আমাদের নারীরা মুক্তি কিভাবে পেতে পারে? যেখানে বেশীর ভাগ নারীরাই অন্ধকারে নিমজ্জিত আছে। শহরের দিকে দৃষ্টি দিতে দিতে আমরা হয়তো মনেই করতে পারছি না আমাদের গ্রামীন নারীদের কথা। এবং তাদের জীবন যাপন। সেখানে যদিও পর্দা প্রথা এতো জোরালো ভাবে দেখা যায় না তথাপি সেখানে কুসংস্কার আছে প্রচন্ড পরিমাণে।
আর সত্যিটা হলো মানুষেরা যা দেখে তাই অনুসরন করে থাকে। তাহলে গ্রামীণ নারী সমাজের মুক্ত চিন্তার সুযোগ কোথায়? যেখানে মেয়েরা এখনও বাড়ির বাইরে যাওয়াকে লজ্জা মনে করছে। আবার কারো সাথে কথা বলাকে চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে বিশ্বাস করছে!
আমি গ্রামীন মেয়েদের কথা বলছি- সেখানে যদি কোনো মেয়ে কোন ছেলের সাথে প্রয়োজনীয় কথাও বলে সমাজ তাকে ভিন্ন চোখে দেখে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও হয় পারে তীব্র ভাবে। গ্রামের চায়ের দোকান গুলোই যাবতাীয় সমালোচনার স্থান। এমনও হতে পারে মেয়ের বাবাকে অপমান করাও। এমতাবস্থায় যারা এক আধটু মুক্ত চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠতে চায় সেটা অংকুরেই বিনাশ হয়ে যায়। আবার দেখা যায় যেসকল পরিবারে দাদীগন জীবিত থাকেন ওই পরিবারের মেয়েদেরতো আর কথাই নেই। ওড়নাটা এভাবে না ওভাবে পড়ো, মাথায় কাপড়টা এভাবে না ওভাবে দাও ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে দেখা যায় এসব মেয়েদের আর নিজের মতামত বলে কিছই থাকে না। এভাবে গ্রামীন মেয়েরা অভ্যস্ত হয়ে যেতে থাকে পুরোনো সংস্কৃতিতে।
চিন্তার বিষয়টা হলো নারীবাদতো শুধুমাত্র গুটিকতক মেয়েদের জন্য নয়, এটার ভাব অত্যন্ত বিশাল এবং গভীর এবং পৃথিবীর সকল নির্যাতিত নারীর পক্ষে। তাহলে কিভাবে আমরা আমাদের দেশের বেশীর ভাগ নারীদের বাদ দিয়ে নারীবাদ চর্চা করতে পারি? এ প্রশ্নের জবাবে হয়তো অনেকেই বলবেন- আমাদের এনজিও প্রতিষ্ঠান গুলোতো এব্যাপারে কাজ করছে, হ্যাঁ কথাটি সত্য কিন্তু এনজিও সংস্থাগুলো যে পরিমান কাজ করতে পারছে, বা করছে তা কি যথেষ্ট? যেখানে বেশীর ভাগ সামাজিক সংগঠনগুলো সেবার নামে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে! তবুও করছে বলেই সান্তনা মানতেই হচ্ছে।
এইতো সেদিনের ঘটনা -আমাদের এলাকায় এক লোক ছিলো, তিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গনিত পড়াতেন। কোনো এক কারণে উনার স্রী উনাকে ছেড়ে চলে যান বা অন্য কোনো মানসিক টেনশনের কারণে উনি ব্রেইন স্ট্রোক করেন। ফলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি এখন ন্যাংটা হয়ে ঘুড়ে বেড়ান। এখন প্রশ্ন হলো এরকম একজন লোকের কাছ থেকে কি পাওয়ার থাকতে পারে? কিন্তু যা দেখলাম তা হলো এই- প্রথমে একটা জটলা দেখলাম কৌতুহল বশতঃ আমি সেখানে গেলাম, দেখলাম কয়েকজন মহিলা ওই লোকটার পা ধুয়ে দিচ্ছে, কেউবা পা ধোয়ার পানি সংরক্ষন করার জন্য পাতিলে তুলছে আর কেউবা মগ কিংবা গ্লাসে করে পানি আনছে যাতে উনি ফু দিচ্ছেন। আমি সেখানকার একজন মহিলা আমার সম্পর্কে ভাবি হয় উনাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা এখানে কেনো এসেছেন? উনি নিজেই তো অসুস্থ এবং অন্যের সাহায্য প্রার্থী? তাহলে উনি কিভাবে আপনাদের সাহা্য্য করতে পারেন? ভাবি উত্তরে বললেন- উনি ন্যাংঠা অইলে কি অইবো ভিতরে আছে অনেক কিছু।
আমি শুনে খুবই আশ্চর্য হলাম কারণ যাকে প্রশ্নটা করেছিলাম উনি একজন শিক্ষিত নারী। একজন শিক্ষিত নারী যদি এমন কথা বলতে পারে বাকিদের ব্যাপারেতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব শিক্ষিত মেয়েরা যখন বিয়ে করে শহরে আসে তখনও সেই পুরোনো ধ্যান ধারনাটা রয়ে যায়, ফলে দেখা যায় সংসার মিউচুয়াল হয় না। তাই এই সকল মেয়েরা সংসারেও সুখী হতে পারে না। তাই আমি মনে করি মুক্ত চিন্তাগুলোর বিকাশ কেবল মাত্র শহরে নয় গ্রামেও ব্যাপক আকারে বিকাশ ঘটানোর প্রয়োজন। যেহেতু আমাদের মাঝে নারীসমাজের বেশীর ভাগেরই বসবাস এই গ্রামেই। আর যদি এমনটা না হয় তবে এমন এক অসামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে নারীবাদের আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।