ভেঙে গেলে জোড়া যায় মন্দির মসজিদ, ভাঙা কাঁচ, ভাঙা মন যায় না,
রাম আছে শ্যাম আছে, কোরান ইসলাম আছে রক্তলোলুপ কিছু হায়না।
-জীবনমুখী গায়ক নচিকেতার ‘এই বেশ ভাল আছি’ গানটির কথা মনে পড়ে গেলো! গানের ১ম লাইনের বক্তব্য খুবই পরিষ্কার –
যেখানে পারস্পরিক সম্মানবোধ, শ্রদ্ধা কিংবা বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান নেই, সেখানে কোনো সম্পর্ক কিংবা ভালোবাসা থাকতে পারে না।
সেই কথাই বাস্তবে আরো একবার প্রমাণিত হলো –বাংলাদেশী বস্তাপচা ছবির তথাকথিত নাম্বার ওয়ান শাকিব খান অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স দিলেন। এমনই হওয়ার ছিলো, অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। দোষ কার? শাকিব খানের নাকি অপু বিশ্বাসের –এই নিয়ে আজকে নৈতিকতা ও যুক্তিনির্ভর কিছু বক্তব্য তুলে ধরবো।
প্রশ্নঃ শাকিব-অপু ডিভোর্সে মূল দোষ কার?
উত্তরঃ সুস্পষ্টভাবেই শাকিব খানের কেননা তিনি সকল সমস্যার সূচনাকারী। শাকিব খান অপু বিশ্বাসকে ৯ বছর আগে গোপনে বিয়ে করে বছরের পর বছর সেটি গোপন রেখে স্ত্রীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করেছেন, তাকে গর্ভবতী করেছেন, সেই সময়ে স্বামী হিসেবে স্ত্রীর প্রতি কোনোই দায়িত্ব পালন করেন নি এবং শুধু এই অপরাধগুলো করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, এর পরেও তিনি গণমাধ্যমে সদম্ভে জানিয়েছেন যে সন্তানকে গ্রহণ করে নিলেও স্ত্রীকে তিনি গ্রহণ করবেন না যা তার চরম ঔদ্ধত্যকেই প্রকাশ করছে।
প্রশ্নঃ অপু বিশ্বাস মিডিয়াতে যেয়ে ভুল করেছেন –এমন বক্তব্য কী যৌক্তিক?
উত্তরঃ একদমই অযৌক্তিক। কেননা শাকিব খান যদি অপু বিশ্বাসকে গ্রহণই করতে না চান, তাহলে অপু বিশ্বাসের সামনে এই সম্পর্কের স্বীকৃতিপ্রাপ্তির জন্য আর কোনো পথই খোলা থাকে না। ৯ বছর দীর্ঘ সময়, ৯ বছরে যিনি স্ত্রী হিশেবে স্বীকৃতি পান নি, তিনি কখনোই স্বীকৃতি পেতেন না –এটা সুস্পষ্ট। ফলে নিতান্ত নিরুপায় হয়ে চরম অসহায়বোধ অনুভব করে অপু বিশ্বাস মিডিয়াতে এসেছেন এবং সুবিচার প্রত্যাশা করেছেন।
প্রশ্নঃ শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের এই ঘটনার পর থেকে অপু বিশ্বাস শবনম বুবলীকে বারবার আক্রমণ করেছেন কিংবা মিডিয়াতেও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে বেড়িয়েছেন – এজন্য কী অপু বিশ্বাসকে দোষ দেওয়া যায়?
