ইমতিয়াজ মাহমুদ

এডভোকেট, মানবাধিকারকর্মী

রূপ ও অন্যান্য এলোমেলো কথা

(১) 
একটু আগে আমাদের সওগাত আলী সাগরের মায়ের মৃত্যু সংবাদ দেখলাম ওর স্ত্রীর ফেসবুক পোস্টে। সাগর আমাদের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, বাংলা বিভাগে নাকি ইংরেজি বিভাগে সেটা ভুলে গেছি। ঐখানেই দেখা হতো মাঝে মাঝে- দোতলায় বাংলা আর ইংরেজি বিভাগের মাঝামাঝি জায়গাটায়। পরে বড় সাংবাদিক হয়েছে। আমার সাথে আর সেরকম যোগাযোগ ছিল না। এখন উত্তর আমেরিকায় থাকে।

আমার সেই টেকনাফ হাই স্কুলের সময়কার বন্ধু রেজাউল করিমের ফেসবুক পোস্ট দেখলাম গতকাল ওর মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। রেজা তো ইশকুলের ভাল ছাত্র ছিলো। তখনই সকলে জানতো এই ছেলে একটা কিছু হবে। এখন বিশাল ডাক্তার হয়েছে। না, শুধু ডাক্তার হলেই তো আর একটা কিছু হয় না, কাঠের পুতুল পিনোকিও সেও শুনেছি ডাক্তার। আমার বন্ধু রেজা শিশুদের রক্ত ও ক্যান্সার ব্যাধির বড় বিশেষজ্ঞ। রেজা কিনা দেখতেও বেশ ভালো। আমি মাঝে মাঝে কল্পনা করি আমার বন্ধু রেজা নিপুণ দক্ষতায় হাসতে হাসতে শিশুদের রক্তে বাসা বাঁধা শয়তান কর্কট ব্যাধি ভালো করে দিচ্ছে। কি যে ভালো লাগে ভাবতে! দেবদূত বলে আমরা যে একরকম কল্পনা করি, সেরকম কিছু থাকলে আমার এই বন্ধুটিকে দেবদূত বলতে পারতাম। পারতাম না?

আমার মা তো গেলেন আজ দুই সপ্তাহ হয়ে গেলো।

কয়দিন পরে ফেসবুকে এসে দেখি এইসব পোস্ট। মায়েরা সব আমাদেরকে ত্যাগ করছেন। মা থাকবেন না এ তো প্রায় অনিবার্য একটা ব্যাপার। মানতে কষ্ট হয় এরকম একটা অনিবার্য ব্যাপার।

আমার সবচেয়ে প্রিয় গ্রন্থ বিভূতিভূষণের অপরাজিত। মায়ের মৃত্যুর পর অপু ফিরেছে কোলকাতায়। কোলকাতার রাস্তায় মানুষ যানবাহন এইসবের কর্মচঞ্চল ব্যস্ত ভিড়ে অকস্মাৎ অপূর্বর মনে হয় মাতৃবিয়োগ কি ওর জন্যে মুক্তির মতো একটা ব্যাপার! খুব ইচ্ছে হয় সেই লাইনগুলি পড়ি। আমার কাছে অপরাজিতের যে কপিটা আছে সেটা বেশ পুরনো। আমার পিতা পড়েছেন, আমাদের কাছ থেকে ধার নিয়ে আরও কে কে সব পড়েছেন এটা। নানা জন্যে আবার সেটাতে নাম লিখে রেখেছে, চিহ্ন রেখে দিয়েছে।

অপরাজিতটা খুঁজতে থাকি ঘরে, পাইনা। খুঁজে পাচ্ছি না তো পাচ্ছিই না। একজনকে বলেছিলাম বইটা দেবো, ওকে তো দেওয়া হয় নি। তাইলে কই গেলো?

