সালমা লুনা

ফিজিক্স আর পলিটিক্যাল সাইন্সে মাস্টার্স করেছেন। লেখালিখি করেন শখে। দায়বদ্ধতা অনুভব করেন নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলায়। হোপ সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি এনজিওর প্রেসিডেন্ট তিনি।

আমি চাই #MeToo থেমে না যাক

কেউ মিটু হ্যাশট্যাগ দিয়ে নিজের সাথে ঘটা যৌন নিপীড়নের কাহিনী প্রকাশ করলে তাকে সমর্থন দিতে হলে আমারও একটা মি টু থাকতে হবে -এটা জরুরী না। আমাকেও একই রকম নিগ্রহের একটি কাহিনী বলতে হবে, তা না হলে আমি কাউকে সাহস দিতে পারবো না তার নিগৃহীত হবার কাহিনীটি প্রকাশ করতে, এটিও ঠিক নয়।

আবার কারো এইরকম একটি কাহিনী থাকলে সেটি তাকে প্রকাশ করতেই হবে তা না হলে তার নীতিগত অধিকারই থাকে না অন্যকে ঘটনা প্রকাশ করতে বলার সেটাও আবশ্যক না। সবাই সবকিছু পারবেই বা তাকে পারতেই হবে এমন তো নয়।

এখন সবচেয়ে জরুরী যা পারতে হবে, করতে হবে, তা হলো মিটু'র মতো ঘটনা প্রকাশকারী মানুষটির পাশে থাকা। তাকে বিশ্বাস করা। যতোদিন পরেই তিনি তার সাথে ঘটা যৌন নিগ্রহের ঘটনাটি প্রকাশ করুন না কেনো তা নিয়ে অহেতুক কোনো কুতর্ক না করা অথবা কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করা। এটাই এই মুহুর্তে অতি জরুরী।

ক'দিন ধরে দেখছি মিটু নিয়ে ফান পোস্ট বা ট্রল চালু হয়েছে। কী করে পারছে মানুষগুলো কে জানে! যার যা ইচ্ছা করুক। মিটুর ফোকাস যেন সরে না যায়।

আমাদেরকে বুঝতে হবে এটা একটা যুদ্ধ। অন্ধকার থেকে নারীর আলোয় আসার যুদ্ধ। ভবিষ্যতের নরনারী উভয়ের জন্য নিরাপদ দেশ, একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরির যুদ্ধ। আমাদের অতিপ্রিয় আপনজনদের জন্য একটি মসৃন চলার পথ তৈরির প্রাক-প্রস্তুতি এটি।

প্রিয়তি, সীমন্তি, হুসনা, শিশির কিংবা মুক্তিরা এই পথ তৈরি করতে এগিয়ে এসেছে। আমাদের কর্তব্য এখন তাদের পাশে থাকা। তাদের সাপোর্ট দিয়ে এমন একটি বাতাবরণ তৈরি করা যাতে তারা যাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে সেই রফিকুল, প্রণব, জামিল, বিজু এবং মাহিদুলরা যেনো কোনো ধরনের অবৈধ ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে অন্যায়ভাবে তাদের কোনঠাসা করতে না পারে।

তারা আইনের আশ্রয় নিক অথবা নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে কৌশলী হোক, যাই হোক না কেন শুধু খেয়াল রাখা দরকার যেন এই নারীরা পাবলিক শেইমিং এর শিকার না হয়। তারা যেন এই নপুংসক সমাজের রোষানলে না পড়ে এবং ভবিষ্যতের আরো অনেক নারী যারাই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান, তাদের পথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। তারা যেনো নিপীড়কের মুখোশ খুলে দিতে পারেন সেই পথটি তৈরির জন্যই সকলের সতর্ক থাকা উচিৎ।

যারা যৌন নিপীড়নকারী তাদেরই একলা থাকার কথা। ভিকটিম কেন একলা হয়ে যাবে? কেন আমাদের মধ্যে এই ভয় যে নিপীড়নকারীর পাশেই বন্ধু থাকবে, ক্ষমতাবানরা থাকবে? এমনকী রাষ্ট্রও তাদের পাশেই দাঁড়াবে বা দাঁড়াতে পারে? এ কী মনুষ্যত্বের পরাজয় নয়! এ তো অশুভ শক্তির জয়। আজকে শুধু জনাকয়েকের নাম এসেছে যৌন নিপীড়কের তালিকায়। এই মিছিল কি এখানেই শেষ? নিশ্চয়ই নয় । এই মিছিল বেশ লম্বা।

এইসব নিপীড়কের মিছিলই যদি লম্বা হয় তবে ভিকটিম বা নিগৃহীত মানুষের মিছিল কতটা লম্বা হতে পারে অনুমান করলে শিউরে উঠতে হয়। কারণ এইসব নিপীড়ক তো শুধু এই ক'জনকে পীড়ন করেই ক্ষান্ত হয়নি। এদের আগে পিছে আরো অনেক নারীই আছেন নিশ্চয়ই। তারা হয়তো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন। নিরাপত্তা পেলে তারাও মিটু বলে একযোগে চেঁচিয়ে উঠবেন এদের বিরুদ্ধে।

যত যাই হোক যে যতই নিপীড়কের পক্ষ নিক সকলেই সত্যিকারভাবেই চাই কারো আদরের কন্যাটি, বোনটি যেন কখনো কোনো যৌনলোলুপ শিকারীর কবলে না পড়ে। কোনো শিশু কোনো নারী পুরুষ যেনো যৌন নিপীড়নের মতো একটি বিভীষিকাময় ঘটনার সম্মুখীন কখনোই না হয়। সেজন্যই মি টু কে ভয় নয় স্বাগত জানানো উচিত। এবং সেই সাথে ভিকটিমের পাশে দাঁড়ানোটাও জরুরী।

আমি আছি তাদের পাশে। ভবিষ্যতে আমার কন্যাটি যেনো নির্ভয়ে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারে। আমার বোনটিকে যেনো কোনো যৌনবিকারগ্রস্ত পুরুষের কবল থেকে নিস্তার পেতে চাকরি ছাড়তে না হয়। আমার আত্মীয়ের ছেলেশিশুটি যেনো নিরাপদ থাকে। যেনো আমার চেনা অচেনা কাউকেই কখনো আর মিটু লিখতে না হয় সেজন্যেই আমি চাই মি টু এক্ষুনি এখানেই থেমে না যাক।

1406 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।