উত্তরঃ এজন্য অবশ্যই অপু বিশ্বাসকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ, বিয়ে মানে কমিটমেন্ট এবং অপু বিশ্বাস শাকিব খানের বিয়ে করা স্ত্রী। ফলে, এই কমিটমেন্টের মাঝে ৩য় কারো অনুপ্রবেশ ঘটলে সেটা ‘পরকীয়া’ বা কমিটমেন্টের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন তথা অনৈতিক এবং অবৈধ।
পরকীয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য নয় কেননা এর জন্য পদে পদে মিথ্যে বলতে হয়, অনেক কিছু গোপন করতে হয়, সেই গোপন করা ও মিথ্যে বলা থেকে সন্দেহের বীজ ক্রমশ দানা বাঁধতে থাকে এবং ক্রমশ পরকীয়া স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে বিশ্বাসহীনতা, শ্রদ্ধাহীনতা তথা ধংসের পথে নিয়ে যায়। শাকিব খান ও শবনম বুবলীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরকীয়ার প্রতিই অঙ্গুলিহেলন করে যা অপু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সঙ্ঘটিত চরম একটি অন্যায়। ফলে, অপু বিশ্বাস সাইকোলজিক্যাল আপসেট তথা হতাশাবোধ থেকে মাঝে মাঝেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন, শাকিব খানের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা এবং শাকিবের ওপর স্ত্রী হিশেবে নিজের বৈধ অধিকার ফলাতে না পেরে শবনম বুবলীর ওপর ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছেন, মিডিয়াতে এই নিয়ে দুই লাইন বেশি বলে ফেলেছেন –এগুলো কোনোভাবেই অন্যায় নয়। কেননা, অপু বিশ্বাসের অবস্থান ন্যায্য অথচ ন্যায্য অবস্থান থেকেও শবনম বুবলী সব ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর অপু বিশ্বাসকে ৯ বছর ধরে স্বীকৃতিহীনতা এবং গত ১ বছরেরও বেশি ধরে গর্ভাবস্থা ও সন্তান লালনপালন করতে হচ্ছে –এমন অবস্থায় যে কোনো স্ত্রীর রাগ, ক্ষোভ, ঈর্ষা, দুই লাইন বেশি বলে ফেলা –খুবই স্বাভাবিক।
প্রশ্নঃ শাকিব খানের ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত কী সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া?
উত্তরঃ একদমই নয় বরং এটি অপু বিশ্বাসের মিডিয়ার শরণাপন্ন হওয়ার পরপরই সুপরিকল্পিতভাবে প্ল্যান করা। শাকিব খান সুচতুর এবং ধূর্ত প্রকৃতির বলেই তিনি ছলে বলে কৌশলে ৯ বছর অপু বিশ্বাসকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে ও মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বিয়ের ব্যাপারটি গোপন রাখতে সফল হয়েছিলেন। অপু বিশ্বাস মিডিয়ার শরণাপন্ন না হলে শাকিব খান এভাবেই বছরের পর বছর বিষয়টি আড়ালে রাখতেন। কিন্তু অপু বিশ্বাস মিডিয়াতে চলে আসায় শাকিব খান তার বিপক্ষে জনমত সৃষ্টি হবে, এর কারণে আইনী সমস্যায় পড়তে পারেন এবং নায়ক হিশেবে তার ইমেজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে –এই ভেবে তিনি সে সময় আমতা আমতা করে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বিষয়টি ম্যানেজ করেন, বিয়ের বিষয়টি মেনে নেন কিন্তু বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী সংসারে একসাথে যেভাবে থাকে, সেটি তিনি ইচ্ছে করেই থাকেন না। এর পেছনে ছিলো সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্য –স্বামীকে কাছে না পেয়ে অপু বিশ্বাস মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবেন, আবেগ, রাগ ও ঈর্ষা থেকে বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপ নেবেন, দু’লাইন বেশি বলে ফেলবেন, অসংলগ্ন আচরণ করবেন ইত্যাদি। শাকিব খান এটাই তো চেয়েছিলেন কেননা এমন হলে ক্রমশ অপু বিশ্বাস জনসমর্থন হারাবেন, চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সহানুভূতি হারাবেন, তার ন্যায্য অবস্থান অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে পড়বে যার ফলাফল হলো –শাকিব খানের পক্ষে অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স লেটার পাঠানোর পথে আর কোনো বাধা থাকবে না। অপু বিশ্বাস শাকিব খানের এই সুপরিকল্পিত ফাঁদেই একদম বোকার মত পা দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ অপুকে পাঠানো শাকিবের তালাকনামায় কী কী অভিযোগ আছে এবং সেগুলো কতটা যৌক্তিক?
