আফরোজ ন্যান্সি

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ট্যাবু ভাঙতে হলে নিজে সচেতন হোন এবং সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করেন

পিরিয়ডের ট্যাবু ভাঙতে রক্তমাখা প্যাডের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা ব্যাপারটা খুব লেইম লাগেনা? এই রক্তমাখা প্যাড পোস্ট করার পিছনের লজিক কি? ট্যাবু ভাঙা কি আপনার লজিক? ট্যাবু ভাঙাই যদি হয় তাহলে পিরিয়ড কি, এর ফলে মেয়েরা কি কি কষ্টের মধ্যে দিয়ে যায়, এই সময়ে কি করণীয় এবং কিভাবে মেয়েরা নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিবে ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে সামাজিকভাবে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে.. শহরের সেমিনার থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ব্যাপকহারে কর্মশালা, প্রশিক্ষণ এমনকি মঞ্চনাটকেরও আয়োজন করা যেতে পারে। এতে ট্যাবুও ভাঙবে, লোকের সচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে।

নাকি আপনার উদ্দেশ্য সহানুভূতি আদায়? পুরুষসমাজ কে বুঝানো যে প্রত্যেক মাসে আমরা রক্তাক্ত হই? এইখানে একটা কথা বলি... আধুনিক একজন মানুষ সে হোক পুরুষ কিংবা নারী সে কেনো নিজের স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার কে পুঁজি করে অন্যের সহানুভূতি আদায় করতে চাইবে? উচিৎ না। এইটা ব্যক্তিসত্তা কে লেইম বানায়া ফেলে।

আপনি বলবেন অনেক মেয়েরা প্যাড ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে না.. তাদের এবং তাদের সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি? দুক্ষের সাথে বলতে চাই আপনার রক্তমাখা প্যাডের ছবি তাদের কোনো উপকারেই আসবে না। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে প্যাড ব্যবহারের সুবিধাসমূহ জানিয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পিং করেন। সেই ক্যাম্পিং এ তাদের কে ফ্রি প্যাড প্রোভাইড করেন। গ্রাম এবং শহরের সাধারণ স্কুলগুলোতে ছাত্রীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ফ্রি দেওয়া সম্ভব কিনা, এ লক্ষ্যে কোনো ফান্ড করা যায় কিনা সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। বাসার কাজের বুয়াকে মাসে এক প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন গিফট করতে পারেন চাইলে।

আপনার যুক্তি যেটাই হোক না কেনো রক্তমাখা প্যাডের ছবি পোস্ট করাটা কোনোদিক দিয়াই খাটে না। তবু যদি খাটাইতে চান তাইলে আমি বলবো পিরিয়ড ট্যাবু হওয়ার ফলে প্রথমেই মেয়েরা পারিবারিকভাবে এবং তারপরে সামাজিকভাবে বিভিন্ন বাধাঁর সম্মুখীন হয়... তো সেক্ষেত্রে রক্তমাখা প্যাড যদি দেখাইতেই হয় তাইলে শুরুতে আপনার পরিবারের সদস্য যারা আছেন আই মিন মা বাবা ভাই বোন স্বামী পুত্র কণ্যা শ্বশুর শ্বাশুড়ি দেবর ননদ ভাসুর এবং তাদের পুত্র কন্যা এবং যাবতীয় স্বজনদের কে দেখান.. এবং তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন... ছোটবেলায় গণিত করে থাকলে একথা আপনার জানার কথা যে প্রথমে ফার্স্ট ব্র‍্যাকেটের কাজ করে তারপর সেকেন্ড ব্র‍্যাকেটের দিকে আগাইতে হয়... তাইলে শুরুটা নিজের পরিবার থেকেই হোক না কেনো?

আর হা! যাদের ই রক্তমাখা প্যাডের ছবি দেখলাম প্রত্যেকেরই প্যাড মাত্রাতিরিক্ত রক্তাক্ত ছিলো.... দেখে মনে হইলো উনারা একটা প্যাড মিনিমাম ৮/১০ ঘন্টা ইউজ করেন....

আপনারা ট্যাবু ভাঙতেছেন ভালো কথা.... কিন্তু নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে কিছুটা সচেতনতা তো আপনাদের থাকা উচিৎ... একটা প্যাড এতক্ষন রাখলে কিংবা এতো বেশী ব্লিডিংসহ প্যাড ইউজ করতে থাকলে আপনাদের স্বাস্থ্যের জন্য সেটি মারাত্নক ক্ষতিকর হবে... নাকি এখন আপনারা বলবেন ওইটা ছবি তোলার জন্যই দীর্ঘক্ষণ ইউজ করছেন? হাহা...

এনিওয়ে ঠিক কোনো যুক্তিতেই আপনাদের সমর্থন করতে পারলাম না... বড়ই দুঃখিত...

বি দ্র: লিখবো না লিখবো না করেও লিখেই ফেললাম.... একটা লেইম কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এইটা আমার একটা লেইম লেখা... নাথিং টু বি সিরিয়াস.... হ্যাপী ব্লিডিং

1637 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।