আজ সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল ইয়ারের একটা মেয়েকে তার প্রাক্তন স্বামী হলের সামনে থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে। মেয়েটা তার আরও দুই বান্ধবীর সাথে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দাবি এটা পারিবারিক ইস্যু। স্বামীর অধিকার আছে বউকে নিয়ে যাওয়ার।
প্রথম কথা হচ্ছে মেয়েটা কিডন্যাপ হয়েছে। হ্যাঁ অবশ্যই কিডন্যাপ। মেয়েটাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার চিৎকার প্রচুর মানুষ শুনেছে। তার সাথে তার দুই বান্ধবী ছিলো। এখানে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে তা হলো অলরেডি প্রত্যক্ষদর্শী ওই দুই বান্ধবীর একজনের বাড়িতে ফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে, যাতে তাদের মেয়ে যেন এইসবের মধ্যে না জড়ায়। তারপরও বলবেন এটা কিডন্যাপ না?
এখন কথা হলো কিডন্যাপ হয়েছে ক্যাম্পাস এর মধ্যে ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে থেকে সকাল আটটার দিকে। ওদের ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো। হ্যাঁ, আজ শুক্রবার ওদের ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো। দিনের বেলায় ক্যাম্পাস থেকে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেলো। ক্যাম্পাসে পুলিশ কি করে? ওরা কি গাড়িটা ধরেছিলো, স্বামী জানতে পেরে ছেড়ে দিয়েছে? এমন? না, ওরা তো জানতেই পারেনি। এই ঘটনাটা অন্য যে কোনো মেয়ের সাথে ঘটতে পারতো। এই একটা ঘটনা রাবি প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয় সাধারণ মানুষকে। এটা যদি মেয়েটার প্রাক্তন বা বর্তমান প্রেমিক হতো তাহলেই প্রশাসন দাঁত বের করে বলতো, তোমরা উশৃঙ্খল চলাফেরা করো, তোমাদের দোষেই তো হয়েছে। তারপর আরও কয়েক পরতের নিষেধাজ্ঞা জারি করে মুরগির খাঁচায় আটকে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হতো মেয়েদের। যেহেতু সেটা বলতে পারছে না, তাই দাঁত বের করে বললো, এটা পারিবারিক ইস্যু। এটা নিয়ে তোমরা কেনো কথা বলছো? স্বামী তো তার স্ত্রী কে নিয়ে যেতেই পারে।
হ্যাঁ, এইখানে কথা আছে মাননীয় প্রোক্টর সাহেব। খুব ভাল লেগেছে না? যাক, ব্যাটার সাহস আছে। বউরে শাসন করতে জানে। মরদের মতো কাজ করছে। রাইট?
কিন্তু লোকটা তার স্বামী ছিল না। তিন মাস আগে তাদের ডিভোর্স হয়েছে। আর যদি স্বামী হয়েও থাকে, স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে স্ত্রী কে নিয়ে যেতে পারে না। আমার বাপ ভাইও আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারে না। একজন ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট কচি খুকি না। সে অলরেডি এডাল্ট। আর বাবা, ভাই, স্বামী পরিবারের কোনো সদস্য কোনো মঙ্গলের জন্যই পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে মেয়েটাকে ধরে নিয়ে যাবে না।
সে স্বামী না বাবা সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগেই এই কথাটা মাথায় আসার কথা ছিলো আপনাদের মাননীয় প্রোক্টর ও ভিসি সাহেব। কেনো আসলো না মাথায়? নিজের মেয়ে নিখোঁজ হলেও এতটাই হেসে কথা বলতেন তো?
দ্বিতীয়ত আন্দোলনের শুরুতেই আমাদের কে ভিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেয়েটা নিরাপদে আছে। ও ওর স্বামীর সাথে আছে। তোমরা হলে যাও। অথচ মেয়েটার বান্ধবীরা তখনো মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। তার প্রায় এক ঘণ্টা পর মেয়েটার চাচা এলে তখন মেয়ের চাচার সাথে কথা বলে ভিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, হ্যাঁ তোমরা ঠিকই বলেছো। ওর বাবা কিডন্যাপিং কেইস করেছে। ওকে খুঁজে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তাহলে প্রথমে প্রশাসন কোনো খোঁজ না নিয়ে কেনো মিথ্যে বললো? তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই? কোনো মাথাব্যাথা নেই তাদের? শুধু আমাদেরকে ঠাণ্ডা করার জন্য বানিয়ে মিথ্যে বলে দিলো!
তৃতীয়ত যখন দুজন শিক্ষার্থী ডিপার্টমেন্টে গিয়ে জানিয়েছে তাদের একজন সহপাঠী কিডন্যাপ হয়েছে, তখনি কি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব ছিলো না থানায় যোগাযোগ করার? তারা তখন ধমক দিয়ে স্টুডেন্টদের বাধ্য করেছে পরীক্ষা দিতে। একজন সহপাঠী কে পথের মধ্যে কিডন্যাপ হতে দেখে এসে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েগুলো পরীক্ষা দিয়েছে। ফাইনাল পরীক্ষা! পরীক্ষা একটা জীবনের চেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট??
ওভারঅল প্রশাসন গায়েই লাগায়নি। এই ঘটনার যদি বিচার না হয়, তাহলে আশা করি এরপর রাবি ক্যাম্পাসের মেয়েদের কে প্রায়ই তাদের বর্তমান স্বামী, প্রাক্তন স্বামী, বর্তমান বয়ফ্রেন্ড, প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড কিংবা যেকোনো ক্ষমতাসীন বাপের ব্যাটা যখন ইচ্ছা হবে তুলে নিয়ে যাবে।