উত্তরঃ নায়ক শাকিব খানের তালাকনামা মোতাবেক, তিনি মনে করেন তার স্ত্রী তার কথা মোতাবেক চলাফেরা করছেন না। ধর্মান্তরিত করে অপু বিশ্বাসকে বিয়ে করেন শাকিব খান। পরে নাম রাখা হয় অপু ইসলাম খান। শাকিব রূপালী জগতের মানুষ। এ জন্য চিন্তা করেছেন ধর্মান্তরিত হয়ে তার স্ত্রী ধর্ম-কর্ম করে সওয়াব অর্জন করবেন, মুসলিম রীতিনীতি মেনে চলবেন এবং গৃহিণী হয়ে থাকবেন। কিন্তু শাকিবের সে আশা পূরণ হলো না। এসব ঘটনার কারণেই নাকি শাকিব খান অপুকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তালাকনামায় শাকিব আরো অভিযোগ তোলেন, পুত্রসন্তান জয়কে বাড়িতে গৃহকর্মীর সঙ্গে তালাবন্ধ রেখে ‘ছেলেবন্ধুকে নিয়ে’ দেশের বাইরে যান অপু। ছেলেকে তালাবন্ধ করে রাখার খবর শুনেই অপুর বাসায় ছুটে যান তিনি। কিন্তু সন্তানকে উদ্ধার করতে না পেরে পরে থানায় জিডি করেন।
বাস্তবে, এগুলো সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ কেননা –
১) শাকিব খান নামেই শুধুমাত্র মুসলিম কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মুসলিম রীতিনীতির কিছুই মানেন না এবং বেশ ধর্মকর্ম করেন বলেও আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ মেলেনি। পক্ষান্তরে অপু বিশ্বাস পত্রিকায় ধর্মকর্ম মানার স্টেটমেন্ট পর্যন্ত দিয়েছেন এবং তাকে মাথায় কাপড় দেওয়া অবস্থায়ও একাধিকবার দেখা গেছে। প্রশ্ন জাগে, শাকিব খান ফিল্মে যেভাবে নায়িকাদের সঙ্গে ঢলাঢলি করেন, ওগুলো মুসলিম রীতিনীতি? নিজেই মুসলিম রীতিনীতির কানাকড়িও অনুসরণ করেন না অথচ অপু বিশ্বাসকে ধর্মান্তরিত তথা জোর করে ইসলামের রীতিনীতি মানাতে হবে? হিপোক্রিসি আর কাকে বলে!
২) ছেলেবন্ধুকে নিয়ে এবং গৃহকর্মীর সঙ্গে ছেলেকে বাড়িতে তালাবন্ধ রাখার অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যে। যেই মা ১০ মাস ১০ দিন গর্ভধারণ করে শত অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও সন্তান জন্ম দেন এবং সেই সন্তানকে নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল পর্যন্ত আসতে পারেন সন্তানের বাবার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য, সেই মা কখনোই ছেলেকে বাড়িতে তালাবন্ধ রাখতে পারেন না।
৩) পুরুষবন্ধুকে সাথে নিয়ে বিদেশ গমন – এটাও চরম মিথ্যে একটি অভিযোগ তথা শাকিব খানের ধূর্ত ও কুরুচিপূর্ণ মানসিকতারই প্রকাশ। আসলে নিজের দুর্বল অবস্থানকে ঢাকার জন্য শাকিব খানকে কিছু অভিযোগ উপস্থাপন করতে হতো, তাই তিনি যা যা পেরেছেন অভিযোগে তা তা লাগিয়েছেন। এছাড়া, শাকিব খানের কী নারীবন্ধু নেই? শবনম বুবলীর সঙ্গে তার কিসের এত দহরম মহরম? বিবাহিত অবস্থায়ও শাকিব খানের নারীদের সঙ্গে দহরম মহরম কোনো অন্যায় নয় অথচ অপু বিশ্বাসের পুরুষবন্ধু থাকলেই সেটা চরম অন্যায় –হিপোক্রিসি বা স্ববিরোধিতার চূড়ান্ত নমুনা।
প্রশ্নঃ শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ হলে সন্তান আব্রাহাম খান জয়ের কার কাছে থাকা উচিত?
