পৃথু স্যন্যাল

জার্মান প্রবাসী পৃথু স্যন্যাল আপাদ মস্তক একজন স্বাধীনতাকামী ব্যক্তি, ব্লগার। বর্তমানে নারী'র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

একুশ মানে মাথা নত না করা

মহাবিশ্বের সকল কিছুই নিয়ত পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় পরিবেশ, প্রতিবেশ। বদলে যায় পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানের জন্য জীব বৈচিত্র। শুধু কি তাই, বদলে যায় সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া, সামাজিক রীতি-নীতি, সবকিছু। সোজা বাংলায় পৃথিবীতে এমন কোনো বিষয় নেই যা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে না। এই পরিবর্তনের বাইরে কোন কিছুই নেই, নেই আমাদের ভাষাও। বিবর্তনের মতো আমাদের ভাষাও কালে কালে পরিবর্তিত হয়েছে, হয়েছে বিবর্তিত। তৈরি হয়েছে একটি ভাষা থেকে একাধিক ভাষার।

এক সময় পৃথিবীতে আমাদের প্রাণের মাতৃভাষা বাংলারও কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। পণ্ডিতগণের মতে বাংলা ভাষা সংস্কৃত থেকে সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাকে ডাকা হয় সংস্কৃতের দুষ্টু মেয়ে হিসাবে। দুষ্টু হোক আর শিষ্ট হোক এটা সত্য যে বাংলা ভাষা অন্য আরেকটা ভাষার পরিবর্তিত রুপ, যেভাবে সে ভাষাটিও অন্য কোনো ভাষার পরিবর্তিত রূপ। এই সংস্কৃতও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর একটা অংশ।

ঠিক কখন থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছিলো তা নিয়ে ভাষা বিজ্ঞানী, বাংলা ভাষার গবেষকগণের মধ্যে অনেক মতো পার্থক্য আছে। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে তাঁরা বিস্তর অনুসন্ধান চালিয়েছেন। এদের মধ্যে ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার সেন, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখের নাম প্রনিধানযোগ্য। ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগেও ইন্দো-ইউরোপিয় ভাষার অস্তিত্ব ছিলো। সে ভাষাই কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে শতম, আর্য, আর্য কথ্য বা আদিম প্রাকৃত, প্রাচ্য প্রাকৃত, গৌড়ি প্রাকৃত, গৌড়ি অপভ্রংশ, প্রাচীন যুগ, সন্ধিযুগ, মধ্য যুগ, আধুনিক যুগ পেরিয়ে বর্তমান প্রচলিত বাংলায় রুপান্তরিত হয়েছে। বর্তমান বাংলা ভাষার যে রূপটি আমরা পাই, তাও বেশিদিন আগের নয়। ১৮০০ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষার রূপটিকে আধুনিক হিসেবে ধরা হয়। এরপর থেকে বর্তমান রূপটিও অনেক পরিবর্তন, পরিমার্জিত হয়েছে। মনে পরে, যখন সবেমাত্র প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিলাম তখন থেকেই দীর্ঘ- ঈ, ঊ কার বদলে হ্রস্ব-ই, উ কার ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে শুনতাম। বড় হতে হতে জানলাম কার ব্যবহারের নিয়ম পরিবর্তিত হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু শব্দ ছাড়া দীর্ঘ-কার ব্যবহারের আর কোনো প্রয়োজন নাই।

ভাষার উৎপত্তি আর বিকাশ নিয়ে কথা বলার পেছনে আসল কারণ হলো, আমাদের রক্ষণশীল মনমানসিকতা। আমাদের রক্ষণশীল মানসিকতার কারণে যেমন করে সমাজে নতুন কিছুকে আমরা মেনে নিতে পারি না, ঠিক তেমন করে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও আমরা কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। আমরা বাংলা ভাষাকেও একটা জগদ্দল পাথরের ন্যায় স্থির রাখতেই পছন্দ করি। অবশ্য এই মানসিকতার পেছনে রয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট। আমাদের মনে এই ধারনা বদ্দমূল হয়ে গেছে; যেহেতু আমরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি, সেহেতু বাংলা ভাষার কোনো ধরণের পরিবর্তন আমাদের দ্বারা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এ ধরণের ধারনার সাথে মৌলবাদী ধারনার কোনো অমিল নেই।