(২) 
গত কয়েকদিন ধরে দুইটা বই খুঁজছিলাম। অপরাজিত খুঁজছিলাম। সেদিন আমি আর আমার বড় মেয়ে মিলে শেলফ তছনছ করে ফেললাম Development as Freedom বইটি খুঁজতে খুঁজতে। বেচারা অতসী বিরক্ত হয়ে গেছে। তুমি কয়েকদিন পর পর একেকটা বই খুঁজতে থাকো, আর খুঁজতে গিয়ে অন্য কয়েকটা আধপড়া বই নিয়ে গিয়ে টেবিলে স্তুপ করো। এইসব কি!

আমার কি দোষ বলেন। বছর দশেক আগে যখন এই বাসায় আসি আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ঘরের আসবাবপত্র ইত্যাদি ডিজাইন করার জন্যে এক তরুণীকে নিয়ে এসেছেন, সাথে ফার্নিচার তৈরির দোকান থেকে আরেক মেয়ে। ওরা মিলে ঘরের ফার্নিচার পর্দা রঙ এইসব নানান কিছু সবই বেশ ঠিকঠাক তৈরি করেছে। আমার জন্যে শোবার ঘরের বিছানার পাশে চমৎকার একটা টেবিল আর আরামদায়ক একটা চেয়ার বানিয়ে দিয়েছে পড়ার ঘরের যে চেয়ারটা সেটা আরও ইয়ে- সবুজ নরম চামড়ায় মোড়ানো পুরো গদি লাগানো মেহগনির তৈরি পুরনো স্টাইলের রিভলভিং চেয়ার।

সবই ঠিক আছে। কিন্তু শেলফগুলি বানিয়েছে একদম বেমক্কা। না, দেখতে চমৎকার বটে, কিন্তু স্টাইল করতে গিয়ে বই রাখার জায়গা একটু কম। সিলিং পর্যন্ত উঁচু শেলফগুলির কোথাও গভীরতা বেশী কোথাও কম। যেসব খোপের গভীরতা বেশী, আর সেগুলিতে বই রাখা হয়েছে দুই সারি করে- এক সারি সামনে আরেকটি পিছনে। সেই সিলিংএর কাছে পেছনের সারি থেকে বই খুঁজে বের করা একটা কঠিন কাজ। কিন্তু উপায় কি, বই তো আর কমে না, ফেলেও দেওয়া যায় না। রাখার জায়গা না পেলে কি করবেন? যেখানে যেরকম সুবিধা গুঁজে রাখতে হয়। দরকারের সময় বই আর খুঁজে পাই না।

বছর দেড়েক ধরে ভাবছি কাউকে বলি ভাই, এইসব ঢঙের শেলফ ফেলে দিয়ে কয়েকটা দেয়াল জুড়ে আমাকে কিছু সহজ সরল শেলফ বানিয়ে দেন। সেগুণ মেহগনি দরকার নাই, আম জাম কোলা কাঁঠাল যে কোনো কাঠের হলেই হবে। বোর্ডের হলেও অসুবিধা নাই। কিন্তু সকল বই যেন আমি দেখতে পাই- বই খুঁজে বের করতে যেন অসুবিধা না হয়। শাওনকে বলব? শাওনের একটা স্থপতিদের ব্যান্ড আছে। কি যে চমৎকার ডিজাইন করে ওরা! আমি মুগ্ধ।

(৩)
প্রতিদিনের জীবনে আমাদের কতো টুকটাক শিল্পের ছোঁয়া থাকে। একটু সুন্দর করা। সবকিছুই। অন্তর্বাস থেকে শুরু করে মোটর গাড়ী। দরোজার হাতল থেকে শুরু করে জামা জুতা টয়লেটের সিটটা। একটু সুন্দর করা। নিজের শরীরেও- সুন্দর করে একটু কাজল টানা, জামার হাতাটা কি কুঁচকে থাকলো কিনা লক্ষ্য রাখা। ত্বকটা পরিচ্ছন্ন আছে কিনা, নখে কি একটু রঙ দিব! ঠোঁটে? কিছুদিন ঋতুপর্ণের সাথে প্রেম মতো হয়েছে। কি সুন্দর করে চোখের মেকআপ করেছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে করা ঐ সিনেমাটাতে! একদিন ইচ্ছে হলো আমিও কাজল পরি।