উত্তরঃ যৌক্তিক প্রেক্ষাপট থেকে সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার সবচেয়ে বেশি হলেও আমার ব্যক্তিগত অভিমত- সন্তানের দায়িত্ব শাকিব খানের, কোনভাবেই অপু বিশ্বাসের নয়। কারণ –
১) অপু বিশ্বাস শাকিব খানকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা পান নি। এই সন্তানের কারণে অপু বিশ্বাস গর্ভধারণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় পড়েছেন, স্থূলত্ব এসেছে শরীরে যার কারণে তিনি অভিনয়ে ফিরতে পারছেন না বা বেগ পেতে হচ্ছে। সন্তান ডেলিভারির পরে একজন নারীকে গর্ভাবস্থার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগে। এই সন্তানের কারণে অপু বিশ্বাস বিভিন্নভাবে পেশাগত সমস্যায় উপনীত হবেন। যেহেতু বিয়েই টিকলো না, ফলে শাকিব খানের অন্যায়ের ফসল অপু বিশ্বাস কোনো যুক্তিতেই লালন পালন করে যেতে পারেন না। বিয়ে করা, মা হওয়া কিংবা সংসারধর্ম পালন করাই নারীজীবনের একমাত্র লক্ষ্য –এমন ধারণা মধ্যযুগীয় ও অসমর্থনযোগ্য। এসব ভুলভাল ধারণা বছরের পর বছর নারীদের মাথায় ঢুকিয়ে নারীদেরকে লোভী ও স্বেচ্ছাচারী পুরুষজাতি ভোগ্যপণ্য ও দাসীবান্দী করে রেখেছে।
২) অপু বিশ্বাস ১ বছরেরও দীর্ঘ সময় গর্ভাবস্থা ও সন্তান লালন পালনের কষ্ট ভোগ করে গেছেন, এবার শাকিব খানের পালা। শাকিব খানকে পদে পদে উপলব্ধি করানো উচিত যে একজন নারী গর্ভাবস্থায় কতটা দুর্বিষহ সময় যাপন করে। শাকিব খান লালন পালন করে দেখুন তো – বাচ্চা লালনপালন করা চাট্টিখানি কাজ কী না? শাকিব খান অপু বিশ্বাসকে যে কষ্ট দিয়েছেন, যন্ত্রণা দিয়েছেন তা অপূরণীয়। তাই সন্তান লালনপালনের মধ্যমে এই কষ্টের ছিটেফোঁটা শাকিব খানেরও পাওয়াটা -ন্যায়সঙ্গত।
৩) অপু বিশ্বাসের আর্থিক উপার্জনের উৎস অভিনয়। ফলে, তিনি অভিনয় ছাড়লে কোনো না কোনো একটি সময় আর্থিক অস্বচ্ছলতায় উপনীত হবেন এবং বাংলাদেশে এমন উদাহরণ আছে যে একসময়ের নায়িকা পরবর্তীতে বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা যাত্রাপালা করেছেন কিংবা খুবই মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছেন। সন্তান অপুর কাছে থাকলে অপু বিশ্বাস অভিনয় মন লাগিয়ে করতে পারবেন না, সন্তানের প্রতি সবসময়ই একটি পিছুটান কাজ করবে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তার অভিনয়ে। খ্যাতিমান অভিনেত্রী জয়া আহসান ডিভোর্সের পরেও হতোদ্যম না হয়ে চলচ্চিত্রে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন এবং শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত থেকেও তার অসামান্য অভিনয় দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরষ্কার বয়ে এনেছেন। কই, জয়া আহসান কী খারাপ আছেন? বরং এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রাভিনেত্রী হিশেবে জয়া আহসানই বোদ্ধামহলে বহুল স্বীকৃত। অপু বিশ্বাসেরও উচিত জয়া আহসানের মতো সাহসিকতার সঙ্গে জীবনসংগ্রামের ২য় ইনিংস শুরু করা এবং জয়ী হওয়ার জন্য সামর্থ্যের শেষবিন্দু ঢেলে দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করা।
প্রশ্নঃ অপু বিশ্বাসের নামাজ-রোজা-হজ্ব করার সিদ্ধান্ত কী সঠিক?
