প্রতিভা রানী

প্রবাসী প্রতিভা রানী পেশাগত জীবনে বাংলাদেশে একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পুরুষতন্ত্র একটা অদৃশ্য ফাঁদ

পুরুষতান্ত্রিকতার অক্টোপাশে নারীর আবেগ ভালোবাসা যখন মূল্যহীন তখন নারীকে কতটা ছলনার আশ্রয় নিতে হয় তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের স্বনামধন্য নায়িকা অপু বিশ্বাস। অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন পত্রিকা অনলাইন পোর্টালে তাকে নিয়ে বেশ মুখরোচক লেখা ভেসে বেড়াচ্ছে যদিও এই সুযোগটা তিনি নিজেই করে দিয়েছেন মিডিয়াকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অপু বিশ্বাসকে চিনি না বা তার অভিনীত কোনো সিনেমা দেখি নি। মাঝে মধ্যে দু'একটা গানের দৃশ্য দেখেছি মাত্র। গতানুগতিকই মনে হয়েছে আমার।

 

তবে তার অভিনয় প্রতিভা আছে বলেই দর্শকদের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন। প্রথম সারির একজন অভিনেত্রী হয়েছেন। এজন্য তাকে কম ত্যাগ তিতিক্ষা সহ্য করতে হয় নি। সিনেমা বা নাটক শুধুমাত্র কোনো কাহিনী নয় বরং এর মাধ্যমে কিছু মেসেজ দর্শকদের মধ্যে পৌঁছে দেয়া হয় যা দেখে মানুষ কিছু শিখতে পারে। আর একজন অভিনেত্রী বা অভিনেতা সেটাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারলেই দর্শকদের মনে তার স্থানটি দৃঢ় হয়। তিনি সেখানে একজন সফল অভিনেত্রী। অন্তত আমরা তাই জানি। 

এবার আসি তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। ব্যক্তিগত জীবন ততদিনই ব্যক্তিগত থাকে যতদিন সেটা অন্যের সামনে না আসে। অপু বিশ্বাস মিডিয়ার এক বহুল আলোচিত নাম। হঠাৎ করেই তিনি মিডিয়া থেকে ছিটকে গেলেন বা বলতে পারেন নিজেকে সরিয়ে নিলেন। এর কারণটা প্রথমে না বুঝলেও পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে চলতি বছরে নিজেই একদিন মিডিয়ার সামনে হাজির হলেন। 

আরও চমকপ্রদ ঘটনা হলো তিনি নাকি ২০০৮ সালের ১৮ই এপ্রিল সাকিব খানকে বিয়ে করেন। যা এতদিন তিনি মিডিয়া প্লাস দর্শকদের কাছে গোপন রেখেছেন। আরও চমকপ্রদ বিষয় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই নাকি বিয়ে করেছেন। বিয়ে পরবর্তী তার নাম অপু ইসলাম। একটা অধ্যায়ের কিন্তু এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটলো। মানে আমি বলতে চেয়েছি জন্মদাতা বাবা মায়ের দেয়া পদবী ধর্ম সবকিছু এখানেই শেষ করে দিলেন। যাক এসব কথা এটা তার ইচ্ছা। শো’বিজের ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা রেখেই নাকি এতদিন বিয়ের কথা গোপন রেখেছেন। আরও অবাক করা বিষয় তিনি ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার একটি ক্লিনিকে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ছেলের নাম আব্রাহাম খান জয়।

তার ভাষ্যমতে সাকিবের কথাতে বিয়ের কথা গোপন রেখেছেন। সেখানে তিনি একজন আদর্শ স্ত্রীর কাজ করেছেন আপাতদৃষ্টিতে তাইতো মনে হয়। তবে তাতে ফল যে খুব একটা ভালো হয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং সাকিব খান ক্ষুব্ধ হয়েছেন হঠাৎ করেই অপুর এই মিডিয়ার সামনে আসাতে। নিজের মুখোশটা উন্মোচিত হওয়ায় তিনি যে ধাক্কাটা খেলেন হয়তো সেটা একটু বেশিই ছিলো। এসব অবশ্য সবার জানা কথা। এবার আসল কথায় আসি। প্রেমের জন্য সমাজ সংসার জাত কুলমান বিসর্জন দেয়া নতুন কিছু নয়। প্রাচীন কাল থেকেই এটা হয়ে আসছে ভবিষ্যতেও হবে। তবে অপু বিশ্বাস মতান্তরে অপু ইসলাম খান নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন সাকিব খানের জন্য। সাকিব খান হয়তো তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন সারাজীবন তার হাত ছাড়বেন না। যার কারণে নিজের ক্যারিয়ারের তোয়াক্কা পর্যন্ত করেন নি।

