প্রমা ইসরাত

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী

পুরুষ যখন ভিক্টিম –পর্ব-২

নারী নারী কর কেন তোমরা, পুরুষদের সাথে যে অত্যাচার হয় সেই বিষয় নিয়ে তো কেউ কিছু বল না। পুরুষরা কত ভাবে মানসিক এবং শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয় সেই গুলা বল না কেন? আরে একটা পুরুষ তো লজ্জায় কানতেও পারে না, কাওরে কইতেও পারে না। জানো তোমরা কত কত পুরুষ মানসিক ভাবে ডিপ্রেশনে থাকে, একটা মাইনকার চিপায় থাকে অলটাইম, হায়দার ভাইয়ের গান শুনো নাই? “আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়” এক্কেবারে, একদম এক্কেবারে এই রকমই হয়। নারী ছলনাময়ী, নারীবাদীরা স্বার্থপর, নারীবাদীরা আসলে পুরুষ বিরোধী, শুধু বিরোধী না তারা আসলে পুরুষ বিদ্বেষী । নারী বাদীরা .টুট.. নারী বাদীরা..টুট. এইসব নারীবাদীরা টুট..”

আজ আমি পুরুষ পুরুষ করবো। ধরুণ একটি বিয়ে হবে। তাদের বিয়েতে শুধু কাছের পুরুষ আত্মীয়দের একটা লিস্ট দেই।

কনে পক্ষ
বাবা, চাচা, ভাই, ফুপা, মামা, খালু, দুলাভাই
বর পক্ষ
বাবা, চাচা,ভাই, ফুপা,  মামা, খালু, দুলাভাই
আচ্ছা আপনারা কি বলতে পারেন, পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও কনের পুরুষ আত্মীয়দের চাইতে বরের পুরুষ আত্মীয়দের হম্বিতম্বি বেশি থাকে কেন? কেন পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও কনের পিতা একজন কন্যাদায়গ্রস্থ লোক, আর বরের পিতা একজন গৌরবান্বিত পিতা? বলতে পারেন, পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বরের ভাই কে, কনের ভাই এর, এতো তোয়াজ করে চলতে হয় কেন?

আচ্ছা , কনের বা বরের বিবাহ প্রস্তুতির দিকে একবার দেখুন, “ফুপা–খালু-দুলাভাই” এই তিন ব্যাক্তিকে আয়োজন করে দাওয়াত দিতে হয়, বলেন তো হয় না? নইলে তারা প্রচন্ড মাইন্ড করে। ঠিক মতো দাওয়াত না দিলে আসবেই না। তখন বাবা আর চাচাকে অনেক আয়োজন এবং সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের কনভিন্স করে নিশ্চিত হতে হয়, যে তারা বিয়েতে আসছে, এবং তাদের সমাদরের কোন ত্রুটি নেই। আচ্ছা, বলতে পারেন, পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বাপ-চাচাকে , “ফুপা-খালু-দুলাভাই” কে এতো সমাদর করতে হয় কেন? তাদের এতটুকু মাইন্ড করাতে কেন, বাপ চাচাদের বুক কাঁপে?

এবার আসি মামা ক্যারেক্টার এ। বলতে পারেন, “মামা” শব্দটা “চাচা” শব্দটার চাইতে এতো মোলায়েম আর আপন কেন? বলতে পারেন, পুরুষ হওয়া স্বত্তেও, মামা এতো আবেগ, আদর , মজার আর তূলনামূলকভাবে চাচা জ্যাঠা একটু রুক্ষ কেন? কেন ছড়াকার লিখলেন, “তাই তাই তাই মামার বাড়ি যাই” ।

এইবার ধরুণ দুলাভাই ক্যারেক্টার, দুলাভাইরা যখন বেড়াতে আসেন, তখন বাড়িতে এতো সাজ সাজ রব, পোলাও কোর্মা, বহুমাত্রিক পদ দিয়ে টেবিল উপচে ফেলা হয়, আর সেটা যদি কখনো না হয়, তাহলে দুলাভাইরা প্রচন্ড মাইন্ড করে। দুলাভাই যেন কোন মতে মাইন্ড করতে না পারে, সেই জন্য সর্বদা তটস্থ থাকতে হয়, শালা শালি সহ বাড়ির সবাইকে। বাড়ির জামাইকে কেউ উল্টো পাল্টা, বলে দিলে সবাই জিভে কামড় দিয়ে হারেরেরে করে আসে। পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বোনের ভাই কে দুলাভাই দুলাভাই করে অস্থির হতে হয় কেন? কিংবা কোন ত্রুটি যদি হয়, তাহলে সেই ভাইটিকে এতো জবাবদিহি করতে হয় কেন?

যখন পুরুষ টি মেয়ের পরিবারের, তখন সে ক্ষমতাহীন, অসহায় আবার সেই পুরুষই যখন সে ছেলের পরিবারের, ছেলের সাথে সম্পর্কিত তখনই সে ক্ষমতাবান। অর্থাৎ নারীর সাথে সম্পর্কিত যে কোন সম্পর্কের কোন ব্যাক্তি, পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে দুর্বল অনুভব করে।

পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার খেলাটাই এটা যে এই সমাজ ব্যাবস্থায় নারীর পাশাপাশি সমভাবে পুরুষও ভিক্টিম হবে। যেখানে নারী ক্ষমতাহীন, দুর্বল চিহ্নিত হয়, সেখানে নারীর সাথে সম্পর্কিত সব সম্পর্ক এবং সম্পর্ক যুক্ত ব্যাক্তিটি, পুরুষ হলেও দুর্বল। ফুপুর জন্য তাই ফুপাকে তোয়াজ করতে হবে, খালার জন্য তাই খালু কে তোয়াজ করতে হবে, বোনের জন্য বোনের জামাই কে, মেয়ের জন্য মেয়ে জামাই কে, তোয়াজ করে চলতে হবে। এবং মেয়ের বাবা যতই শিক্ষিত হোক আর ছেলের বাবা যতই মূর্খ থাকুক, শুধু মাত্র ছেলের বাবা, তাই সেই মেয়ের বাবা কে ছেলের বাবার কাছে মাথা নীচু করে চলতে হয়।

আপনারা যারা পুরুষতন্ত্রের বিরোধীতা করলেই বলেন যে, পুরুষ বিরোধীতা করা হচ্ছে, তাদের কাছে প্রশ্ন, এই যে উপরে পুরুষ দের লিস্ট দেয়া হল, পুরুষ হয়ে জন্ম নেয়ার পরও তারা ভিক্টিম কেন?

2743 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।