আমার বড় মেয়েটা আলপনার মতো করে হাতে মেহেদি দিয়ে দেয়। কি চমৎকার ইন্ট্রিকেট সব লাইন আর ডট, সাথে এখানে ওখানে একটু ভ্যালু, শেড এইসব যোগ করে দেয়। ছেলেদের হাতে দেওয়ার নিয়ম নেই। আমি মাঝে মাঝে বলি আমার বাহুতে ঘাড়ে বা শরীরের অন্যত্র একটা এঁকে দাও অতসী। মেয়ে দয়াপরবশ হয়ে এটা সেটা এঁকে দেয়। আমি জামার নীচে গায়ে আঁকা সেই ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়াই। জবরদস্ত সব কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ লোকেদের সাথে মিটিঙে বসে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যাবসার কথা সিরিয়াসলি আলাপ করি।

বড় বড় মডেলদের প্রাণহীন ত্বকের মতো মসৃণ উত্তম সুতি শার্ট আর গম্ভীর কাউন্সেলের চেহারার নীচে আমার ত্বকে হৃদয় নিয়ে খেলতে থাকে একটা প্রজাপতি। কখনো সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞদের চেয়েও বিজ্ঞ বিচারপতি যখন অকাট্য যুক্তি ও আইনের ব্যাখ্যা শুনে নিজের প্রাথমিক মতামত পরিবর্তন করছেন, তখন মধ্যযুগীয় বিলিতি সামন্ত কায়দার স্টিফ উইং, ব্যান্ড আর সব ঢেকে দেওয়া রোবের ভিতর আমার বাহুতে তুড়ি মেরে নেচে বেড়ায় একটি মারমেইড। বেশ লাগে।

না, কিন্তু সৌন্দর্য চর্চার এই দিকটায় আমার সেরকম দক্ষতা নাই। এপ্রিশিয়েট করার যে ইয়েটা, সেটা একটু আছে মনে হয়, কিন্তু সে নিয়েও সেরকম বাড়াবাড়ি নেই। ঠিক করে কেউ সাজলে তো সুন্দর লাগেই, সাজগোজে একটু বেতালা হলে সেটা চোখে লাগে। এইটুকুই। কিন্তু আমার মায়ের আবার এইদিকে বেশ ইয়ে ছিলো। তিনি অবশ্য সাজগোজ ব্যাপারটা করতেন তাঁর নিজের ঠিক করে রাখা একটা পরিমিত মাত্রার মধ্যে। কড়া রঙের লিপস্টিক পছন্দ করতেন না। চুল রঙ করতেন কেবল কালো করে। ত্বকের যত্ন নিতেন, মেকআপ যেটুকু পরতেন সেটা খুবই মৃদু করে। কাজল পরতেন অবশ্যই অবশ্যই।

(৪) 
রূপ ব্যাপারটাতে মামনির ইয়ে ছিলো। চকচকে ঝকঝকে সেজেগুজে থাকা, দেখতে ভালো ছেলেমেয়েদের তিনি বেশ পছন্দ করতেন। এই নিয়ে তাঁর শেষ দিনগুলির একটা গল্প বলি।

ডিসেম্বরের শুরুতে তখন তিনি বারডেম হাসপাতালে। একদিন পরপর ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিসের পর মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। ওর সাথে ভাইয়া আর লিমা। একেবার যখন মামনির চেতনা বিলুপ্ত হয়, ওরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। ভাইয়া তো চব্বিশ ঘণ্টাই মামনির সাথে। ভাইয়ার চেহারা দেখে বুঝতে পারি ও আশা ছেড়ে দিয়েছে। সেসময় একদিন লিমা ফোন করেছে, মামনির জন্যে রক্ত লাগবে। আমাদের মধ্যে অর্কর সাথে মামনির রক্তের গ্রুপ মিলে, কিন্তু অর্ক সর্বশেষ রক্ত দিয়েছে তিনমাস হয় নি। আমার সামনে সুমন বসেছিলো। ফোনে ফোনে সুমন ছাত্র ইউনিয়ন নেটওয়ার্কে একজনকে পেয়ে গেলো, যে ঐ হাসপাতালের আশেপাশেই আছে, ওর নাম নুসরাত। নুরসরাত গিয়ে মামনির জন্যে রক্ত দিয়ে এসেছে।

