ফারজানা কাজী

সমাজ কর্মী

পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও জিরো ফিগার

আজকাল জিরো ফিগার খুবই জনপ্রিয় একটি শব্দ। অল্প বয়সি থেকে শুরু করে মধ্য বয়সি নারীরাও জিরো ফিগার হতে চান। শরীরে বিন্দু মাত্র মেদ থাকা চলবে না। শরীর হতে হবে ছিপছিপে পাতলা। 

নায়িকারা হরদম জিরো ফিগার হচ্ছেন। জিরো ফিগার না হলে নারী সৌন্দর্যের মধ্যে পড়বেনা। শরীরে সামান্যতম মেদ জমলে সব সৌন্দর্য নষ্ট হয় যাবে।

নায়িকা জিারো ফিগার না হলে সিনেমা চলবেনা। আর জিরো ফিগার নায়িকা দেখে শরীরে একটু চর্বি জমা স্ত্রী বা প্রেমিকাকে ভালো লাগবে নাকি পুরুষের?

তাইতো আমাদের মেয়েরা জিরো ফিগারের জন্যে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এতোটাই ছিপছিপে হতে হবে যে পুরুষ একটা চড় মারলেই নারী উলটে-পালটে পড়ে যায়। একটা চড়ের বদলে পালটা আরো দুটি চড় মারার শক্তিটুকু যাতে নারীর না থাকে এমন কাঠি হয়ে উঠতে হবে।

নারীকে আঁটোসাটো পোশাক পরতে হবে, পেন্সিল হিল পরতে হবে যাতে পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত হলে নারী নিজেকে রক্ষা করতে না পারে। নারী শরীরে, পোশাকে যেন দুর্বল হয়ে থাকে তার ব্যাবস্থাটা পুরুষতন্ত্র খুব ভালা করেই করে দিয়েছে।

সৌন্দর্যের নামে নারীকে পন্য করে ইচ্ছা মতো ব্যবহার করছে পুরুষ। নারী যাতে শক্তিতে দুর্বল হয় তার হাজারো রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরুষের সমকক্ষ যাতে কখনোই হয়ে উঠতে না পারে নারী তার জন্য কি অপ্রান চেষ্টা! প্রাচীনকাল থেকেই পুরুষতন্ত্র বলে আসছে নারী কম খাবে, পুরুষের পরে খেতে বসবে, পুরুষের এঁটো খাবে। নারীকে বলা হয়েছে অবলা। কম খাইয়ে অবলা তো নারীকে করে রাখা হয়েছে। নারীর মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সে দুর্বল।

নারীকে শারীরিক ভাবে দুর্বল, মানসিকতায় পঙ্গু করে রাখার বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে অতীতকাল থেকেই।

বর্তমানকালে আধুনিক নারীগণও পুরুষতন্ত্রের শিকার মারাত্মক ভাবেই। নারী কম খেয়ে, হাইহিল পরে পুরুষের পুতুল হয়ে থাকুক, যেন একটু হাওয়া লাগলেই পড়ে যায়।

পুরুষেরা তো দিব্যি শরীরে মেদ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পছন্দের খানা খাদ্য খেয়ে যাচ্ছে। পুরুষকে তো জিরো ফিগার হতে হচ্ছে না। পুরুষের মেদওয়ালা শরীর নিয়ে তো কোনো চর্চা হচ্ছে না। নারীকেই কেন কাঠি হতে হবে?

আমি বলছিনা খেয়ে খেয়ে কোলেস্টেরল বাড়াতে। পরিমাপ মতো পছন্দের খাবারগুলো কেন খাদ্যতালিকা থেকে বাতিল হবে? যে বয়স ছেলে-মেয়ে উভয়েরই শরীর এবং মস্তিষ্ক গঠনের বয়স, সেই সময়ে ছেলেরা দিব্যি খাবার খেয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মেয়েরা মুটিয়ে যাবার ভয়ে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। সাইজ জিরো ফিগার বানাতে গিয়ে অধিকাংশ নারী ইটিং ডিজ-অর্ডারে ভুগে থাকে। খাব না খাব না করে, পাশ্চাত্যের অনেক মডেল-নায়িকা দুনিয়া থেকে একেবারে উবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

মেয়েরা কেন না খেয়ে খেয়ে হাড্ডি-চামড়া সর্বোস্ব পুরুষের পুতুলে পরিণত হবে? নারী পেটপুরে পছন্দের খাবার খাক, শরীরচর্চা করুক, সুস্থ থাকুক। পুরুষ এক ঘা দিলে যেন ‍দুতিন ঘা বসিয়ে দিতে পারে।

1973 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।