সানজিদা রোমান

লেখক একজন প্রবাসী

একা থাকা নারীর চরিত্র হাতের তুড়িতে নিলামে উঠানো যায়!

লোকটার বয়স পঞ্চাশের মতো। পারিবারিক বন্ধু। লন্ডন - ঢাকা যাতায়াত ছিলো। পরিবার নিয়ে বাসায় এসেছে, আপ্যায়ন করেছি যথাসাধ্য। ঢাকায় গেলে আপ্যায়ন পেয়েছিও।

আমার ডিভোর্সের পর থেকে ভাইবারে মেসেজ আসা শুরু হলো হাই হ্যালো দিয়ে। আস্তে আস্তে শুরু হলো উনার দাম্পত্য অশান্তির বর্ণনা। যা হয় আরকি! তবুও ফান হিসেবে নিয়ে তেমন বিগ ডিয়েল না বানিয়ে সহজ থাকলাম। মাঝেমাঝে টিপস দিতাম বউয়ের মন খুশী করার। এর মধ্যে বহুবার সতর্ক করেছি - আমার সাথে লুকিয়ে কথা বলেন, আপনার বউ জানলে কষ্ট পাবে।উনি বন্ধুসুলভভাবে অনেককিছু শেয়ার করতেন। ব্যবসার কাজে (!) বিদেশে বিভিন্ন ট্রিপে গিয়েও ফোন করতেন। অফিসে না থাকলে ধরতাম। কেনো ধরতাম! নিতান্তই পারিবারিক বন্ধু হিসেবে।

তবে উনি যে খোঁচাটা প্রায়ই আমাকে দিতেন তা হলো - আপনি মুখেই আধুনিক! কাজে নয়। হাসতাম - ভাইরে আমি এমনই। কিছু করার নেই। জোর করে তো আর নিজেকে বদলানো যায় না।

একদিন উনি মোবাইল আনলক রেখে বাথরুমে গেলে উনার বউ আমার কাছে পাঠানো মেসেজ দেখে। দুই লাইন মেসেজে তেমন কিছু ছিলো না কারণ উনি মেসেজ সবসময় ডিলিট করে ফেলেন। তবুও বউয়ের সন্দেহ হয়েছে "আমাকে লুকিয়ে অন্যের সাথে যোগাযোগ কেনো!"

যা ঘটার তাই ঘটলো, ঝামেলা বাঁধলো। উনি উনার বউকে তখন বলেছিলেন - দেখো, সে প্রায়ই আমাকে নক করে। আমার সময় নেই তাকে দেয়ার। বেচারি একা মানুষ আর কাছের মানুষ তাই একটু কথাবার্তা চালিয়ে যাই ভদ্রতাবশত। ডিভোর্সি নারীরা এরকম পাগল টাইপ হয়।

উনি পেরেছিলেন উনার বউকে বুঝাতে। আমিই কতটা পাগল হয়েছি উনার জন্য! উনার টাকা আছে। টাকা থাকলে শুধু সে কেনো, ঐশ্বরিয়াও নাকি বেডে আসতে চায়!

পয়সাওয়ালা কিছু মানুষ পৃথিবীর অন্য সবাইকে গরীব মনে করে। আমার চোখে আমার যে শুধু যথেষ্টই নয় তারচেয়ে বেশী আছে সেটার মর্ম তাদের মতো অন্ধ মানুষদের বুঝার কথা নয়।ঘৃনায় রাগে উনাকে এবং উনার বউকে আমার জীবন থেকে শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলে দিয়েছি। ভাইবারের মেসেজগুলি সব ছিলো আমার কাছে। ডিলিট করে ফেলেছিলাম। আজ নতুন ফোনে ডাটা সেট-আপ দিতে গিয়ে ক্লাউড থেকে সব নামানোর সময় আবার চোখে পড়লো।

অদ্ভুত আমাদের সমাজ! একা থাকা নারীর চরিত্র হাতের তুড়িতে নিলামে উঠানো যায়! তাই সমাজ ছাড়াই থাকি ঘর, কাজ আর পড়াশুনা নিয়ে। ভালোই তো আছি।

পশ্চিমাদের আমরা পছন্দ করি না অথচ এই পশ্চিমা সমাজ কখনো কোনোদিন আমাকে নারী বলে অসহায় বোধ করায় নি, একা বলে চরিত্র মাপে নি। আমি এবং আমার সন্তানেরা দাপটের সাথেই মানুষ হয়ে থাকি এখানে।

3711 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।