সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হকের একাদশতম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি!
ওয়াহিদুল হকঃ-জন্ম: ১৬ মার্চ, ১৯৩৩ - মৃত্যু: ২৭ জানুয়ারি, ২০০৭
লেখক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি রবীন্দ্র সংগীতে বিশেষজ্ঞ হিসাবে খ্যাতিমান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ‘স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা’র প্রধান উদ্যোক্তা। জন্ম ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার ভাওয়াল মনহরিয়া গ্রামের একটি সংস্কৃতিমনা পরিবারে। পুরো নাম আবুল ফাতাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। পিতা মাজহারুল হক এবং মাতা মেওয়া বেগম।
পিতা মাজহারুল হক ১৯৪৬ সালে ঢাকার নওয়াব হাবিবুল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন। ওয়াহিদুল হক আরমানি টোলা গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন৷ তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও লেখিকা অধ্যাপক ড.সনজিদা খাতুনকে বিয়ে করেন।
তিনি স্কুল জীবন থেকেই কম্যুনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ন্যাপের হয়ে কুড়েঘর প্রতীকে কেরানীগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়াহিদুল হকের পেশা ছিলো সাংবাদিকতা। ছাত্রাবস্থা থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫৪ বছর সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে “অভয় বাজে হৃদয় মাঝে” ও “এখনও গেল না আঁধার” শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন দৈনিক জনকন্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায়।
তার আসল কর্মক্ষেত্র ছিলো সংস্কৃতি অঙ্গন। তিনি ছিলেন মেধাবী রবীন্দ্র সংগীতের তত্ত্বজ্ঞ, শিক্ষক, সংগঠক ও বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ প্রচারক। রবীন্দ্র সঙ্গীত ছিলো তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে আইয়ুব সরকারের রবীন্দ্র-বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি জনমত গঠন করেন এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সমমনস্কদের নিয়ে 'ছায়ানট' প্রতিষ্ঠা করেন এবং আমৃত্যু ছায়ানটের সাথে যুক্ত ছিলেন। সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান 'কণ্ঠশীলন' এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন। সারা দেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা প্রসারের লক্ষ্যে তিনি ১৯৮০ সালে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, নালন্দা (বিদ্যালয়), শিশুতীর্থ, আনন্দধ্বনি প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।তিনি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম একজন সংগঠক ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য দান করে যান।