উত্তরঃ একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত। অপু বিশ্বাস ক’দিন আগে বলেছিলেন, ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাকিবের সঙ্গে সংসার করতে চান। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অভিনয় ছেড়ে নামাজ, রোজা, হজ নিয়মিত আদায়ের পাশাপাশি স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করাটাই নাকি তার একমাত্র ইচ্ছে। সংসার জীবনে শাকিবের প্রতারণা, বুবলীর সঙ্গে শাকিবের পরকীয়া থেকে উদ্ভূত হতাশা ও অসহায়ত্ববোধ এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাথরুমে অপু বিশ্বাসের পড়ে যাওয়া ও সিজারের স্থানে ইন্টারনাল ব্লিডিং হওয়া অর্থাৎ অভিনয় করার ক্ষেত্রে সৃষ্ট অক্ষমতা -এসবের কারণে অশান্তিতে ভোগা অপু বিশ্বাস নামাজ-রোজা-হজ্বের মাধ্যমে এখন শান্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন। এসব করলে অপু বিশ্বাস প্রকারান্তরে নিজেকে নিজেই ঠকাবেন কেননা এতে তিনি অভিনয় জগত তথা নিজের পেশা থেকে হারিয়ে ক্রমশ বিস্মৃতির অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাবেন। তার আর্থিক উপার্জন ক্রমশ কমে আসবে, রূপ যৌবন বয়স চলে গেলে নায়িকাদের কেউই মনে রাখে না। হ্যা, আমাদের দেশের সঙ্কীর্ণ সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে অপু বিশ্বাসের পাশে যদি সামাজিক ও আর্থিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত একজন স্বামী থাকতেন, তাহলে অন্য কথা ছিলো। কিন্তু অপু বিশ্বাসের পাশে স্বামী নেই, সন্তান নিজের কাছে রাখলে ২য় বিয়ে করাও এতো সোজা হবে না, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অপুকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন আবার এক্স-হিন্দু, নায়িকা এবং স্বামীহীনা বলে মুসলিম সমাজের কাছেও তিনি বিশেষ কোনো সুবিধে পাবেন না – ফলে নামাজ-রোজা-হজ্ব কোনভাবেই অপু বিশ্বাসের জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না। অপু বিশ্বাসের উচিত এসব নামাজ-রোজা-হজ্বের ধ্বংসাত্মক চিন্তা বাদ দিয়ে কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়া এবং সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্থিতধী হয়ে পুনরায় চলচ্চিত্রের কাজে ফিরে আসা। জীবনের ২য় ইনিংসে অপু বিশ্বাসকে সস্তা ও বস্তাপচা বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র করলে চলবে না বরং জয়া আহসানের মতো বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে ভালো ভালো ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। এতে অপু বিশ্বাস তার হারানো সম্মান ও খ্যাতি ফিরে পেলেও পেতে পারেন কিন্তু নামাজ-রোজা-হজ্বে সেটা কোনোভাবেই সম্ভবপর হবে না।
এখন প্রশ্ন হলো, অপু বিশ্বাস কী করবেন? প্রচলিত সমাজব্যবস্থার কাছে আর দশজন সাধারণ নারীর মতোই অসহায় আত্মসমর্পণ করে নামাজ-রোজা-হজ্ব ধরবেন এবং বিস্মৃতির অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাবেন? নাকি পুরুষতান্ত্রিক এই উদ্ভট সমাজব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সংস্কৃতির চর্চায় পুনরায় নিজেকে নিবেদিত করে আবার নিজের হারানো সাম্রাজ্যকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করবেন? অপু বিশ্বাস, অনেক ভুল করেছেন, আর ভুল করবেন না। ওই নামাজ-রোজা-হজ্ব ধরলে ধার্মিক আমজনতা আপনার ওপর হয়তো খুশি হবে কিন্তু তারা আপনার জীবনের প্রয়োজনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না, কার্যকরী সমর্থনও দিতে পারবে না। মনে রাখবেন, খুশি হওয়া বা মৌখিক সমর্থন কোনো কাজে আসে না। পক্ষান্তরে যথাযথ সময় নিয়ে এবং আগের সকল ভুলত্রুটি কাটিয়ে পুনরায় চলচ্চিত্রে ফিরে এলে অন্তত চলচ্চিত্রসমাজ এবং দেশের শিক্ষিত, সচেতন বোদ্ধাসমাজের সমর্থন পাবেন –এরাই বিপদে আপদে আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে। তাই সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।