রেডিটে একবার এক থ্রেডে ধর্ষকদের ডাকা হয় তাদের স্টোরি বলার জন্য। সেখানের বেশিরভাগ ধর্ষকই মনে করে তারা আসলে ধর্ষক না। তারা মাতাল ছিলো, মেয়েটি সেক্সি ছিলো বলে নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারে নি। অনেকেই কমেন্ট করেছে যে, কাজটা করার সময় তারা মনে করে নি যে এটা ভুল কিছু। পরে ভিক্টিমের কাছ থেকে শোনার পর তারা বুঝতে পারে।
অনেকেই মনে করে তারা যা করেছে তা ধর্ষণ ছিলো না, মেয়েটি ওভাররিএক্ট করেছে। 'না' মানে এদের কাছে অসম্মতি ছিলো না, সেক্সি একটা বিষয় ছিলো।
খুব কমই স্বীকার করেছে যে, ধর্ষণ করার জন্য তারা নিজেদের ঘৃণা করে, কাজটা রিগ্রেট করে। এটাই স্বাভাবিক। কোনো মানুষই নিজেকে খারাপ মনে করতে চায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খুনিও নিজেকে ভালো মানুষ মনে করে ঘুমাতে যায়। তাই এসব ধর্ষকের এরকম ধারনা বিস্ময়কর নয়। এরা কেউই বলে নি যে ধর্ষন করা ভালো। কিন্তু বেশিরভাগই ধর্ষণের সঠিক মানে জানে না। তাই তারা মনে করছে তারা ধর্ষক না।
তবে একটা জিনিস খুব পরিষ্কার, যৌনতৃপ্তির জন্য কেউ ধর্ষণ করে না। ধর্ষণ মূলত একটা পাওয়ার প্লে। একটা মানুষের শরীরের উপর সম্পূর্ন কর্তৃত্ব পাওয়ার চেষ্টা। প্রায় সব ধর্ষকই নারীদের পন্য হিসেবে দেখে, যে কোনো ভাবেই হোক না কেনো পন্যটাকে পাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের কাছে বয়স, আকার, সৌন্দর্য এসব কোনো ব্যাপার না। একই কারণে, নারী ধর্ষকের সংখ্যা কম। কারণ নারীরা পুরুষকে সচারচর পন্য হিসেবে দেখে না, সাথে শক্তির পার্থক্য তো আছেই।
তাছাড়া আমাদের মধ্যে 'Consent' বা 'সম্মতি'র ধারনাটিই নেই। আমরা যখন কারো বাসায় যাই তখন তাদের কিচেনে ঢুকে সব খাবার খেয়ে ফেলি না। বাসার মালিকদের সম্মতি নিয়ে বা তারা যে খাবার দেয় তা খেয়ে ধন্যবাদ জানাই। তেমনি একজন মানুষের শরীরে কিছু করার আগে তার অনুমতি নিয়ে করতে হবে। যৌনতার প্রতিটা ক্ষেত্রেই সম্মতি দরকার। কিন্তু আমরা তা মনে করি না। বেশিরভাগ পুরুষই মনে করে, নারীরা তাদের সম্পদ ও সম্পত্তি। সম্পত্তির আবার সম্মতি কিসের! নিজের সম্পত্তিকে নিয়ে যা খুশি করা যাবে।
গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষক ধর্ষিতার পরিচিত কেউ। সেটা কলিগ, পাশের বাসার ভাড়াটিয়া, কাছের বন্ধু, মামা-চাচা-বাবা-ভাই যে কেউ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ভিক্টিমের এগিয়ে এসে বিচার চাওয়াটাও খুব কঠিন। তাই বেশিরভাগ ধর্ষনের ঘটনা সবার অগোচরেই থেকে যায়। আমি পার্সোনালি অনেক নারী-পুরুষকে চিনি যারা পরিবারের কারো কাছে ধর্ষিত হয়ে ভয়ে বা লজ্জায় বা অসহায়ত্বে চুপ করে থেকেছে। তবে তাই বলে অপরিচিতরা যে ধর্ষন করে না তাই না। বাসে, গাড়িতে, ক্ষেতে, অন্ধকার গলিতে হওয়া ধর্ষনগুলো তাই প্রমান করে।
অধিকাংশ পুরুষই বোঝে না যে, নারীর কাছে সব পুরুষ ধর্ষক নয়। কিন্তু নারীরা জানে, যে কোনো পুরুষ যে কোনো সময় ধর্ষক হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে।
সেলফ ডিফেন্সে বা লিঙ্গ কর্তনে ধর্ষণ কমানো গেলেও এতে ধর্ষণ কমে না। কারণ 'ধর্ষণ সংস্কৃতি' কোনো পার্সোনাল সমস্যা না, এটা একটা সামাজিক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, সমাজে যখন ধর্ষণের ক্ষেত্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠে, প্রয়োজনীয় যৌনশিক্ষার অভাব দেখা দেয় তখন ধর্ষণ বেড়ে যায়। আইনের প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা ছাড়া ধর্ষণ কমানো কখনোই সম্ভব না। প্রতিটা ধর্ষণের ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে ধর্ষককে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের 'সম্মতি'র গুরুত্ব বোঝাতে হবে। তা না হলে প্রতিদিনই খবরে দু-তিনটি ধর্ষনের ঘটনা দেখতে হবে।