা করে। পুরুষের ত্বকে রিসেপ্টর শুধু যে কম তাই নয়, চোখ মেলে তাকিয়েও সে নারীর তুলনায় কম তথ্য সংগ্রহ করে। বেশিরভাগ ছোটখাটো জিনিসই দেখবেন পুরুষের দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছে, কিন্তু নারীদের শ্যেন চোখে সেগুলো মিস হয় না। পুরুষের শুধু দৃষ্টি নয়, তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের অবস্থাও করুণ। ট্রাশ ক্যান থেকে আসা দুর্গন্ধ কিংবা বাথরুমে দুর্গন্ধের বিষয়ে তারা যে উদাসীন, সেটা আসলে নয়। আসল বিষয় হচ্ছে এই ঘ্রাণই তাদের নাকে সেভাবে যায় না, যেমনটা যায় মেয়েদের নাসারন্ধ্রে। বাসায় আমি বা অর্কবুড়া থাকলে কোনো গন্ধ পাই না, কিন্তু আন্না বাসায় ঢোকার সাথে সাথে নাক কুঁচকাতে থাকে আর বলে যে এতো গন্ধ কোথা থেকে আসছে। আমরা প্রতিবাদ করে বলি, কই কোনো গন্ধতো আমরা পাচ্ছি না। সে ঠিকই ট্রাশ ক্যান বের করে দেখাবে যে আমরা ট্রাশ ঠিক সময়মতো বাইরে ফেলে আসিনি। কিংবা জুতোর ভিতর থেকে ব্যবহৃত দুর্গন্ধময় মোজা টেনে নিয়ে ওয়াশিং মেশিনের মধ্যে নিয়ে ফেলবে। পুরুষের বায়োলজিক্যাল প্রোগ্রামিং তাকে বাইরের জগতের জন্য ফিট করেছে, বাইরের বহু কিছু সে দেখে, যা এড়িয়ে যায় নারীর চোখ, কিন্তু স্বল্প গণ্ডীর এলাকাতে এলেই সে হয়ে ওঠে একজন অথর্ব মানুষ। তখন সূক্ষ্ণ বিষয়গুলো তার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, নারীর ক্ষেত্রে তা হয় না।

এটা নিশ্চিত যে, গড়পড়তায় পুরুষের মস্তিষ্ক নারীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। তবে, এটাও মনে রাখা দরকার মস্তিষ্কের আকার বড় মানেই বেশি বুদ্ধিমান না। জটিল কাজে, পুরুষেরা সাধারণত মস্তিষ্কের বাম দিকটাকে ব্যবহার করে। অন্যদিকে মেয়েরা মস্তিষ্কের দুটো অংশকেই ব্যবহার করে। মস্তিষ্কের দুই অংশ নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় সমানভাবে বিন্যস্ত। এর কারণে তাদের ভাষিক যোগাযোগ পুরুষের তুলনায় উন্নত মানের। পুরুষের বাম এবং ডান মস্তিষ্কের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকই ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ রয়েছে। এর ফলে মস্তিষ্কের দুই পাশের তথ্য এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে পারে না। মানুষের আবেগের জন্য যে চিন্তা প্রক্রিয়ার জন্ম, সেটা ঘটে ডান মস্তিষ্কে। অন্যদিকে কথা বলার কেন্দ্র হচ্ছে বাম মস্তিষ্ক। এ কারণে পুরুষের পক্ষে আবেগের সুষ্ঠু প্রকাশ ঘটানো সম্ভব হয় না। এমনকি প্রি স্কুলেও দেখা গেছে বাচ্চা মেয়েরা বাচ্চা ছেলেদের তুলনায় তিন গুণ বেশি কথা বলে। এই অভ্যাস বয়সকালে গিয়েও পরিবর্তিত হয় না। প্রতিটা ফোন কলে গড়ে মেয়েরা যেখানে সময় নেয় প্রায় বিশ মিনিট করে, সেখানে ছেলেদের ফোন কলের স্থায়িত্ব হয় মাত্র ছয় মিনিট।

3686 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।