মালালা ইউসুফ জাই আর এমা ওয়াটসনের একটা সাক্ষাতকার আছে ইউটিউবে। সেখানে এমা ওয়াটসন মালালাকে প্রশ্ন করেছে
-মালালা, তুমি কি একজন নারীবাদী?
মালালা উত্তর দিয়েছে- ইয়েস, আই এম আ ফেমিনিস্ট। বিকজ ফেমিনিজম মিন্স ইকুয়ালিটি (হ্যাঁ, আমি নারীবাদী। কারণ নারীবাদ মানে সমতা)।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পুত্র নারায়ন চন্দ্রের বিয়ে দিয়েছিলেন এক বিধবা মেয়ের সাথে। একালের মুখে সমতার বাণীওয়ালা লোকদের মতন করেন নি যে মুখে বলবেন
-আমি নারীর সমতায় বিশ্বাসী, আমি ধর্ষণের বিরোধী, কিন্তু বিয়ে করার বেলায় খুঁজবেন ভার্জিন মেয়ে!
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীবাদীই ছিলেন। তৎকালীন হিন্দু সমাজে ছোটো ছোটো মেয়েদের বুড়ো বুড়ো স্বামীর সাথে বিয়ে দেওয়ার পর, স্বামী গত হওয়ার পর যে মাথা ন্যাড়া করে, সাদা শাড়ি পরিয়ে রাখার চল, সেটাকে উনি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন- স্ত্রী গত হওয়ার পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে, স্বামী গত হওয়ার পর স্ত্রীটি কেন পারবে না? তাকে কেন সাদা শাড়ি পরে, নিরামিষ খেয়ে, মাথা ন্যাড়া করে জীবন্ত লাশ হয়ে থাকতে হবে?
যেমন ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। যেমন ছিলেন শরৎচন্দ্র। রামমোহন রায় সতীদাহ নামের একই চিতায় মৃত স্বামীর সাথে জীবন্ত স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার জঘন্য প্রথা তুলে দিতে আন্দোলন করেছিলেন। শরৎচন্দ্র যে ছদ্মনামে নারীর সমতার কথা লিখতেন, নারীবাদী প্রবন্ধ লিখতেন সেটি কোনো পুরুষ নাম নয়, ডাহা নিজের বোনের নাম, একজন নারীর নাম- অনিলা দেবী নামে।
এঁরা পুরুষ ছিলেন না, এঁরা মানুষ ছিলেন। এঁরা কোনোকালেই নারী পুরুষকে আলাদা চোখে দেখেন নি, দেখেছেন সমতার চোখে, মানবতার চোখে। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন নারীবাদ মানে পুরুষকে বাদ দিয়ে বিবাদ বাঁধানো নয়, নারীবাদ মানে- মানবতাবাদ।
এতোদিনে মানবজাতির সভ্য হওয়ার কথা ছিল। তবুও কারা যেন এক মুসলিম লোককে গরুর মাংস খাওয়ার সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল, কারা যেন প্রতিবার দুর্গাপূজার শুরুতেই প্রতিমা ভেঙে জানান দেয়- পৃথিবীটা ভরে গেছে অমানুষে!
শুভ জন্মদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর! প্রায় দুইশো বছর পরেও আপনার মতন মানুষ বিরল। আপনি জন্মেছিলেন বলে আমরা নারী হিসেবে গর্ব করি, আপনি জন্মেছিলেন বলেই আমরা মানুষ হিসেবে গর্ব করি!