আমরা যা দেখি, যা শুনি তা সত্য নয়, আমাদের মনের মাঝে আসল সত্য লুকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে আমদের এমন কিছু দৃষ্টিগোচর হয় যে, তা আমাদের চেতনায় জল ঢেলে দেয়। তাই হঠাৎ করেই আমরা আমাদের স্মৃতির হার্ডডিস্কে জমা থাকা নানা ছবি অনস্ক্রিন হয়ে যায়। আমাদের নিয়ে যায় জীবনের দূর কোনো অতীতে যেন অন্য এক জগতে। কিন্তু পাশে দাড়িয়ে থেকেও অনেকেই তার কিছুই বুঝতে পারে না। অনুমান করে হয়তো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তেমনি ভাবনা থেকে বলছি, ‘কিছু কি ঘটতে যাচ্ছে সৌদি আরবে’? তাঁরা কী ইসলামের শুরুর যুগে ফিরে যাবে?
পত্রিকার একটি খবরে জানা গেলো যে, সৌদি আরবে নারী-পুরুষের মেলামেশার আইনে পরিবর্তন আনতে প্রস্তাব আনা হচ্ছে। এই প্রস্তাবে সৌদিতে নারী-পুরুষের মেলামেশায় আর কোনো বাধা থাকবে না। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণায় বলা হয়েছে আধুনিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে পরিবর্তনগুলো আনা হবে। সৌদি সরকার সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ২৩৬ পাতার একটি বিবৃতি ঘোষণা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে কিছু কট্টর নিয়মকানুন পরিবর্তনের কথা ভাবছে সরকার।
সৌদি আরবে দিনে পাঁচ বার নামাজ পড়ার সময়ে দোকানপাট, ক্যাফে, রেস্তরাঁ, এমনকি ওষুধের দোকানও বন্ধ রাখতে হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কেউ নামাজের সময়ে দোকান খোলা রাখলে, তা আর ‘অবৈধ’ হিসেবে গণ্য হবে না। সৌদি নারীরা খেলায় অংশ নিলেও তা এখন পর্যন্ত লোকচক্ষুর আড়ালে আয়োজন করা হতো। এখন থেকে প্রকাশ্যে মেয়েদের খেলার আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে এই বিবৃতিতে। কেনো? আগের বিধান কী তবে মন গড়া ছিলো! ইসলামী বিধান কি এতো সহজেই পরিবর্তন যোগ্য!
২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরবে পরিবর্তনের জোয়ার এসেছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমানের হাত ধরে দীর্ঘ ৩৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেশটিকে সিনেমাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফুটবল মাঠে দেখা যাচ্ছে নারীদের সরব উপস্থিতি। গাড়ি চালানোয় নারীদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে। মানে আগে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা কি ইসলামী শরিয়া মতো ছিল না!
