দৈনন্দিন প্রতিটি মুহূর্তে নারী যৌন নিপীড়নের শিকার। যৌন সহিংসতাকে মোকাবেলা করেই কেটে যায় একটি নারীর জীবনের বৃহদাংশ। কিন্তু তার নিজের কি কোনো যৌন জীবন আছে? আছে যৌন আকাঙ্খা? কিভাবে কাটে তার যৌন জীবন?
‘অবদমন’ শব্দটি নারীর লজ্জার মতো একটি ভূষণ। এটি কেবল ভূষণ নয়, বর্ম। এই বর্ম পরে কাটাতে হয় নারীকে সারাজীবন। আমাদের গোটা সমাজই সেক্স সাপ্রেসড সমাজ। অবদমিত যৌন জীবনের ফোঁকর গলে, পুরুষ ধর্ষকামী হয়ে ওঠে সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘঠনা নয়। কারণ এটি ‘পাওয়ারের’ সাথে জড়িত। ধর্ষকামীতা মূলত ক্ষমতার সাথে জড়িত। ক্ষমতা প্র্যাকটিসের সাথে পুরুষের যৌনতা একটি অতি প্রাচীন ফেনোমেনা। যা সহজে না পাই তা জোর করে পাবার অধিকার কেবল ক্ষমতাশালীর। যে ক্ষমতা ভোগ করে আসছে পুরুষ হাজার বছর ধরে। এটাও কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
আগে ক্ষমতাসীন পুরুষদের ক্ষমতার একটি বড় প্রাকটিস ছিলো যৌনতায়। একেকজন নবাবের শত শত বেগম ছিলো। রক্ষিতা ছিলো এত যে নবাব বছরেও একবার করে তাদের ঘরে যাবার সময় পেতো না। হারেম কালচার এখনও শুকিয়ে যাওয়া নদীর মতো আছে। ক্ষমতাসীনদের চাই একাধিক নারী। ‘ভোগ’ কিভাবে পুরুষমনন গড়ে তুলেছে তা ক্ষমতাকে বাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
রাষ্ট্র অকপটভাবে পুরুষতান্ত্রিক। এ বিষয়ে আমার মনে হয় বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। আলোর মতো পরিষ্কার এ রাষ্ট্র গঠিত পুরুতন্ত্রের সকল উপাদান দিয়ে। সে পুষ্টিতে পুষ্ট রাষ্ট্রের পুরো কাঠামো। সেখানে আইন, প্রশাসন, বিচার সকল তন্ত্র এতই পুরুষতান্ত্রিক যে খেয়াল করে দেখবেন পুরুষ একটি রাষ্ট্রের সর্বাধিক অপরাধী। কিন্তু একটি অপরাধে সর্বাধিক অপরাধী হয়েও শাস্তি বিষয়ে তারা ইমিউন থাকে সেটি যৌন অপরাধ। এ অপরাধের কোনো শাস্তি তাকে পেতে হয় না। আর এভাবেই একটি দেশের আইন পুরুষকে ধর্ষক করে গড়ে তোলে।
যতক্ষন পর্যন্ত তাকে শাস্তি মোকাবেলা করতে হয় না তার অপকর্মের জন্য, সে অপকর্মটি আসলে সংঘটনে রাষ্ট্র তাকে পারমিট করে। একজন পুরুষের একজন নারীর প্রতি আক্রমণাত্বক হয় তার মাথায় তখন কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করে। সে চায়। চাহিবা মাত্র তার প্রাপককে দিতে বাধ্য থাকিবে। জোর করে পাওয়ায় তার আনন্দ বাড়ে বেশি কারণ সেখানে সে নিজেকে পাওয়ারফুল হিসেবে দেখে।
একজন শিকারির শিকারে যে আনন্দ সেই আদিম আনন্দ তার যৌনতা শত গুনে বাড়িয়ে দেয়। এটি সে ‘অপরাধ হিসেবে’ দেখে না। এটি বরং সে স্বাভাবিক প্র্যাকটিস হিসেবেই গণনা করে। ‘নারীকে একটু জোর করতেই হয়!’ সবচাইতে বেশি সে রিল্যাক্স ফিল করে নারীকে জোর করে। সে জানে এটি ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য নয়। এর জন্য তাকে কোনো বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। তাকে কোনো মুল্য দিতে হবে না। আর তার কারণ সে পুরুষ। জন্মগতভাবে সে এখানে ক্ষমতাকে ধারন করেছে। তাই সে জোর খাটিয়ে পেতে পারে বলে বিশ্বাস করে।
