আমার বিয়ের দিন সন্ধেতে বাপের বাড়ি থেকে বিদায়ের লগ্নে আমার এক কাকা আমাকে একটি মেয়ে হিসেবে বিবাহিত জীবন ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের প্রতি আমার আচার আচণের ঔচিত্য বিষয়ে উপদেশ ও আদেশ দিয়ে বলে, ওরা লাথি দিলে লাথি খাবি, টুঁ-শব্দটি করবি না, খবরদার। কাকার সেই উপদেশমালার কথা শ্বশুরবাড়িতে যাবার পথে বারবার মনে পড়ছিলো। সেদিন এবং তারপরেও অনেকদিন মনে হয়েছিলো, কাকা আমায় বড় মহৎ উপদেশ দিয়েছেন, মহান শিক্ষা দিয়েছেন। বর, বরের বাপমা ও বড়বোনের দ্বারা চব্বিশঘণ্টা অবিরাম নির্যাতিত হবার সময় কোনোদিন টূঁ-শব্দ করতে পারি নি। নীরবে হজম করেছি ওদের সব কদর্য গালি, নির্মম নির্যাতন। আর ঘানির গরুর মতো সেই অত্যাচারী ঘৃণ্য ওদের জন্যই দিনরাত রান্না করেছি, ওদেরকে টেবিলে দশ পদের খাবার পরিবেশন করে ক্ষুধার্ত পেটে ঘোড়া আর সৈনিকের মতো অদূরে দাঁড়িয়ে থেকেছি সজাগ -কার কখন কী লাগে দৌড়ে গিয়ে প্লেটে প্লেট উপচায়ে ঢেলে দিয়েছি, ওদের সবার কাপড় হাতে ধুয়েছি। সবই করেছি বাধ্য হয়ে। বাড়িতে ডাকাত পড়লে বা পথে হাইজ্যাকার দ্বারা আক্রান্ত হলে কি কারো প্রতিবাদ করার অবস্থা থাকে? আমারও ছিলো সেই অবস্থা।
আজ বুঝতে পারছি, আমার মাস্টার ডিগ্রীধারী কাকা আমায় অন্যায় ও ভুল উপদেশ দিয়েছিলো। কারো লাথি খেয়ে মুখ বুজে সেই লাথি হজম করা কোনো মাহাত্ম্য নয়, এটা ঘোর অন্যায়, অসম্মান এবং অনুচিত। কাকা নিজে কি মুখ বুজে সহ্য করবে কারো অত্যাচার? অথবা তার ছেলে বা ভাতিজাকেও দেবে অন্যায় নীরবে সহ্য করার উপদেশ? আমি মেয়ে বলেই আমাকে পরের বাড়িতে পরের নীরব ফুটবল হয়ে থাকার উপদেশ দিলো আমার নিজের কাকা? যেখানে সম্মান নেই, পাগলা কুকুরের মতো, ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো যে জন্তুরা একজন মানুষকে সারাদিন অত্যাচার করে, রোবটের মতো তাকে নিজেদের সুখ সাচ্ছন্দের কাজে ব্যবহার করে সেখানে থাকাই অন্যায়। বরের বাপ মফিজুর রহমান মইজা আমার রান্না গোগ্রাসে খেয়ে খেয়ে, আমার হাতে বানানো পরোটা হাতির খোরাকে কোঁৎ কোঁৎ গিলে গিলে আনলিমিটেডভাবে সাবাড় করতে করতে আমাকে বানরের মতো লাফাতে লাফাতে গালি দিতে থাকতো, কী রে চোদানী, তরকারী লবণাক্ত হয় নি কেনো? কী রে চোদানী, চা তৈরি হতে একমিনিট দেরি হলো কেনো? সেই আপাদমস্তক নির্ভেজাল মাদারচোদের বিচি ও পুরুষাঙ্গ যে তখন লাত্থি মেরে থেৎলায়ে দিই নি সেই দুঃখে এখন বুক ভেঙে যায়।
আমার কাকার আমাকে উপদেশ দেওয়া উচিত ছিলো, অন্যায়ের কাছে কখনো কোনো অবস্থাতেই মাথা নত করবি না, সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচবি সব সময়। কোনো ব্যাটা লাথি দিলে তার বিচি গেলে দিবি, কোনো বেটি লাথি দিলে তার জায়গামতও ঢেঁকির পাড় দিয়ে দিবি। আর কেউ ভালো করলে তাকে দ্বিগুণ ভাল ফিরায়ে দিবি।