সাদিয়া নাসরিন

লেখক ও এক্টিভিস্ট

‘পূর্ণিমা’ আজ হার না মানা অনন্য, অদম্য সাহসী এক নাম

মনে পড়ে পূর্ণীমার কথা? ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ের পর হিন্দু হওয়ার অপরাধে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা গণ ধর্ষণ করছিলো সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমাকে। ক্লাস নাইনে পড়া পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করতে এসেছিলো ১০-১২ জনের একটি দল। পূর্ণিমার মা ধর্ষক পুরুষদের কাছে মিনতি করেছিলেন, “বাবারা আমার মেয়েটা ছোট, মরে যাবে। তোমরা একজন একজন করে এসো”।

সেদিনও ধর্ষকদের রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলো ধর্ষকের আইন। এর মধ্যে ধর্ষকদের বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়ার চেষ্টা হয়েছে, খুবলে খেয়েছে তার পরিবারকে। পরিবারটিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে নি এ দেশ, এই রাষ্ট্র। ধর্ষকের এই সমাজ, পতিত পুরুষে কিলিবিল করা এই দেশ কি আর এতো সহজে বাঁচতে দিয়েছে ওই মেয়েকে?

প্রতিদিন তিল তিল করে মেরেছে, স্কুল কলেজ ভার্সিটির প্রতিটি দিন মুখরোচক গল্প হয়েছে। রাস্তায় হাঁটতে পারে নি দিনের পর দিন। ওকে দেখিয়ে বলেছে, ‘এই সেই মেয়েটা’। রাস্তায় চুলের মুঠি ধরে মেরেছেও। পূর্ণীমার নামে ফেসবুক আইড়ি খুলে তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে পোষ্ট করা হয়েছে নোংরা ছবি, নোংরা কথা। ওর কলিগরা ওই আইডিতে যুক্ত হয়ে প্রশ্ন করেছে ‘কী রে? তুমি নোংরা ছবি পোস্ট করেছো, তুমি কি এসব করে খাও?’ কোনো বন্ধু বলেছে, ‘কত টাকা চাই তোর’?

না, পূর্ণীমা মরে নি। সে বেঁচে আছে। কন্টক সমুদ্র পাড়ি দিয়েই সে বেঁচে আছে। তুমুল ভাবে জীবনের জয় পতাকা উড়িয়েছে অদম্য সাহসে। পূর্ণিমা মুখ লুকিয়ে কেঁদেছে হয়তোবা, কিন্তু কোনোও আড়াল বা অন্ধকার বেছে নেয় নি। দেশ থেকে পালিয়ে যায় নি, এসাইলাম নিয়ে শরণার্থী হয় নি। দেশে থেকেছে, মাথা উঁচু করেই থেকেছে। সংবাদ সম্মেলনে নির্দ্বিধায় বলেছে কি ঘটেছিলো তার সাথে।

এগারোটি বছর কি দুর্বার সাহসে মোকাবেলা করেছে বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ! কি চমৎকার উন্নাসিকতায় উড়িয়ে দিয়েছে বছরের পর বছর চলা আইনের মারপ্যাচ আর জেরার ধর্ষণ। এগারটা বছর একটানা লেগে থেকে নিশ্চিত করেছে ধর্ষকের বিচার। আজ তাই দৃপ্ত কন্ঠে বলতে পারে পূর্ণিমা, “এটা আমার লজ্জা না। এটা এই সমাজের লজ্জা”।

সব আঁধারেই আলো জ্বালানিয়া কেউ তো থাকেই। সেই দু:সহ সময়ে ওয়াহিদুল হক, শাহরিয়ার কবির আর ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কিছু সদস্যের সহযোগীতায় পূর্ণিমা ঢাকায় আসে, স্কুলে ভর্তি হয়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ও পার করে, মাথা উঁচু করে নিজের কাজের জগতও তৈরি করে নেয় পূর্ণিমা। আজ এই দিনে পূর্ণীমার জন্য আলোর দ্বীপ জ্বালালেন তারানা হালিম। আমাদের তারানা আপা।

1859 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।