এমন নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে আমাদের অনেকের মনে। জানি এই খবর শুনে আমাদের মধ্যে বরাবরের মতো কেউ বলছেন বরফ গলতে শুরু করেছে আবার কেউ বলছেন মিথ্যে তাসের ঘর ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। যারা ধর্মের প্রতি খুব দুর্বল কিন্তু উদার তাঁরা স্বীকার করছেন যে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এটা করতেই হচ্ছে সৌদি আরব সরকারকে। আবার আরেক দল যারা খুব কট্টর মুসলিম তাঁরা বলছেন সৌদি যুবরাজ ইহুদী নাসারার এজেন্ট, মুসলমানদের ধ্বংস করতে ইহুদী নাসারার এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে। কট্টররা অন্য সব আসমানী কেতাবকে কিন্তু মানেন না। এতে করে তাঁরা আমাদের এই বাংলাদেশের ‘তেতুল হুজুরের’ মতো মুতাহ বিয়ে করে বিভিন্ন ধর্মের যুবতী মেয়েদের সম্ভোগের সুযোগ নিতে পারেন। সুরা নিসা (Qoranic verse 4:24) নাকি এই ক্ষমতা তাঁদের দিয়েছে।
এই সুযোগে সুরা নিসায় কী বলা হয়েছে তা একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারি আমরা। আমাদের ধর্ম ইসলামের মহানবীর আমলেই কোরআনের সুরা আন নিসা অবতীর্ণ হয়। সেটাকে বলা হয় মক্কা বিজয়ের পরবর্তী সময়কালের ঘটনা। বিতর্ক আছে প্রেক্ষাপট নিয়ে, কারণ তখন সব কিছুই থাকতো মুখে মুখে, লিখিত নয়। কিন্তু সুরা নিসার প্রেক্ষাপটের আসল ঘটনা অনেক ব্যাপক। হযরত মোহাম্মদ যখন হিযরত করলেন তখন তাঁদের সাহাবী ও সাথীরা তাঁদের জৈবিক ক্ষুধা মিটানোর সুযোগের জন্য ইসলামের মহানবীর কাছে জোর আপীল করলেন। এ সময় সুরা নিসা নাজিল হয়।
সুরা নেছা ৪.২৪ এ কী আছে আমরা একটু দেখে নিইঃ “...এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতিত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য ইহা আল্লাহ্র বিধান। উল্লেখিত নারীগণ ব্যতিত অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হইলো, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। তাহাদের মধ্যে যাহাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করিয়াছ তাহাদের নির্ধারিত মাহোর নির্ধারণের পর কোনো বিষয়ে পরস্পর রাজী হইলে তাহাতে তোমাদের কোনো দোষ নাই। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”।
এর পরেই সবাই দলে দলে মুতাহ বিয়ে করা শুরু করলেন। কিন্তু মুসলিম মেয়ে তো নেই, তাহলে কী হবে! ইসলামের মহানবী বললেন কূমারী বা যুবতী হলেই হবে, ধর্ম সেখানে ধর্তব্য নয়। তবে যাকে বিয়ে করবে তার গর্ভে তোমার সন্তান এলে সে কিন্তু তোমার উত্তারাধিকার হয়ে যাবে। এই সমস্যা জেনেও মহানবীর সাথীরা মহাখুশি, পালে পালে কুমারী মেয়েদের খুঁজে বের করে মুতাহ বিয়ে শুরু করলেন। আজল প্রথার শুরু হলো, মুতাহ বিয়ের বউয়ের গর্ভে যাতে বাচ্চা না হয়। এক সময় দেখা গেলো ইসলামের চেয়ে মুতাহ বিয়ে নিয়েই সবাই মশগুল। মহানবীর সাথীরা ফেরেন না মহানবীর কাছে, তাঁদের সতর্ক করা হলো। তাতেও কাজ না হলে তিনি ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে মুতাহ বিয়ে করায় নিষেধ করলেন বলে কেউ কেউ দাবী করেন। এই কথা নাকি শুনেছেন মাত্র কয়েকজন তাই অধিকাংশই মুতাহ বিয়ের পক্ষে রয়ে গেলো। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মুতাহ বিয়ে করা যেতো সুরা নেসার ব্যাখ্যা দিয়ে, যেখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে হয়েছে। ‘তাহাদের মধ্যে যাহাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করিয়াছো তাহাদের নির্ধারিত মোহর নির্ধারণের পর কোনো বিষয়ে পরস্পর রাজী হইলে তাহাতে তোমাদের কোনো দোষ নাই’। এর অর্থ হলো তৎকালীন প্রেক্ষাপটে যেহেতু তখন মুসলিমের সংখ্যা খুব কম ছিলো তাই অন্য ধর্মের কুমারী মেয়েদের সাথে মুতাহ বিয়ে অর্থ ‘নির্ধারিত মোহর নির্ধারণের পর কোনো বিষয়ে পরস্পর রাজী হইলে তাহাতে তোমাদের কোনো দোষ নাই’। পয়সার বিনিমিয়ে যে মেয়ে কোনো পুরুষকে সম্ভোগ করতে দেয় তাঁকে বেশ্যা বলা কী সঙ্গত! মোটেই না। সে তার বৈধ স্ত্রী, খণ্ডকালীন স্ত্রী, মুতাহ বিয়ের মাধ্যমে।