আর নারীর গল্প আক্রান্ত এক হরিণীর গল্প। এমন একজন নারী এক জীবনে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জীবনে কোনো না কোনো মুহূর্তে আক্রান্ত বোধ করেনি। এই আক্রান্ত অবস্থান নারীর জীবনে এমনভাবে স্থায়ী হয়ে গেছে যে কোনদিন আর আক্রান্ত হওয়া ছাড়া কোনো রূপে নিজেকে কল্পনা করতে পারেনি। কল্পনা করতে দেওয়া হয়নি। এমন কি দাম্পত্য জীবনে একজন নারীর জীবন শুরু হয় আক্রান্ত ভুমিকায়। তার গোটা যৌনজীবনে তার রোলটি থাকে আক্রান্ত রোলে।
সমগ্র ধারণাটিতেই রোপণ করা হয় পুরুষ থাকবে আক্রমণকারী আর নারী থাকবে আক্রান্ত। এ মডেল থেকে এমন কি নারীও বের হয়ে আসতে পারেনি। সেক্সুয়াল সম্পর্কে সে থাকবে ব্রীড়ায় অবনত। বনের হরিণীর মতো সে কাঁপবে। ‘না’ ‘না’ করবে। ব্রীড়ায় চুরচুর করে ভেঙে পড়বে। তখন পুরুষটি জোর করবে। ইনিশিয়েটিভ থাকবে পুরুষটির। পুরুষটি তার উপর উপগত হবে। আর নারী মনে করবে তার উপর যা ঘটছে তাতে যদি কিছু আনন্দের ঘটনা থাকে সেটি অনুভব করাও পাপ হবে। নারী যৌন সুখ পেয়েছে এ স্বীকারোক্তি নারীর অপরাধ। নির্লজ্জতার পাহাড়। নারীর জীবনে সেক্স, যেন বিষয়টি ঘটে যাক গোপনে। সে টের পেলেও যেন এক নির্লজ্জতার চুড়ান্ত হবে। ‘অবদমন’ কতটা সার্থক হয়ে উঠলে একজন নারীর জীবনে সেক্সের রোল এমন ভয়ানক হয়ে ওঠে? যেখানে নারী থাকবে আক্রান্ত ভুমিকায় আর পুরুষ থাকবে আক্রমণকারী। কিভাবে ব্রীড়ার নামে নারীর ভুমিকা আক্রান্ত হিসেবে আদর্শায়িত করে ফেলা হয়েছে। যেখানে যৌন আনন্দকে উপভোগ তার পাপ বোধের সমান করে তোলা হয়েছে।
অথচ এর সবটাই মানসিক, জৈবিক নয়। প্রকৃতপক্ষে নারীর রয়েছে চমৎকার যৌন আনন্দ উপভোগের ক্ষমতা। নারীরই রয়েছে মাল্টিপল ইউনিক যৌন আনন্দের ক্ষমতা। সেগুলো নিয়েই তাদের থাকতে হয় প্যাসিভ। যৌন ক্ষমতায় যে পুরুষ নারীর কাছে ইনফিরিয়র সে পুরুষের কাছে নারীকে ভিক্টিম থাকতে হয়।
একদিকে লজ্জা সঙ্কোচ ব্রীড়ার মূল্যবোধ আরোপ করে নারীকে তার যৌন জীবনে প্যাসিভ করে রাখা হয় অন্যদিকে পুরুষকে যৌন জীবনের একমাত্র খেলোয়াড়ে রূপ দিয়ে তার আক্রমণাত্বক রোলকে মুখ্য করে তোলা হয়। এ যৌন জীবনের মডেল কিভাবে একটি ব্যাল্যান্সড হারমনিপূর্ণ যৌন জীবন দিতে সক্ষম হবে? এখানে কি সেই প্রিমিটিভ আক্রমানত্বক সহিংস পুরুষ রোলটিকেই পুজা করা হয় না? তাহলে আমরা কিভাবে বলতে পারি আমাদের সমাজই ধর্ষকামকে জিইয়ে রাখেনি? সেখানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই যে আক্রমণাত্বক সেক্সুয়াল বিহ্যাভিয়ার, আক্রমণ, সহিংসতা সেটা আসলে কি কোনো কাকতালীয় বিষয়?