সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা ছিলো না। এটা একটা ভয়ংকর শ্রেণিবৈষম্যের, বর্ণবৈষম্যেরও সমাজ বলেই এরকম সব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
নারীদেরকে পর্ণ বানানোর জন্য এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একটি চরম উপায়ও বটে! এই প্রতিযোগিতা যে বা যারা অংশগ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে বা তাদেরকে হেয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলার সাহস নেই- কেননা এই সমাজ ব্যবস্থাটাই ভোগতান্ত্রিক, পুরুষতান্ত্রিক, পুঁজিতান্ত্রিক। এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা বা এর থেকে বের হয়ে নারীরা এই প্রতিযোগিতাকে বর্জন করবে সেটাও সময়ের ব্যাপার। তবে, আমার কথা হলো যে বা যারা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নারীরা কি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না পারলো তা নিয়ে ব্যাপক ঘূর্ণিঝড় বাঁধাইয়া দিয়েছেন তাদের নিয়ে- সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কি এরকম প্রশ্ন করার কথা ছিলো? এটা বিজ্ঞান প্রতিযোগিতা ছিলো?
এটা ইচ্ছাকৃতভাবে একটা বিতর্ক তৈরি করার জন্যই বিচারকরা করেছে। কেনো করেছে, সে উদ্দেশ্য তারাই জানে! কিন্তু আমি এ বিষয়টাকে নিয়ে যারা ট্রল করছে, যারা মেয়েদেরকে ‘ভার্চুয়ালী ধর্ষণ’ করছে তাদেরকে বলছি- আপনি বা আপনারা কতটুকু জ্ঞানী তা আপনাদের কর্মকাণ্ডেই প্রকাশ ঘটে। সমাজে আর কোনো বিষয় নিয়ে যখন কোনো কাজ না থাকে, মাথা ঘামাতে না হয়- তখন এরকম একটা বিষয় নিয়ে লাফালাফি করা একমাত্র আমাদের সমাজের মানুষের পক্ষেই সম্ভব। আর যাকে বা যাদেরকে নিয়ে লাফালাফি করতে হবে তারা যদি লৈঙ্গিকভাবে ‘নারী’ হয় তাহলে তো কোনো কথা নেই!
“H20”এবং“Wish” শব্দের অর্থ তাদের জানতেই হবে কেনো? আর তারা জানে না তাই বা শিওর হলেন কেমনে? ওরকম একটা পরিস্থিতিতে এরকম অনেক কিছুর উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না! আর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা বুঝি আপনারা কেউ জানেনই না?
কয়েকজনের পোস্টে কমেন্টে দেখলাম, বিশাল বীরত্ব প্রকাশ করছে পুরুষরা। একজন তো বলছে, ‘ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেও, কিভাবে বিজ্ঞান শেখাতে হয়....’, ‘ওর সুন্দরী প্রতিযোগিতা ভরে দেওয়া দরকার’, ‘ওর তো বস্তির মেয়ের হওয়ার কথা ছিল’... এই যে মানসিকতা, এই যে নারীর কোনো ত্রুটি না পেলেও খুঁজে বের করে অর্গাজমের সুখ পাওয়া, পুরুষাঙ্গ মাথায় নিয়ে ঘোরা- এসমস্ত পুরুষদেরকে আমি যদি ‘ধর্ষক’ বলি তবে কি আপনাদের খুব আঁতে ঘা লাগবে? আপনারা তেড়ে আসবেন কি আমাকে ঘায়েল করার জন্য? আসেন! আমার তো সমস্যা নেই, কেননা আপনাদের মতো পুরুষতান্ত্রিক পুরুষকে তো আর আজকেই চিনছি ব্যাপারটা তা নয়! সুতরাং, আপনাদের তেড়ে আসা, আঘাত করাকে ভয় পাই না! বরং দ্বিগুণ সাহসে সাহসীকা হই।
আপনাদের মুখে চপেটাঘাত করার জন্য মুখে যেমন বলি, ঠিক তেমনি কলমেও লিখি। যতদিন মস্তিষ্ক বিকৃতি না হচ্ছে ততদিন আপনাদের এরকম নোংরা মানসিকতা নিয়ে সোচ্চার থাকবো- এছাড়া উপায়ও নেই! নীরব থাকা সম্ভব না! এরকম পরিস্থিতি চারদিকে হয় পাগল হয়ে যেতে হবে নয় আত্মহত্যা করতে হবে- কিন্তু কোনটাই না করে বেঁচে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করা কম দৃঢ়তার ব্যাপার নয়!