দিন তারিখ ভুলে গেছি, কিন্তু উপলক্ষ্যটা এবং প্রসঙ্গটা মনে আছে। বছর দুই/আড়াই আগের কথা। ছোট একটা কিশোরী মেয়ে সেবার ফেসবুকে ওর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মেয়েদের ঋতুকালীন অসুবিধার দিকগুলি নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলো। কথাটা ছিলো যে এই ব্যাপারটা যে একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যাপার আর এর মধ্যে যে কোনো অপবিত্রতা নেই বা লজ্জিত হওয়ার মতো কিছু নেই এইটা যেন সকলেই উপলব্ধি করেন। একটা নিষ্পাপ সাদামাটা পোস্ট সেটা নিয়ে কিনা লোকে লাফিয়ে পড়লো মাঠে- হা রে রে রে রে রে। মেয়ে মানুষ হয়ে কেনো সে মুখ ফুটে এইসব কথা বলবে! আর গালাগালি।
সে সময়ই অরুনাচলম মুরুগানাথন এর কথা লিখে সংক্ষেপে জানিয়েছিলাম সকলকে- দেখেন, এইটা হচ্ছে পুরুষ। প্রকৃত পুরুষ। নিজের বোন স্ত্রী এদের অসুবিধা দেখে এই লোক কাজে নেমেছিলো। কি করে কম খরচে ভারতের মেয়েদের হাতে এই জরুরি স্বাস্থ্য উপকরণটি তুলে দেওয়া যায়। কম খরচে কি ম্যাটেরিয়াল দিয়ে কি কায়দায় বানালে কিরকম ফল হবে সেটা পরীক্ষা করতে গিয়ে এক সময় মুরুগানাথান নিজের গায়ে পশুর রক্ত ভর্তি ব্লাডার বেঁধে নিজের বানানো প্যাড পরে দৈনন্দিন কাজ কর্ম করতো। সেই থেকে সারা দুনিয়ায় ওর নাম হয়ে গিয়েছিলো 'সেই পুরুষটি যে কিনা স্যানিটারি প্যাড পরতো'।
আজ দেখলাম ইন্ডিয়াতে ওরা মুরুগানাথান ভাইয়ের জীবনী নিয়ে সিনেমা বানিয়েছে- The Padman; অক্ষয় কুমার এই সিনেমাতে মুল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমাটা এর মধ্যেই রিলিজ হবার কথা ছিলো, তারিখটা পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নিয়ে গেছে ওরা। যে কারণে পিছিয়েছে সেটাও একটা বলার মতো প্রসঙ্গই বটে। ঐ যে হিন্দু উগ্রবাদীরা পদ্মাবতী সিনেমাটা রিলিজ করতে দিচ্ছিলো না, সেটা নাকি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পাচ্ছে। সেটাকে সুযোগ দিতে গিয়ে The Padman পিছিয়েছে।
ভাবছি সিনেমাটা দেখবো। আমাদের সিনেমা ব্যাবসায়ীরা কি এটা ঢাকায় এনে দেখাতে পারবেন না? তাইলে তো ঢাকার অনেকেই দেখতে পেতো- পৌরুষ নারীর চুলের মুঠি ধরে লাথি মারার মধ্যে নেই, মুরুগানাথান ভাইএর মতো লোকেরাই হচ্ছে আসল পুরুষ। ঢাকায় রিলিজ না হলে তো ইন্ডিয়ায় গিয়ে দেখতে হবে। অবশ্য নেপালেও ইন্ডিয়ান সিনেমা দেখায়, সেখানেও যাওয়া যায়। খুব কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছি। দেখি।