আবার একটু পিছনে ফিরে দেখি, মহানবীর ওফাতের পরে হযরত আবু বকর এটা বন্ধের তেমন কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন বলে শোনা যায় নি। কিন্তু হযরত ওমরের আমলে তিনি বেকে বসলেন। বললেন যে, মহানবীর নিষেধ করা সত্বেও যারা মুতাহ বিয়ে করবে তাঁদের পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে। এতে মুস্লিমদের পক্ষে দুইভাগ খুব স্পষ্ট হয়ে গেলো। যারা মুতাহ বিয়ের পক্ষে তাঁরা হযরত ওমরকে কাফের আখ্যা দিলেন, বললেন কোরআনে যা আছে তার চেয়ে হাদিস বড় না, আর ঐ হাদিস সহি কী না তাতেও সন্দেহ আছে।
মুতাহ বিয়ের পক্ষে আছেন অনেক বড় বড় আলেম। তাঁদের অধিকাংশই শিয়া মুসলিম নামে পরিচিত আমাদের কাছে। কিন্তু সুন্নীদের মাঝেও এঁদের সংখ্যা কম নয় তা আমরা তেতুল হুজুরের কথা শুনলেই বুঝতে পারি। ইউরোপ, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে শিয়া সুন্নী উভয়েই এই মুতাহ বিয়ের পক্ষে। এটাকে তাঁরা তাঁদের জৈবিক চাহিদা পুরণের সাথে নাগরিকত্ব পাবার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করে। কারণ ইস্লামে ৪ টা পর্যন্ত বিয়ে করা যায় এমন অনেক লিখিত প্রমাণ হাজির করা কঠিন কাজ নয়, সেটা দেখিয়েই মুতাহ বিয়ে জাযেজ করা হচ্ছে। বিয়ের আগে আনা হচ্ছে পবিত্র কোরআনের সুরা নিসাকে, ব্যাখ্যাসহ। বিবিসি এটা নিয়ে একটা ডকুমেন্টারিও প্রচার করেছিলো কিছুদিন আগে। অনেক রিসার্চ ইন্সটিউট ও এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করছে।
বিবিসি ডকুমেন্টারি
শিক্ষা প্রতিটি মানুষের ব্রেইনের মধ্যে থাকা এনালিটিক্যাল ফ্যালাক্টি ডেভলপ করে। মানুষ ভালো মন্দ, ন্যায় অন্যায় এসব বুঝতে পারে। কিছু মানুষ জেনেটিক কারণেই আর পারিবারিক পরিবেশের কারণে বংশ পরম্পরায় গোড়া ধার্মিক হয়ে থাকে, তাঁদের বদলানো যায় না। ধর্মের জন্য তাঁরা জীবন দানেও পিছপা হন না। তাই তো সারা দুনিয়ার মুসলিম টিনএজ ছেলেদের যুদ্ধে আর মেয়েদের একাংশকে আইএস এ সেবাদাসী হতে দেখা যায়, কারণ তাঁদের মগজ ধোলাই সহজ। পারিবারিক বা জেনেটিক কারণ না থাকলে শিক্ষিত মানুষের ব্রেইন ধোলাই খুব সহজ নয় তাই তো ‘তেতুল হুজুরেরা’ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে চান। যাতে মানুষ, বিশেষ করে মেয়েরা শিক্ষিত হতে না পারেন। কারণ শিক্ষিত হলেই তাঁরা ফাঁকি বুঝে ফেলবেন, তাঁদের আর মুতাহ বিয়ের শিকারে পরিণত করা যাবে না, মানুষরূপী দানবদের সেবাদাসী হিসেবে পাঠানো যাবে না।
আর মুতাহ বিয়ে যদি ইসলামের (‘ইহা আল্লাহ্র বিধান’) বিধান হয় তাহলে মুসলিম বা অন্য কোনো ধর্মের মেয়েদের সাথে মুতাহ বিয়ে করে টাকার বিনিময়ে সম্ভোগ করতে যে সব মুসলিমরা যাচ্ছেন তাঁরা বা তাঁদের ধর্মের বা ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা যে সব মেয়েকে টাকার বিনিময়ে সম্ভোগ করছেন, তাঁদের ‘বেশ্যা’ বলার অধিকার কেউ রাখে না। এই নিরিখে বা বিচারে আমাদের বর্তমান সমাজেও যারা আদিম পেশায় নিয়োজিত কোনো মেয়েকে ‘বেশ্যা’ বলা পুরাই ইসলাম বিরোধী, তা কি পবিত্র কোরআনের অবমাননা নয়?