হ্যাঁ, আমাদের বাংলা ভাষার এটা হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক যে আমরা এর জন্য প্রাণ দিয়েছি। কিন্তু, এই প্রাণ দেয়া কি ছিলো বাংলা ভাষাকে তাঁর ভাষা তাত্ত্বিক গোষ্ঠীতে স্থান দেবার জন্য? কোন ধরণের পরিবর্তনকে বাঁধা দেবার জন্য? না কি বাংলাকে একটা রাষ্ট্রের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য? এটা সত্য যে একটা ভাষা রাষ্ট্রের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার টিকে থাকার সম্ভাবনাকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। তাই বলে, ভাষার স্বাভাবিক পরিবর্তন কিংবা বিবর্তনকে সহজভাবে না নেয়ার কিছু নাই। কিছুদিন আগেও বাঙলা লিখার জন্য সাধু রীতিই ছিলো প্রচলিত ও মার্জিত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সাধু রীতি বিদায় নিয়েছে, চলিত রীতিই কথ্য রূপের সাথে সাথে এখন লিখার রীতিতে সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। বরং কেউ যদি এখন সাধু রীতিতে কিছু লিখার চেষ্টা করে তাহলে তা হাস্যকরই ঠেকে। এখন কোনো ভাষা সৈনিক যদি দাবী করে বাঙলাভাষার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি, আমাদের সময়ে সাধুরীতি ছিলো মার্জিত রীতি, তাই এখনও সাধুরীতিতেই লিখতে হবে, তাহলে উনার দাবী কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে?

পৃথিবীর কোনো ভাষাই মৌলিক নয়। প্রতিটা ভাষাই কোনো না কোনোভাবে অন্য একটি ভাষা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, অন্য ভাষার শব্দ নিয়ে নিজের শব্দ ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এটা যে কোনো ভাষার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। ভিন্ন সমাজের মানুষের পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার ফলে সংস্কৃতির আদান প্রদান যেভাবে ঘটে, ঠিক সেভাবেই এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় শব্দ আদান প্রদান একটি সহজাত প্রক্রিয়া। একে অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। এখন বাঙলা শব্দ ভান্ডারে “আম্মা” কিংবা “আব্বা” শব্দদ্বয় নিয়ে যদি কেউ বলে বেড়ায় যে এগুলো বাংলা শব্দ নয়, ভিন্ন ভাষার শব্দ, এগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে একুশের চেতনাকে ধুলিস্যাত করা হচ্ছে, তাহলে তার দাবী কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে? এমনিতেও বাংলা শব্দ ভাণ্ডারের অধিকাংশ শব্দই ভিন্ন ভাষা থেকে সরাসরি কিংবা আংশিক পরিবর্তিত হয়ে প্রবেশ করেছে। এমনকি উপসর্গগুলোও ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছে। বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে মৌলিক বাংলা শব্দের সংখ্যা সত্যিকার অর্থেই নিতান্ত কম। সংস্কৃত থেকে বাংলার উৎপত্তি বিধায় এর অধিকাংশ শব্দ হয় হুবহু সংস্কৃতের মতো অর্থাৎ তৎসম, আর কিছু শব্দ পরিবর্তিত সংস্কৃত অর্থাৎ তদ্ভব। আর অন্যান্য ভাষার শব্দের কথা না হয় নাই বললাম। এখন কোনো বাঙলা ভাষিক মৌলবাদী যদি সব কিছুতেই বাংলা শব্দ খুঁজতে যায়, তাহলে কতটুকু সফল হবে সে?

হাল আমলে বিশ্বায়নের যুগে নিত্য নিত্য নতুন শব্দ তৈরি হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তির, নতুন বিষয়াদির। এখন যদি সকল কিছুতেই বাংলা শব্দ খুঁজি, সবকিছুতেই বাংলায়ন করতে চাই, তাহলে তা এক ধরণের মৌলবাদীতা ছাড়া কিছু হবে না। যে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে বসে আমি এই লেখাটা লিখছি, অথবা আপনি যে মোবাইল থেকে পড়ছেন, সেগুলির যুতসই কোনো বাংলা শব্দ কি আদৌ পাওয়া সম্ভব? নির্মলেন্দু গুণ মোবাইলের বাংলা করেছিলেন মুঠোফোন। সেই শব্দেও ফোন অংশটুকু ইংরেজি। এখন ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি বলে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, রকেট ইত্যকার শব্দগুলোর বাংলা নেই বলে যদি রাগ করে বসে থাকি, তাহলে তা চোরের উপর রাগ করে কলাপাতায় ভাত খাওয়ার নামান্তর বৈ অন্য কিছু হবে না।

বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনের তাহলে মাহাত্ব্য কোথায়? যে ভাষার জন্য আমার ভাইয়েরা প্রাণ দিয়েছে সে ভাষার জন্য যদি আমরা মৌলবাদী না হই, তাহলে একুশের প্রভাত ফেরী আর শহীদ দিবস উদযাপনের হেতু কি! সত্যিকার অর্থে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট যদিও বাংলা ভাষা, তথাপি এই আন্দোলন ভাষাকে টিকিয়ে রাখা কিংবা বাংলাকে বিদেশি ভাষার দখল থেকে মুক্ত করার জন্য নয়, এটি ছিলো বাংলাভাষাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্টার জন্য। রাষ্ট্রভাষা অর্জিত হবার সাথে সাথে বায়ান্নর আন্দোলন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছিলো। বায়ান্নর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আসলে আমরা বুঝতে শিখেছিলাম যে আমরা ভিনদেশিদের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছি, শোসিত হচ্ছি। এটাই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মূল স্বার্থকতা। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা উপায় নাই যে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত বায়ান্নর হাত ধরেই। বায়ান্নর মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিসত্তার রাজনৈতিক পরিচয়টির সন্ধান আমরা পেয়েছি। এরপর থেকেই আমরা ধীরে ধীরে স্বাধীকার আন্দোলনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করি।

এখানেই একুশের মূল স্বার্থকতা। আমরা যেটাকে এখন একুশের চেতনা বলে ঢোল পেটাই, গলাবাজি করি, সে চেতনা হলো বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের চেতনা। এটি বাংলাভাষায় ভিন্ন ভাষী শব্দের ব্যবহার রোধের চেতনা নয়। আমাদের একুশ মুক্তির সূর্যোদয়ের সূত্রপাত। একুশ মানে আমার স্বাধীনতাকে চেনা, নিজের স্বাধীনতাবোধের বিকাশ, স্বাধীনতার সূত্রপাত।

আমরা বর্তমানে একুশকে বানিয়ে ফেলেছি একটা উৎসব মার্কা দিনের মতো। আমাদের কাছে একুশ হয়ে গেছে ভ্যালেন্টাইন কিংবা বসন্তবরনের মতো। আর আমার মতো কিছু আতেলেকচুয়ালদের কাছে একুশ হলো, কে কোথায় জুতা পায়ে শহীদের বেদিতে উঠে গেলো, কে কোথায় ভুল বানানে বাংলা লিখলো, কে কোথায় বাংলার সাথে ইংরেজি মিশিয়ে ককটেল ভাষায় কথা বলে ফেললো সেসবের অনুসন্ধান করা। আবার কেউ কেউ গলা উঁচিয়ে বলতে থাকেন যে একুশের প্রেম মাত্র একদিন কেনো? সারা বছর বাংলাভাষা নিয়ে কই থাকেন? ইত্যকার বাণী ছুড়ে দিয়ে লোকেদের হেনস্থা করায় ব্যস্ত থাকেন। অথচ, একুশ তো গলাবাজির জন্য হয় নি, বাংলা বানানের শুদ্ধতা নিরূপণ করতেই হবে এই ধরণের কোনো শ্লোগান নিয়ে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারীতে সালাম বরকতেরা মিছিল নিয়ে বের হয় নি। একুশের পেছনে ছিলো আপন জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। এটি ছিলো বাঙালি জাতিসত্তার রাজনৈতিক আন্দোলনের ভ্রুণ। এই একুশ আমাদেরকে চিনিয়েছিলো নিজেদের জাতি সত্তাকে, চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলো যে বাঙালি একটা জাতি, তাদেরও রয়েছে নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার, তাদেরও মুক্তির দরকার।

বায়ান্নের হাত ধরেই ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের বাঙালির জয় অবশেষে মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা লাভ। পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামক মানচিত্রের অঙ্কুরোদগম হয়েছিলো বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারিতে।

আজকে স্বাধীনতার অর্ধশতক হয়ে যাচ্ছে প্রায়, আমরা বাংলাদেশ নামক মানচিত্রে বসবাস করছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের সত্যিকারের মুক্তি মিলেছে কি? তথাকথিত গণতন্ত্রের দেশে সত্যিকারের গনতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে কি? রাজনৈতিক স্বাধীনতা দূরে থাক, কথা বলার স্বাধীনতাটুকু আমরা পেয়েছি কি? আমাদের সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জিত হবার আগ পর্যন্ত একুশ আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকুক, দিন দিন আমাদের স্বাধীনতাবোধ আরও পরিষ্কার হয়ে উঠুক আমাদের মানসে। বায়ান্নর একুশ যেমন করে আমাদেরকে স্বাধীনতা অর্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শিখিয়েছিলো, তেমনি করে দিনে দিনে একুশ হয়ে উঠুক আমাদের মুক্তির মন্ত্র, আমাদের মুক্তির শ্লোগান। শুধু বানান আর ইংরেজি মিশ্রণ থেকে বাংলাকে রক্ষা নয়, একুশ হয়ে উঠুক সত্যিকার অর্থেই মাথা নত না করার দৃঢ়তা। শহীদ দিবস অমর হোক।

1796 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।