সীমান্ত প্রধান

সংবাদকর্মী

'লিঙ্গ কর্তন’ রোধে জেগে উঠেছে শিশ্নধারীরা, আইনের কুমির কবে জাগবে?

আত্মরক্ষার জন্য যে কেউ যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। সংবিধানও বলে দেয় সে কথা। পরবর্তীতে বিচার কী হবে না হবে সেটি পরের বিষয়। প্রথম কথা হচ্ছে আক্রমণের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। তো কেউ একজন আমাকে আক্রমণ করতে আসছেন আর আমি সেই আক্রমণ থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করবো সে পুরো ভাবনাটা নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করবে। যদিও আক্রমণের শিকার আমরা যখন হই, তখন হিতাহীত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি। ফলে কেউ নিজেকে রক্ষা করতে পারে, কেউ পারে না।

 

 

সম্প্রতি বেশ আলোচনা চলছে ‘লিঙ্গ কর্তন’ প্রসঙ্গ। কেউ যদি ধর্ষণ করতে আসে তবে তার ‘লিঙ্গ কর্তন’ করে দাও। এর পক্ষে বলছে কেউ কেউ, আবার বিপক্ষেও রয়েছে অনেকে। যার ফলে এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক বেশ জোড়ালো হচ্ছে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীই কেবল লিঙ্গ কর্তনের বিরোধীতা করছে তা নয়; অনেক মানবতাবাদী, মুক্তমনাও এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, এমন দাবি করছেন নারীবাদ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কেউ কেউ।

তবে কথা হচ্ছে, একজন ব্যক্তি যখন একজন নারীকে ধর্ষণ করতে আসবে, তখন নারীটি সে ধর্ষণ স্বেচ্ছায় উপভোগ করবে নাকি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে? যেহেতু ধর্ষণ উপভোগের বিষয় নয় সেহেতু নারীটি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টাটাই করবে, আগে না করে থাকলেও এখন থেকে অবশ্যই করতে হবে, করা উচিত, এতে কোনো দ্বিমত নেই। আর নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে সে খুন করবে না ধর্ষকের অণ্ডকোষ থেঁতলে দিবে নাকি শিশ্ন কাটবে নাকি চিমটি কাটবে, তা একান্তই আক্রান্তের শিকার নারী ঠিক করবে। এবং ওই মুহূর্তে সে যাই করুক না কেন, সেটিই যৌক্তিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ আছে বলেও মনে করি না।

কেননা, আত্মরক্ষা করা প্রতিটি মানুষেরই জন্মগত অধিকার। সুতরাং আত্মরক্ষা করতে গিয়ে কে খুন হবে, কে শিশ্ন হারাবে, তার জন্য কী বিচার হবে আর হবে না, সে হিসেব পরে। নিজের জীবন রক্ষায় অন্যের জীবনও যদি নিতে হয় তাও সে নিবে। এটা অপরাধ বলে গণ্য হবে না। তবে তাকেই প্রমাণ করতে হবে সে আক্রমণের শিকার হয়েছিলো, তার জীবন শঙ্কার মধ্যে ছিলো। কোনোক্রমে যদি সে এই প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে নিজেই অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে, শাস্তিভোগ করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রচলিত আইন।

বিচারে আমি নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হতে পারি! বিচারের রায় আমার বিপক্ষে যেতে পারে! যা ঘটিয়েছি তা পরিকল্পিত বলে রায় দিতে পারে আদালত! তাই বলে কী এই ভাবনা ভেবে নিজেকে রক্ষার্থে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবো না? অবশ্যই করবো। আমি আমাকে বাঁচাতে দরকারে খুনও করবো। একইভাবে একজন নারী যদি ধর্ষণ থেকে বাঁচতে গিয়ে কারো শিশ্ন কেটে দেয়, আমি বলবো সেটাই তার জন্য একমাত্র উপযুক্ত অবলম্বন, যথার্থ। এর বিরোধীতা যদি কেউ করে, তবে সেও ধর্ষকের সমকক্ষ, নির্দ্বিধায় এ কথাটা বলতে পারি বা তার জন্য এ বাক্যটাই যথপোযুক্ত।