অপুকে সাকিব খানের স্ত্রী হিসেবে চেনার আগে তাকে নায়িকা হিসেবেই চিনতেন সবাই। আলাদা করে তার আইডেন্টিটির দরকার নেই। তারপরেও ভালোবাসা কিন্তু এসবের ধার ধারে না। তার নিয়মেই চলতে থাকে। সবকিছু গোপন করেও যখন অপু পার পেলেন না তখন মিডিয়ার সামনে আসতে বাধ্য হয়েছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যপারগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরলেন। বেশ কয়েকমাস ধরে এই বিয়ের ব্যাপারটা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মুখরোচকভাবে ছেপেছেন। নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রচার করেছেন। তারপরে অপু নিজেকে সামলে নিয়ে আবার নতুন করে মিডিয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন। হঠাৎ করে আবার আলোচনায় আসলেন তিনি। আলোচনার বিষয় ছেলেকে ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে রেখে তার কলকাতায় যাওয়া।

একজন মা হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো কতটা ক্রাইসিসে থাকলে একজন মা তার সন্তানকে একজন পরিচারিকার কাছে রেখে দেশ ত্যাগ করে। ভাবছেন সাফাই গাইছে অপুর। না, তা ভাবলে ভুল ভাববেন। মোটেও তা নয়। তার অসুস্থতাই তার দেশ ত্যাগের কারণ। তবে আর একটু দ্বায়িত্ববান হতে পারতেন। যেমন সাকিব খানের পরিবার না হোক তার পরিবারের কাউকে বাসায় আসতে বলতে পারতেন। 

এবার আসি কাজের কথায়, পুরোনো কাসুন্দি অনেক ঘাটলাম। অপুর মতো স্বনামধন্য সাবলম্বী একজন নায়িকার কাছ থেকে এতটা ন্যাকামি আশা করি নাই। বিশেষ করে যে স্বামী তার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে (যদিও এটা অপুর কথা আমরা তো সঠিক কোনটা তা জনি না) স্ত্রী ও সন্তানকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখতে পারেন এমন কি মিডিয়ার সামনে আসার পরও অপুর দ্বায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে, তার জন্য নাকের জল চোখের জল ফেলাটাকে ন্যাকামি ছাড়া আর কিইবা বলতে পারি। 

আপনিতো সাবলম্বী তাহলে কেনো নিজেকে এত ছোট এত অসহায়ভাবে উপস্থাপন করেছেন? পৃথিবীতে অনেক সিঙ্গেল মা আছেন যারা নিজের পরিচয়ে সন্তানকে মানুষ করেছেন। ঘুরে দাঁড়াতে শিখুন। তা না করে নিজেকে হাসির খোরাকে পরিনত করেছেন। আবার নতুন করে ঘোষনা দিয়েছেন সিনেমা ছেড়ে দিয়ে নামাজ রোজা হজ্ব করবেন। ভেবেছেন এসব করে সাকিব খানের মন পাবেন। সে গুড়ে বালি। তারচেয়ে বরং মেরুদন্ড সোজা করুন বাঁচতে শিখুন মাথা উঁচু করে। সাধারণ মানুষেরা কি শিখবে আপনাদের মতো সেলিব্রেটিদের কাছ থেকে।

এবার আসি নাম্বার ওয়ান সাকিব খানের প্রসঙ্গে। সাকিব খান আজকের যে অবস্থানে আছেন তার জন্য নিশ্চয়ই অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিল তিল করে নিজেকে তৈরি করেছে। তবে তিনি পুরুষ বলেই কি তার তার বেলায় সব শিথিল। তিনি তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্য হ্যাঁ এটাকে আমি ব্যক্তিগত স্বার্থই বলবো স্ত্রী সন্তানকে জনসমক্ষে আনেন নি। হতে পারে তিনি ভেবেছেন গাছেরটাও খাবো আর তলারটাও কুড়াবো কেউ কিছু জানবে না। বিয়ে করলেই যদি ক্যারিয়ারের ক্ষতি হয় তাহলে আমাদের শ্রদ্ধেয় নায়ক রাজ রাজ্জাক স্যার আজকে নায়ক রাজ উপাধি পেতেন না। আর প্রয়াত সালমান শাহ যার অভিনয় জীবন অতি অল্প সময় কিন্তু সেই অল্প সময়ে তিনি সারা বাঙালির মনের মনিকোঠায় স্থান করে গেছেন। মরেও তিনি অমর হয়ে আছেন দশর্কদের হৃদয়ে। 

ছলনা না করে বরং প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠুন তাতে নিজের ক্ষতি না লাভ হবে। শুধুমাত্র সন্তানের স্বীকৃতি দিবেন কেনো, সন্তান কি আকাশ থেকে এসেছে? স্ত্রীকে সম্মান করতে শিখুন তাহলে আখেরে লাভ হবে। আপনি নিজে হাজারটা অন্যায় করবেন তার বেলায় কিছু না আর অপুর দেশ ত্যাগ করাটা নিয়ে জটলা পাকাচ্ছেন। কেনো? আপনি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন ছেলের কথা মনে থাকে না? নিজেকে প্রশ্ন করেন। দিন শেষে একবার হলেও আয়নায় নিজেকে দেখতে হয় তখন নিজের দিকে তাকাতে পারবেন তো? 

3901 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।