নুসরাতকে নিয়ে কিছু লিখতে চাইনি আমি। প্রতিটি ঘর, পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-শহর, পথ- ঘাট সবত্র বহু নুসরাতের পদচারনায় ভারাক্রান্ত। সব নুসরাতকে জানি না আমরা। আসলে কোনো নুসরাতকেই জানি না! আলোকিত জীবনে বসে নুসরাতদের দুঃখ ভাগ করে নেয়া যায় না। বর্তমানে নুসরাত আর কোন ব্যক্তি নয়! নুসরাত একটা মিশনের নাম। গোড়ায় কেটে উপরে পানি ঢেলে কি লাভ?
নুসরাতরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। প্রতিবাদ করতে গেলে পুনরায় ধর্ষণের শিকার হয়। পুনঃ পুনঃ ধর্ষণ চলতে থাকে। তাদেরকে সবর্ত্র আগুনে পুড়তে হয়। সব আগুন আমরা চোখে দেখি না। যে নারী ধর্ষণের শিকার হয় তাকে কত প্রকারে এবং কি কি প্রকারে সংসার, সমাজ ও রাষ্ট্রে পুড়তে হয়, তা আলোকিত জীবন কাটানো আমাদের মত মানুষদের অনুভবের বাইরের ব্যপার। যে আগুনে নুসরাতদের শরীর পুড়ে যায়, আমরা তার জন্য শোক-স্তব করি। কিন্তু যে আগুনে নুসরাতরা ভিতর থেকে পুড়তে থাকে, তার জন্য আদতে আমরা কতটুকু শোক করি? আর এ শোক স্তবক নুসরাতদের কোনো দিন কোন কাজে আসে কি?
কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভবতী হলে তাকে ওই ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়, সে বিয়ে করতে না চাইলেও তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। এটা ধর্ষকের জন্য পুরস্কার সরূপ! আর নারীর জন্য শাস্তি! নে বাবা! এবার সারা জীবন ধরে ধর্ষিত হতে থাক! বিষয়টা ঠিক এমনই। তো যে দেশে এই রীতি, সে দেশে মহাসমারোহে ধর্ষণ চলতে বাঁধা নেই। নারীর আবার যৌন জীবন কী? যৎতোসব ঢং! পুলিশ তো ঠিকই বলছে! নুসরাতের কান্দার মত কিছুই হয় নাই! নুসরাতের তো উপভোগ করার কথা! কারণ এ সমাজ তাই জানে ও মানে।
নারীর যৌন জীবন, যৌন চাহিদা ও ইচ্ছা বলে কিছু নাই! এ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা ছড়ানো আছে। তাইতো পুরুষের মন চাইলে সে নারীকে যত্রতত্র যেমন খুশি তেমন করে ভোগ করতে পারে! আর নারী না চাইলেও নিজেকে তা থেকে বাঁচতে পারে না। ধর্ষণ যে নারীর জন্য কোনো সুখের বিষয় না, এ যে নির্যাতন, সহিংস আক্রমণ তাও এ দেশের মানুষের বোধের বাইরে! নারীকে সম্মান করা, তার ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য দেয়া, তাকে গুরুত্ব দেয়া ইত্যাদি ভদ্রতার টুকরো পাঠই যেখানে আমাদের সমাজের মানুষদের নেয়া হয়নি, সেখানে যৌন হয়রানি তো কোনো ঘটনাই না!
তাইতো নুসরাতদেরকে আগুনে পুড়তে দেখলে আমরা বেশি ব্যথিত হই, কিন্তু জীবনের আগুনে তারা জীবনময় পুড়লেও তাদের পাশে গিয়ে দাড়াই না! কথার ফুলঝুরি যতোই ছোটাই না কেন, আদতে আমরা স্বার্থপর আর আত্মবিলাসি! তাই নুসরাতরা বারবার জীবন দিয়ে নিজেদেরকে আমাদের মিশন করে দিয়ে যায়! আমরা তার জন্য কিছুদিন মায়াকান্না করি, শোকস্তবক রচনা করি এবং এক সময় তাকে ভুলে যাই! তারপর আবার কোন নুসরাত আসে ভিতরে পুড়তে পুড়তে! তাদের কেউ কেউ বাইরেও পুড়ে যায়! যে বাইরে পোড়ে সে পুনঃরায় আমাদের মিশন হয়। এভাবে চলছে আর এভাবেই তাকে চলতে দিচ্ছি আমরা! যদি পরিবর্তন চান, আসুন সব নুসরাতদেরকে বাঁচাই। আগুনে পুড়ে যাবার আগেই!