পরেরদিন বিকালে গেছি হাসপাতালে। মামনির তখন জ্ঞান আছে, কিন্তু কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে। ওর মধ্যেই খুব আগ্রহভরে আমাকে তিনি জানাচ্ছেন, নুসরাত এসেছিলো, নুসরাত আমাকে রক্ত দিয়ে গেছে। নুসরাত খুব ভালো। 'কি সুন্দর মেয়েটা! নুসরাতকে তুই চিনছস? ও ইমন, নুসরাতকে চিনতে পারলি? কি সুন্দর মেয়েটা।' আমরা সকলেই হাসি। মামনির ভালো লাগছে যে দেখতে ভালো একটি মেয়ে ওর জন্যে রক্ত দিয়েছে। চিন্তা করেন, মৃত্যু সজ্জায় আছেন তিনি, তিনি নিজেও সেটা টের পাচ্ছেন, এইরকম একটা সময়ে কিনা তিনি দেখছেন তাঁর জন্যে যে মেয়েটি রক্ত দিতে এসেছে সে দেখতে কিরকম আর তার পরিপাটি সাজ নেইল আর্ট এইসবে মুগ্ধ হচ্ছেন।

নুসরাত দেখতে বেশ ভালো, আর অন্যদের সাহায্য সহযোগিতা করতে সবসময়ই নাকি তৎপর। শুনতে পেলাম সিপিবির কর্মসূচীতে আসা বয়স্ক ভিনদেশী কমরেডরা নুসরাতের সহযোগিতা ও যত্নে খুবই আপ্লুত। আমার সাথে নুসরাতের কখনো দেখা হয় নি, নিশ্চয়ই কখনো না কখনো দেখা হবে। মেয়েটির প্রতি কৃতজ্ঞতা কেবল মামনির শেষ দিনগুলিতে রক্ত দিয়েছে সেজন্যেই নয়, সে গিয়ে মামনির সাথে মিষ্টি করে কথা বলেছে আর ওঁর ভালোলাগার কারণ হয়েছে।

কখনো সেইভাবে স্পষ্ট করে বলেন নি বটে, কিন্তু আমার মায়ের একটা সরল ধরনের ইকোয়েশন ছিলো, ভালো মানুষেরা দেখতে ভালো হয়। কথাটা একদম ভুল না। আপনি যদি মনের দিক দিয়ে ভালো না হন, তাইলে আপনার শারীরিক গঠন ত্বক নাক চোখ মুখ যতই ঠিকঠাক থাকুক, দেখতে ভালো লাগবে না। বরং উল্টোটা। আপনার নাক চোখ মুখ বা শরীরের গঠন সাদামাটা হলেও মাথা যদি আপনার সুন্দর হয়, তাইলে আপনাকে দেখতেও সুন্দর লাগবে। নুসরাত মেয়েটি নিশ্চয়ই ভালো মানুষ বলেই ওকে দেখতে ভালো লাগে।

(৫)
এই যে আপনারা বাংলাদেশের পতাকা দেখেন, লাল সবুজ, জাতীয় পতাকা হিসাবে এটা গৃহীত হবার আগে আমাদের প্রথম জাতীয় পতাকায় সবুজের মাঝখানে হলুদ রঙ বাংলাদেশের মানচিত্র ছিলো। সেই পতাকাটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো ১৯৭১ এই আমাদের শ্রীবরদির বাসায়। শ্রীবরদিতে তখনো পাকিস্তানী বাহিনী যায় নি, অনুমান করি সময়টা ছিলো ২৬শে মার্চের আগে। নিতান্ত শিশু ছিলাম, বিস্তারিত স্মৃতি নেই। টুকরো টুকরো ছবি মনে আছে যে আমার মা আর বকুল আপা, বকুল আপা তখন কলেজের ছাত্রী, ওরা দুইজনে মিলে আমাদের বাসায় পতাকা বানাচ্ছেন।