সনাতন ধর্ম মতেঃ স্বামী ভিন্ন অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌনসম্মিলন কিন্তু সব ক্ষেত্রে অসতীত্বের কারণ হয়ে উঠে নি। পুরুষতন্ত্রের একদল প্রতিনিধি স্বামীর মত নিয়ে পরপুরুষের সংসর্গকে নিষিদ্ধও করে নি। তারা বলেন স্বামীর ইচ্ছা পালনই সতিত্ব। স্বামী চাইলে হাজার পুরুষের মিলনেও কোনো দোষ নয়। শুধু স্ত্রীর ইচ্ছে অনিচ্ছাটুকু ধর্তব্যে আসবে না। মহাভরতে-এ বর্ণিত পান্ডু তার স্ত্রী কুন্তি ও মাদ্রীকে দেবতার সংসর্গের নির্দেশ দেন নিজের দৈহিক অক্ষমতার কারণে। স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন-
“ধর্মজ্ঞেরা ইহাই ধর্ম বলিয়া জানেন যে, প্রত্যেক ঋতুকালে স্ত্রী স্বামীকে অতিক্রম করিবে না। অবশিষ্ট অন্যান্য সময়ে সে স্বেচ্ছাচারী হতে পারে।”
সংস্কৃত শাস্ত্রে বলা হয়েছে এরকম--স্ত্রীগণ স্বভাব পবিত্র। কোনো কিছুতেই তারা দুষিত হয় না। ঋতুর পূনরাবির্ভাবেই, ব্যাভিচার দোষ কেটে যায়। সেই একই কথা, স্বামী ভিন্ন অন্য কারো সঙ্গে যৌনসংঙ্গমে নারী অসতী হয় না। অসতী হয় পরপুরুষের সন্তান ধারণ করলে।
অসতী প্রসঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় পন্ডিত যজ্ঞাবল্ক্য মুনির উক্তি আরো পরিস্কার করেছে। তিনি বলেছেন যে,
“স্ত্রী ন দুষ্যতি জারেণ নাগ্নির্দহ নকর্মণা।
না পো মূত্রপারিষাভ্যাং ন দ্বিজ বেদকর্ণনা।”
বাংলায় এর অর্থ দাড়ায়-অগ্নি যেমন দাহন কার্যে দুষ্ট হয় না, মলমূত্রের স্পর্শে যেমন দুষ্ট হয় না জল। তেমনি নারীর কোনো দোষ হয় না। এই নিরিখে যজ্ঞবাল্ক্য মুনিকে প্রচিন ভারতের ‘নারীবাদী ঋষি বলা যেতে পারে। সম্ভবত তিনিই এক মাত্র ব্যাক্তি যিনি নারীর যৌন স্বাধীনতাকে স্বীকার করেছেন তত্ত্বের ভিত্তিতে।
তাই, ইসলাম ধর্মে বা সনাতন বা হিন্ধু ধর্ম মতে আমরা বহুগামী কোনো নারীকে ধর্মমতে বেশ্যা বলে সমাজে চরম হেয় করতে পারি কি?