বৈশালী রহমান

রিসার্চ এসিস্টেন্ট, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা।

সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে ঢাকায় এসে শত শত নারী জাকির তালুকদারদের খপ্পড়ে পড়েই হারাচ্ছে সর্বস্ব!

জনাব জাকির তালুকদার, আপনি কি জানেন, বাংলাদেশের লেখক এবং বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা এবং অধ:পতন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যদি কেউ কখনো গবেষণা করে, তবে আপনার একটি ফেসবুক পোস্ট সেখানে একটি উল্লেখযোগ্য রেফারেন্স হিসেবে গণ্য হবে? কী গর্বের বিষয় আপনার জন্য, তাই না?

আসুন, আপনার ফেসবুক পোস্টটি বিশ্লেষণ করি, 

১। আপনি প্রথমেই লিখেছেন, আপনি একটি কেইস স্টাডি দেখাবেন যেখানে কিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "না পড়ে সার্টিফিকেট পাওয়া" একটি তরুণী কিভাবে আপনার মতো মধ্যবয়সী পুরুষদের ফাঁদ পেতে হরিণের মতো শিকার করে। কিন্তু সেই একটি কেইস স্টাডি দিতে গিয়ে আপনি উল্লেখ করলেন, শত শত তরুণী প্রতিদিন মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে আপনার মতো সহজ সরল মধ্যবয়সী, নিতান্ত নিরীহ (লেজবিশিষ্ট বলবো কি?) পুরুষদের প্রেমের জালে আটকায় নিজেদের থাকা খাওয়া এবং হাতখরচের জন্য। জনাব, আপনি কি গণনায় অক্ষম? একটি কেইস স্টাডির কথা বলেই আবার পরমূহুর্তে শত শত নারীর কেইস নিয়ে আসলেন কিভাবে?

২। আপনি লিখেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি না পড়েই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। আপনি বা আপনার চৌদ্দগুষ্টির কেউ কি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, বা না পড়ে কিভাবে সার্টিফিকেট পাওয়া যায় সেই সংক্রান্ত খোঁজখবর বা পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে কি এই তত্ত্ব বের করেছেন? নাকি পুরাটাই "আউট অব দ্য এ্যাস"? বাই দ্য ওয়ে, আপনি আউট অব দ্য এ্যাস মানে জানেন তো? মানে হলো, কোনো বিষয়ে আদৌ কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া পশ্চাদ্দেশ দিয়ে বিষ্ঠার মতো তত্ত্ব হাজির করা। অনেকটা আপনার অতীতের সেই "পাকা পায়খানা" তত্ত্বের মতো। যাহোক, এরকম না পড়ে ভালো রেজাল্টের সার্টিফিকেট নিয়ে যারা বের হয়েছে তাদের খোঁজ দিয়েন, আমরাও একটু দেখি। ভালো রেজাল্ট কথাটা ইচ্ছা করে উল্লেখ করলাম। কারণ, না পড়ে থার্ড ক্লাস রেজাল্ট নিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সার্টিফিকেট পাওয়া সম্ভব। শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়।

৩। আপনি উল্লেখ করেছেন, "শত শত মেয়েরা" নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে না পড়ে বিসিএস এ না টিকে আপনার এবং আপনার মধ্যবয়সী দালালগুলার মতো নিরীহ নিষ্পাপ প্রাণীগুলোকে ফাঁসায়। এইখানে দুইটা প্রশ্ন আছে জনাব, এক, আপনি কি মনে করেন যে বাংলাদেশে বিসিএস ছাড়া আর কোনো চাকরি নাই? শত শত মেয়েরা শুধু বিসিএস এর জন্য লাইন দেয় এবং ব্যর্থ হয়ে আপনাদের মতো অজ অথর্ব বদমাইশদের টাকাপয়সা হাতানোর চেষ্টা করে?