লাল সবুজ আর হলুদ কাপড় আনা হয়েছে বাসায়। মানচিত্র আঁকিয়ে আনা হয়েছে হলুদ কাপড়ের উপর। সেটা মাপজোক করে কাটা হচ্ছে, আমাদের বাসায় সিঙ্গারের সেই পুরনো স্টাইলের সেলাই মেশিনে বসে সেটা বকুল আপা সেলাই করছেন। মামনি বলছেন, ও বকুল ম্যাপটা ঠিকমতো কাটা হয়েছে কিনা দেখ। এইরকম সব টুকরো টুকরো ছবি। সেই পতাকা আমাদের বাসায় উড়ানো হলো, একদিন রাতে মশাল মিছিলে গেলেন মামনি আর বকুল আপা। স্থানীয় স্টুডিওওয়ালা সেই মিছিলের ছবি তুলেছে সেটা প্রিন্ট করিয়ে আনা। আহা।

একদিন দেখি মামনি আর বকুল আপা মিলে সেই পতাকা কি পরম যত্নে একটা কাঁচের বোতলে পুরছেন। পতাকা সহ সেই কাঁচের বোতল একটা গর্ত করে পুতে রাখা হলো বাসার পিছনে একটা পেঁপে গাছের নীচে। কেন? কেননা খবর এসেছে, মিলিটারিরা আসছে। পতাকা এখানে থাক। দেশ স্বাধীন হলে এটা এখানে থেকে তুলে আবার উড়িয়ে দেওয়া হবে আকাশে। সেই পতাকা কি কেউ পরে খুঁজে পেয়েছে? কে জানে! মিলিটারিরা আসার পরে তো আমার পিতাকে ধরে নিয়ে গেলো। আমরা পালিয়ে বেড়ালাম এখান থেকে সেখানে। এরপর তো শ্রীবরদি থেকেই চলে এলাম।

আমার বকুল আপা আর নেই। তাঁর মৃত্যু হয়েছে মামনির মৃত্যুর কিছুদিন আগে। আমরা সাথে সাথে খবর পাই নি। মামনির মৃত্যুর খবর দিতে গিয়ে লিমা জানতে পেরেছে। বকুল আপা ছিলেন আমার জ্যাঠাত বোন। বয়সে প্রায় আমার মায়ের কাছাকাছিই হবেন। আমাদের বাসায় থেকে পড়াশুনা করতেন। অসাধারণ রূপসী বকুল আপা আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে আমাকে কি একটু বেশী ভালবাসতেন! আমি হতভাগা ওঁর মৃত্যুর খবরটাও সময় মতো পেলাম না।

(৬) 
হারিয়ে যায় সব। সিদ্ধার্থ তো বলেইছেন, জগত অনিত্য, জগত দুঃখময়। হারিয়ে যায় সব। প্রিয় বইটি একদিন খুঁজে পাবেন না। নয়া সংস্করণ আছে। বিভূতিভূষণ রচনাবলী আছে। কিন্তু ঐ বইটি তো নেই। নয়া সংস্করণ পড়তে ইচ্ছা করে না। কিন্তু নয়া সংস্করণই তো পাঠ করতে হবে। এইভাবেই তো অগ্রসর হবো, নাকি? আমার জন্যে যেটা নয়া সংস্করন, আমার সন্তান সেটাকে পিতার স্মৃতিযুক্ত পুরনো বই হিসেবে দেখবে। এখন তো মৃত্যুর পালায় আমরাই চলে এসেছি।

দুর। থাক। এইসব ডিপ্রেসিভ কথা বলে লোককে বিরক্ত করার কোনো মানে হয় না। এইটা এইখানেই ছেড়ে দিই। বরং এইটুকু কথার মধ্যে নারীর রূপচর্চা প্রসঙ্গে বলার সময় নারীবাদীদের মধ্যে যে সাজগোজ নিয়ে যে কথাগুলি হয় সেগুলির কথা মনে পড়ছে। এরপর না হয় ঐটা নিয়েই একটা পোস্ট দিই।

2799 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।