পেডি এডমিশান। rush...সকাল ১০.৩০.NOD (no official delay) slip এ একটা বাচ্চা আসলো। ৪-৫ বছরের ছোট্ট একটা মুখ দেখা যায় শুধু। কম্বলের ফাঁকা দিয়ে। ট্রলি তে এসেছে। অজ্ঞান। CA হাসিনা ম্যাডাম আরেক বাচ্চা ম্যানেজ করতে ওয়ার্ডে ব্যস্ত।
আমি স্লিপ এ লিখে দিলাম রিসিভড by dr sonia. ID.
তখন ও জানি না কি রিসিভ করেছি। কম্বল সরাতে সরাতে বাচ্চার বাবা কে জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা বাচ্চার। বল্ল বাচ্চাটা কে মারছে খুব ম্যাডাম। বাচ্চাটা কাপোছে।ভয়ানক খিচুনি হচ্ছে বাচ্চার। স্যার ম্যাডাম কাউকে আসে পাশে দেখি না। চিৎকার করে ওয়ার্ড বয় কে বলছি ম্যডাম কে জানা। স্যার কে ডাক।
খিচুনি থামাতেই হবে। কারও অনুমতি নিলাম না। কোথাও কেউ নাই। এক এম্পুল inj barbit তার ক্যনুলা করা হাতে পুশ করে দিলাম। খিচুনি সামান্য কমলো।
দিনাজপুর ল্যম্ব হাসপাতাল থেকে একটা সেফট্রায়াক্সন ইঞ্জেকশান আর কিছুটা স্যালাইন পেয়ে এসেছে। তারা রংপুর মেডিকেল এ রেফার করেছে। কেনো করেছে কেস কি কিছুই জানি না তখনো। কম্বল পুরা পুরি সরালাম।
আল্লাহ! এর চেয়ে বীভৎস দৃশ্য পৃথিবীতে আর হয় না।
তার যৌনাঙ্গের ওপর এক ফালি কাপড়। একটা ছেড়া প্যান্ট। সরালাম। সেই ছোট একটা জায়গা থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে পোকা(maggot) পড়ছে। মাটির ঢেলা গুঁজে দেয়া সেখানে। রক্ত মাটি মেখে একাকার। চিৎকার দিয়ে সরে গেলাম। ইন্টার্ন এর ততদিনে পাথর হবার বিদ্যা শিখে গেছি, তবু এই দৃশ্য সহ্য করার সাহস আমাকে সৃস্টিকর্তা দেন নি।
আশপাশ থেকে জানলাম। বাবা মায়ের এক মাত্র আদরের ধন পুজা।নিম্ন বর্ণ হিন্দু। তাকে একদিন বিকালে খেলতে যাওয়ার পর থেকে খুঁজে পাওয়া যায় নাই। তার পর দিন ভোরে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে হলদিবাগান এ নিথর পড়ে থাকতে দেখা যায়। চিৎকার যেন না করতে পারে তাই গলা আকড়ে টিপে ধরে রাখা হয়েছিলো অনেক ক্ষন। তাতে মস্তিস্কে রক্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে নি। যার ফলে খিচুনি। HIE stage 3. তার ছোট্ট যৌনাংগ কেটে বড় করা হয়েছে। intercourse এর উপযোগী করে নেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য হাসিল করা হয়েছে। রক্তপাত থামাতে না পেরে মাটির ঢেলা গুঁজে দেয়া হয়েছে। সেখানে অবায়বীয় মাধ্যমে জন্মেছে পোকা। গূড়গূড় করে বাসা করেছে সেখানে।
কিছুক্ষণ এর মাঝে multidimentional management শুরু হয় তার। গাইনি তে দৌড়াই আমি। nurosurgery তে দৌড়ালো ছোট ভাই ডাঃ এ.বি. সিদ্দিক।
ডাক্তার হাসিনা ম্যাডাম, ডাক্তার বিকাশ স্যার, ডাক্তার তোফায়েল স্যার, গাইনি বিভাগ এর প্রত্যক্ষ্য তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চললো। শিশু ওয়ার্ড এ এসে এসে সেই ক্ষত স্থানের ড্রেসিং করতো Petal Rosy.
Rahat Al Rajib ভাই কে পাই প্রথম থেকেই। মিডিয়ার সম্মুখীন হতে হয়েছে কতবার তাঁকে আর ডাক্তার হাসিনা ম্যাডাম কে। কাহিনি কে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত মিডিয়া জগত। তাদের কে সব সত্য তথ্য দিয়ে দেশবাসী কে বাচ্চাটার অবস্থা সম্পর্কে অবগত রেখেছেন।
কত দিন তারপর থেকে খেতে পারি নি। ঘুম আসতো না। বীভৎস সেই দৃশ্য শুধু চোখে ভাসে। তিন দিন পর পুজাকে ঢাকা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রেফার করা হয়। সব তথ্য প্রমান এত মজবুত ছিলো। আশা ছিলো সুবিচার পাবে আমাদের পুজা। সে আশায় গুড়ে বালি।
পুজার ধর্ষক সাইফুল কে পুজা জেঠু ডাকতো। সেই করেছিলো সর্বনাশ টা। পুরাতন পেড়ো বাড়িতে।
এদেশে পুজার মতো একটা দেবশিশুর যৌনাংগ যতটা সহজে সবার অগোচরে কেটে ফেলেছিলো সাইফুল। ততটা সহজেই আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে গেছে।
আর কারো ঘরে কন্যাশিশু জন্ম না নিক। যত দিন এমন জালিম দেশে বুক ফুলিয়ে চলতে পারে।
যারা তার অবাধ চলাচলের সুযোগটা করে দিয়েছেন!
আমার এই পোস্ট তাদের মোবাইলের স্ক্রিন পর্যন্ত পৌছাবে কিনা জানি না। এই ভয়াবহ বর্ননা দিতে চাই নি কখনো। আজ দিলাম কারণ একবার ভাবুন। সাইফুলের পরবর্তী এমন নির্মম শিকার আপনার কন্যা নয় তো!