সৌম্যজিৎ দত্ত

লেখক, ব্লগার, আইএসআই তে লেকচারার এবং গবেষণারত ছাত্র।

তোমাদের দৃষ্ঠিভঙ্গি পাল্টে দেবো বার বার প্রকাশ্যে চুুমু খেয়ে!

কি হচ্ছে কলকাতায়! চারিদিকে যেখানে হিংসা, ধর্ষণ, খুন হচ্ছে, সেসবের কেউ সমাধান করতে পারছে না, সুরাহা করতে পারছে না, তখন মানুষ নিজেদের গায়ের জ্বালা মেটাতে, নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে নিরীহ ভালোবাসার মানুষদের ধরে মারছে

লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে এমন ঘটনা কাগজের পাতায় পড়তে গিয়ে। মেট্রোতে যখন ভিড় গিজগিজ করছে, তখন দু’জন ভালোবাসার মানুষেরা নিজেদের মতো করে জায়গা করে নিয়ে নিজেদের আলিঙ্গন করছে। আরে ওরা তো খুন, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই  করে নি, ওরা ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। ভালোবাসার প্রকাশ চোখে দেখলে তো মনটা সবুজ হয়ে ওঠে, ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, প্রাণে আনন্দ আসে। সেখানে কিছু বয়স্ক মানুষ ওই দু’জন ভালোবাসার মানুষদের ধরে পেটালো! এমনকি আশেপাশের মানুষেরাও ওই পেটানোটাকে সমর্থন করলো!

কি হচ্ছে কলকাতায়!

কলকাতা কি তবে মৌলবাদের আখড়া হতে চলেছে! তবে কি কলকাতা বাংলাদেশ হতে চলেছে, যেখানে রাস্তায় পেচ্ছাপ করা যায়, রাস্তায় চুরি ছিনতাই করা যায়, ধর্ষণ করা যায়, অথচ কেউ কাওকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতে পারবে না, চুমু খেতে পারবে না!না। এই কলকাতাকে আমি চিনি না। কলকাতার এই রূপ আমার কাছে অপরিচিত। লেখক তসলিমা নাসরিন তাঁর এক প্রেমিককে চুমু খাওয়ার ছবি তুলেছিলো। সেই ছবি যখন আমি ফেসবুকে দেখতে পাই, আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি মনে মনে একটা ইচ্ছা তৈরি করি। আমিও রাস্তায় প্রকাশ্যে চুমু খাবো। আমিও ছবি তুলবো। আমিও শেয়ার করবো সেই ছবি ফেসবুকে। এবং আমি এমনটা করেও ছিলাম।

না, আমার কোনো দ্বিধা ছিলো না প্রকাশ্যে রাস্তায় চুমু খেতে বা ছবি তুলতে। যে মেয়েটিকে চুমু খেয়েছিলাম, তারও কোনো দ্বিধা ছিলো না। কারণ আমরা জানতাম, আমরা কোনো অন্যায় করছি না। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি, এবং ভালোবেসে চুমু খাচ্ছি, জড়িয়ে ধরছি। এতে কোনো অন্যায় নেই। আমরা কারোর ক্ষতি করছি না। বরং এই হিংসার যুগে মানুষকে ভালোবাসা দেখিয়ে, হিংসা ভুলে ভালোবাসতে শেখাচ্ছি। এই ভালোবাসা অন্য অনেকের কাছে খারাপ, নিকৃষ্ট, কলুষিত মনে হলেও, আমাদের কাছে এমন ভালোবাসা ছিলো ভীষণ পবিত্র, ভীষণ আনন্দের, ভীষণ সুখের, শান্তির। এই ভালোবাসাতে শুধু ভালোবাসাই ছিলো। ছিলো না কোনো হিংসা, ছিলো না কোনো প্রতারণা।

আসলে আজকের এই প্রতারক সমাজ প্রেম দেখে, ভালোবাসা দেখে লজ্জা পায়। অনেকটা তেমন হয় যদি কুৎসিত স্বচ্ছ আয়নার সামনে দাঁড়ায়, তবে সে নিজের কুৎসিত তা দেখে নিজেই লজ্জা পায়, ঘেন্না পায় বা চমকে ওঠে! তেমনই।ওদের হিংসা ভালোবাসার সামনে লজ্জা পায়, নিজেদের ছোট মনে করে। নিজেরা ভালোবাসতে পারে না, বা ভালোবাসা পায় না। ওরা হতাশ হয়ে ওঠে। নৈরাশ্যে ভোগে। এই হতাশা, এই নৈরাশ্যের কোপ যখন ওরা সহ্য করতে পারে না, তখনই জ্বলে ওঠে, নিরীহ ভালোবাসার মানুষদের আক্রমণ করে, ব্যর্থতার আক্রোশ মেটাতে চায়।

খবরদার কলকাতা!

তোমাদের এই গোঁড়ামি, এই মৌলবাদের আখড়া সাজানোকে আমরা ভালোবাসার মানুষেরা কখনো মেনে নেবো না, তোমাদের ক্ষমা করবো না। তোমরা যদি এভাবেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ভালোবাসার মানুষদের আক্রমণ করো, তবে আমরাও বারেবারে তোমাদের চোখের সামনে আয়না তুলে ধরবো। প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরে, চুমু খেয়ে, ভালোবাসা প্রকাশ করে তোমাদের লজ্জা দেবো। আমরাও দেখে নেবো যে তোমরা কতটা আক্রোশ মেটাতে পারো! কত দিন পারো।

7965 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।