পুষ্পিতা মন্ডল

বর্তমানে প্রবাসী পুষ্পিতা বাংলাদেশ সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন।

সোনম কিংবা সখিনা, সবার বেলাতেই স্বামী মানে প্রভু

সোনম কাপুরের বিয়ের একটু অংশের ভিডিও দেখছিলাম। বেচারা সোনম মনে হয় বয়ফ্রেন্ডরে ভালোবেসে বাবু বলতো। মালাবাদলের সময় বরের শেরওয়ানিতে হাতের গয়না আটকে গেলে সে ‘স্যরি বাবু’ বলে ফেলেছে। সেকেন্ডের মধ্যেই পাশথেকে এক নারীর কন্ঠ “ বাবু মাত বোলো। ‘আপ’ বোলো। সোনম তাড়াতাড়ি ‘আপ’ বললো।

একটু পরেই আবার সেই মহিলাই বলে “সোনম ডিরেকশন মাত দো”। বরকে ডিরেকশন? বাপরে বাপ, উনি পতিদেব। আবার সোনমের বর সোনমের হয়ে একটু কি যেন বলেছে তাতেই উনি আবার তাকে প্রোটেকটিভ বললেন। অর্থাৎ বউয়ের হয়ে কিছু বললে আপনি খোঁচা খাবেন। এই বিষয়গুলো খুব সামান্য। অনেকের কাছে তুচ্ছ বিষয়। বিয়ের আগে, বিয়ের সময় অথবা বিয়ের পরে আমাদের উপমহাদেশের মেয়েদের যতো নিয়ম উঠতে বসতে শেখানো হয় তার তুলনায় এ কিছু না। বিয়ে নাকি জীবনের একটা অন্যতম আনন্দের দিন। কিন্তু এই দিনটাকে আতঙ্কের বানানোর কোন ত্রুটি আমরা রাখি না। এই মেয়ে তোমার বিয়ে হচ্ছে সুতরাং এটা বলো না, ওটা কইরো না, এভাবে চইলো না, নানা কাহিনী। তোমার বিয়ে হলো সুতরাং সব চেইঞ্জ হলো। তুমি চাইলেও আগের মতো চলতে পারবে না, এমনকি নিজের বাবা মায়ের সাথে তোমার আচরণ কেমন হবে তাও তোমাকে শিখিয়ে দেওয়া হবে। শ্বশুর বাড়ি , বাপের বাড়ি সবাই হাজার নিয়ম শেখাবে।

এসবের তুলনায় সোনমের এই বাবু না বলতে বলাটা কিছু না। কিন্তু বলিউডের হার্টথ্রব নায়িকা, তারপাশেও এসব কথা বলার লোক আছে দেখে অবাক হয়েছি। মেয়ে, সে আজ তোমার স্বামী। প্রেমিক থেকে প্রভু। সুতরাং নো বাবু ডাকাডাকি, আপনি আজ্ঞে করো। ‘আপ’ বলো। সোনম পরে কি বলবে বা বলবে না সেটা পরের কথা, কিন্তু বলে দেওয়া লোকের অভাব নাই। এখানে সোনম হোক বা সখিনা সবারই বেলায় এক নিয়ম।

সব মেয়েদের বিয়ের আগে পরে এগুলোই শেখানো হয়। বিয়ে হলেই সে স্বামী হয়ে গেলো, প্রভু হলো। এমনকি প্রেমের বিয়েও যদি হয় সেই প্রেমিক পুরুষটি একদিনেই স্বামী হয়ে যায়। সমাজ তাই শেখায়। এমনকি সেই প্রেমিক পুরুষও নিজের এই নতুন রোলটা খুব এনজয় করেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।

সোনমের ঘটনাটা এমনিতেই বলা কিন্তু আসলে আমাদের উপমহাদেশের মেয়েদের বিয়ে বা এর পরবর্তী দিনগুলো কেমন? যে মেয়েটা বিয়ে নিয়ে, নতুন সংসার নিয়ে স্বপ্ন দেখছে অথবা যে প্রেমিকা দীর্ঘদিনের প্রেমের পরিনতি হিসেবে প্রেমিকের সাথে নতুন জীবনের শুরু করার স্বপ্নে বিভোর হচ্ছে, যার জীবনের সবচেয়ে সুখের, শিহরণের সময়গুলো আসছে, সে যদি হঠাৎ টের পায় তার চারপাশের স্বাভাবিক পরিবেশ আর স্বাভাবিক নেই। তার চলা, কথা এমনকি হাসির উপরেও কড়াকড়ি। অনেকদিনের চেনা প্রেমিক, বন্ধুর মতো মানুষটার সাথেও কেমন আচরন হবে তাও তাকে অন্যদের কাছে শুনে করতে হবে। বন্ধু থেকে হঠাৎ তাকে প্রভু ভাবতে শিখতে হবে, তখন সেই মেয়ের মনে এইসব ছোটছোট ধাক্কাগুলো কতোটা বড় হয়ে বিঁধে?

কেন তোমার বিয়ে হবে বলে ‘এখন থেকে তুমি পাল্টে যাও’ এমন নিয়ম হবে? কেন বিয়ের আগের সেই বাবুকে বিয়ের পর ‘আপ’ হতে হবে? কেন বিয়ে মানেই আমাদের দেশের মেয়েদের স্বাভাবিকতাকে বিসর্জন দেওয়া? এইগুলো কি বন্ধ হবে না?

1747 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।