ধর্ষণ আমাদের সমাজে মহামারী আকার ধারণ করেছে। কোনোভাবেই ধর্ষণ ঘটনার রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। চলমান পরিস্থিতি যখন এমন, তখন রাষ্ট্রও নির্লিপ্ত! জঘন্যতম এই ধর্ষণ রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ সুযোগে একটা শ্রেণি যেন ধর্ষণ উৎসবে মেতে ওঠছে! পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ধর্ষণ কোনো অপরাধই না! এ অবস্থায় আমাদের নারী সমাজও ভীত সন্ত্রস্ত।

মানুষের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন মানুষ বাঁচতে গিয়ে আইনও হাতে তুলে নেয়। আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় একটি রাষ্ট্রের দুর্বল আইন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে। আমরা অকপটেই বলতে পারি, ধর্ষণ সংঘটনের জন্য এই বিচারহীনতাই দায়ী। এক্ষেত্রে কোনো নারী যদি নিজেকে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে ওই ধর্ষকের লিঙ্গ কর্তন করে, তবে তার জন্য নারী নয়, এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিই দায়ী হবে। তবে আইন হাতে তুলে নিতে কোনো মানবিক ব্যক্তিই চাইবে না। নিতান্তই বাধ্য হয়ে মানুষ কখনো কখনো আইন হাতে তুলে নেয়।

আমরাও চাই না কেউ আইন হাতে তুলে নিতে। আবার এ-ও চাই, এই অসভ্য জঘন্যতম ধর্ষণকর্ম বন্ধ হোক। স্থায়ী সমাধান হোক। আমাদের নারীরা বুক ফুলিয়ে হাঁটুক, প্রাণ ভরে নির্ভয়ে বাঁচুক। কিন্তু সে নিশ্চয়তা কোথায়? দেশে যখন একের পর এক ধর্ষণ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তখন আমাদের নির্বাহী বিভাগ থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ পর্যন্ত নিশ্চুপ! ধর্ষণ রোধে তাদের কোনো মাথা ব্যথাই নেই। তাদের এই নির্লপ্ততাই প্রমাণ করে যে, ধর্ষণ কোনো অপরাধই নয়!

বারংবার একটি কথাই বলে আসছি, ধর্ষণ রোধে আমাদের যে আইন আছে, তা অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু প্রয়োগ নেই বলে ধর্ষণ রোধ করা যাচ্ছে না। আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার। ধর্ষণ রোধে দরকার ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি। ধর্ষক প্রমাণিত হলে কিংবা আত্মস্বীকৃত ধর্ষক হলে তার প্রতি কোনো রকম মানবিকতা না দেখিয়ে যতদ্রুত সম্ভব বিচারকার্য শেষ করা। ধর্ষকশ্রেণির যদি সর্বোচ্চ বিচার হয়, তাহলে হলফ করে বলতে পারি ধর্ষণ রোধ করা এই দেশে সম্ভব এবং প্রচলিত আইনই এ জন্য যথেষ্ট। আর সেটি হলেই ‘লিঙ্গ কর্তন’ করার চিন্তা কোনো নারীকেই করতে হবে না। ধর্ষণকাণ্ডের বিচার চেয়ে সভা সমাবেশ করার জন্য আমাদের নারীদের রাজপথেও নামতে হবে না।

একবার ভেবে দেখুন, যে দেশে ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং এর বিচার দাবি নিয়ে নারীকে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়, সে দেশ কতটা সভ্য হতে পারে! সে দেশের আইন কতটা জনবান্ধব! একী আমাদের জন্য লজ্জাজনক নয়? এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে হলে দরকার শুধু প্রচলিত আইনে ধর্ষকের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করা। এ জন্য রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগকেই সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাহী বিভাগের কঠোরতা এবং বিচার বিভাগের কার্যকরী ভূমিকায় আমরাই পারবো ধর্ষণমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। রাষ্ট্র জাগুক, মানবিক হোক মানুষ এই প্রত্যাশাই করি।

 

7696 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।