বর্তমান
এই যে দেখছো এখন এই নাব্যতাময়ী নদী
সে ছিলো এক তীর্থগামী ছোট একদলের পদচিহ্নের গতি।
তখন সেই যে পথ, নিঝুম পারাপার
সে ছিলো এক সটান সুঠাম তিন পাহাড়ের হাড়।
তখনকার সেই শক্ত সবুজ মজ্জা
সে ছিলো আসলে সাগর ধাতবে স্নায়ুর উড়ন্ত সব শয্যা।
তখন যে সেই রিফূকরা আর প্রজাপতি আঁকা পাল
সে ছিলো আমাদের পিঠে ঘাঁওলা
পূর্ব পুরুষের আত্মাহুতির কাল।
তখন যে আলোর আত্মা, সেকালের শ্রেষ্ঠ ফল
সে ছিলো নগর বাহিরে বসবাসকারী
গুনীনের তীরে বিদ্ধ নারীর জরায়ূ জল।
সে জল থেকেই সাহসী মুনিয়া, আর এই বিস্মরণের নদী
যা’তে আজও ভেসে যায় নাগাল ছাড়িয়ে রৌদ্রপিন্ডের প্রীতি।।
দাগী
দন্ডপ্রাপ্ত দাগীর মতো
ভিন্ন সিথানে শুয়েও
ভিন দেশে চম্কে উঠছি
বিবিধ বাংলাদেশ সময়ে
বার বার।
দারুন এক অভ্যাসের দায়ে
কেঁপে কেঁপে
কান থেকে গহনা ছুঁড়ে ফেলে
কিছু নির্ধারিত বাংলাদেশ সময়ে ও তারিখে
ক্ষণে ক্ষণে রক্ত চাবুকে
ছল্কে দিচ্ছি প্রাণ।
যেনো নিয়মিত পেন্ডুলাম এ দেহের
সারারাত ধরে করে যাচ্ছে এপাশ ওপাশ।।
প্রথম গানের দ্বিতীয় পৃষ্ঠা
বুকে গেঁড়ে আছি
অসম্ভব অন্যায়ের মধ্যেই
ইত্যাদির ইতি অক্ষর
বসে আছি প্রত্যূষেই
দেশের ভূগোল বাইরে
দন্ডপ্রাপ্ত জাতিস্বর।
সূর্য কূটোতেই নেচে উঠে গা
সবুজ মৃদঙ্গে পড়ে যায় পা
জন্মগ্রস্থ নালন্দা নোঙর
আমি মোমরূজপুর কৃষাণী
রাগী মনু গাঙ
জলডোবা শিলচর।
অমাবশ্যাতো আর বাজছে না
এইসব এন্তার অস্থি মজ্জায়
যা ছিলো ছোট ছোট বঞ্চনা
পাসপোর্টের কোনায় কোনায়
তাও আর রক্তে ভিজছে না।
যতদূর যাওয়া যায় এসেছি
ভূগোলের তার ছিঁড়ে
গেঁথে আছি অনিবার্য আকাঙ্খা
বেজে উঠবো ফিরে
বার বার একাত্তর বার
বাংলাদেশের কো্নো না কোনো মীড়ে।।
ডার্লিংটনে সকাল
আকাশ থেকে আলোর মোরগ ডেকে উঠেছে
এক্ষুনি রাত্রির হুইস্পারগুলো হুইসেল হয়ে যাবে
চোখের পাতায় বসা ঘুম জেগে উঠে জুতো পরে
হয়ে যাবে প্রবল পরাক্রমশালী পরাগ
ঝুলে পড়বে পিঠে
পিঠের পর দেহের গিটে গিটে
গিট থেকে সম্বিতে সম্বিতে।
অন্যদিকে সেই বহুদিনের মত
মেঘ ডেকে আলো উঠতে থাকবে
জল থেকে উঠে আসবে গাছের এভিন্যূ
হ্যালোজেন রোদ বলবে হ্যালো!
আমি চলতে থাকবো কাহ্নু কবির মতো
উঁচা উঁচা পাহাড় পেরুবার জন্য
চলতেই থাকবো
যতক্ষণ বরাদ্দ আলো থাকবে
যতক্ষণ সে আলোয় দেখতে পাবো
যতক্ষণ পবন থেকে বৈঠা চালিয়ে যেতে পারবো
যতক্ষণ শবরীর মত কবিতা ঠিক্রে উঠবো
যতক্ষণ প্রেমে আবদ্ধ থাকবো
যতক্ষ্ণ ঠক ঠক করে কাঁপবো।।
ফলোস্বরা
লন্ডন নগরে
এ ভরা বায়ুর বাগানে
বসে আছি শিথিল
শৈত্যে লিমেরিকে অন্ত্যমিলে
দেহখানি ঝুলে আছে দেশে
পলি আর নুনে।
আপেলের গ্রামে ঝলিতেছি
প্রমত্ত জল ঘষে ঘষে
শ’য়ে শ’য়ে গলিয়ে পাথর
স্থির হয়ে এ পুরাণ বাগানে
সেই থেকে মেঘের উপর
দেহগত নুনে আর পলির ফাগুনে।
এখানেও দাগ আঁকিয়াছি
ছায়া নিঃশেষ করে
খয়েরী খয়েরী শিশু আগমণে
অনাবাসী অভ্যাস আস্তরে
রক্তদুঃখে অবিমিশ্র পলির কারণে
কৃষ্টিভেজা এ দু’খানা হাতে
এখনো সব্জী ফলে পিরানী কিরণে।।