তাহলে এই যে কর্পোরেট সেক্টরে, ব্যাংকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা হাজার হাজার নারী কাজ করছে, এরা কি আপনার মতো ইতর বদমাইশ চড়িয়ে তারপর এই পেশায় এসেছে? দুই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর ছেলেমেয়েরা বিসিএস এর প্রিলিতেও টিকে না, এরকম একটা স্থূল জেনারালাইজড মন্তব্য করার আগে আপনি অন্তত গত ত্রিশ বছরের বিসিএস পরীক্ষায় কতোজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেমেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে ব্যাপারে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছেন কি? নাকি এটাও "আউট অব দ্য এ্যাস" তথ্য?

৪। আপনার বয়সী একজন দামড়া পুরুষ যখন নিজের বউ বাচ্চা ফেলে অন্য একটি তরুণী মেয়ের মনোরঞ্জনের পিছে দৌড়ায়, তখন দোষটা বেশি কার? ২৪ বছরের সদ্য গ্র্যাজুয়েট মফস্বলের "খ্যাত" তরুণী মেয়েটির? নাকি আপনার মতো ৫৫ বছর বয়সী দামড়া পুরুষটির? যে নিজের বিবাহিত জীবনটার সুস্থতাও বজায় রাখতে অক্ষম? ফাঁদে ফেলা কার পক্ষে বেশি সম্ভব? জীবন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ তরুণীটির? নাকি দুনিয়া চড়ে খাওয়া, "শত শত নারী" নাড়াচাড়া করে সিজনড্ হয়ে যাওয়া অভিজ্ঞ, ধুরন্ধর পুরুষটির?

জ্বি না জনাব, আমাদের মফস্বলের মেয়েরা ঢাকায় আপনাদের মতো বৃদ্ধ শকুনদের ফাঁদে ফেলে ঘাড়ে চড়ে খাওয়ার জন্য আসে না। পারিবারিক বাধা-বিপত্তি, রাস্তাঘাটে যৌন নির্যাতন, অল্পবয়সে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি নামক কারাগারে বন্দী করার চাপ, এই সবকিছু অতিক্রম করে তারা আপনার শহরে আসে। বিসিএস প্রিলিতে পরীক্ষা দেয়, টিকলে সরকারী চাকরি করে, না টিকলে ব্যাংক জব, কর্পোরেট, অথবা আইএলটিএস জিআরই দিয়ে বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যায়। জ্বি জনাব, আপনার অন্ধ চোখে আপনি হয়তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া "না পড়ে সার্টিফিকেট" পাওয়া তরুণীদের ভালো চাকরি পেতে দেখেন না। আমরা দেখি, কারণ আমাদের তরুণ, সজীব চোখ আছে। এই তরুণীদের একাংশ জীবনের প্রচণ্ড যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে অনেক সময় আপনাদের মতো বৃদ্ধ শকুনের ফাঁদে পড়ে। কী করবে বলুন, জীবন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ এই তরুণীরা তো জানে না, বাড়িওয়ালা সিঙ্গেল নারী বলে নোংরা অপবাদ দিয়ে যখন রাস্তায় বের করে দেয়, তখন আপনাদের মতো মধ্যবয়স্ক, "জীবন সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা" আছে" এমন "প্রেমিকেরা" অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কোনো নোংরা গহ্বরে তাদের ফেলে দেবেন। জানলে হয়তো তারা আপনাদের ফাঁদে কখনোই পা দিতো না।

জনাব জাকির তালুকদার, পৃথিবীকে যতোটুকু বিষ্ঠা প্রদান করা দরকার, আপনি তা দিয়ে ফেলেছেন। এইবার অফ যান। আমরা নারীরা এমনিতেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে গিয়ে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে গিয়ে নানারকম শিকল ছিঁড়তে ছিঁড়তে ক্লান্ত। এরপর আপনাদের প্রদত্ত এইসব লেখার নামে গু সাফ করার ধৈর্যে আর কুলায় না আমাদের।

শত শত মফস্বলের নারীরা কিভাবে ঢাকা শহরে এসে জনাব জাকির তালুকদারের মতো মধ্যবয়স্ক নিষ্পাপ পুরুষদের ফাঁদে ফেলছে, এই সংক্রান্ত বিলাপের স্ক্রিনশটটি নীচে দেওয়া হলো। 

2326 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।