"ওড়না" মানে শুধু ওড়না-ই নয়, ওড়না মানে কেবল একপ্রস্থ কাপড়-ই নয়, যা নারীর বুকের স্ফীত মাংসপিণ্ডকে আড়াল করার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে, তার শারীরিক সৌন্দর্যকে ঢেকেঢুকে রাখে, যাতে পুরুষ তার প্রতি আকর্ষিত না হয়। "ওড়না" হলো সেই আচ্ছাদন, যা নারীর সকল বাহ্যিক সৌন্দর্যকেই শুধু নয়, তার অন্তর্গত মেধার বিচ্ছুরণকেও মনবন্দী আর ঘরবন্দী ক'রে রাখতে ব্যবহৃত হয় আমাদের এই ধর্ম-শাসিত এবং পুরুষশাষিত সমাজে।
মেয়ে, তুমি এদের চাপিয়ে দেয়া অন্ধকার সব আচ্ছাদন ছিঁড়ে আলোমুখি হও। জীবন সুন্দর, যাপনকে জীবনময় করো। জীবনের সেই সৌন্দর্যকে জীবনে আর যাপনে মেখে নাও। আমাদের ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর দিকে তাকাও... চিরন্তন এক বাঙালি নারীর রূপ, অপ্রতীম এক বাঙালি নারীর সাজ। জীবনভর কীভাবে আলো ছড়িয়ে গেলেন গুণে-রূপে-সাহসে-সাজে তেজস্বী এই নারী।
ওড়না
ও মেয়ে, ওরা জানে, তোর মুক্তি লেখা এই আকাশে...
জেনেবুঝেই আসমানি রঙের ওড়নায় ঢেকে দিলো
ওরা তোর আকাশী রঙের আকাশটাকে।
কেনো রে মেয়ে, কেনো তুই চেয়ে নিলি ওড়না,
বুঝে কিংবা না বুঝে!
ওরা তো এগিয়ে দেবেই! দিলেই নিতে হবে?
কেনো ছুড়ে ফেলিস নি? কেনো ফেলিস নি ছিঁড়ে?
ওই যে তোর আকাশী রঙের আকাশ ঢেকেছে
আসমানি রঙা ওড়নায়; পাথরতুল্য ওড়না
আর কিছুতেই নামাতে পারলি না বুকের থেকে।
জানি জানি আমি তোর অনেকটাই জানি,
ওড়না দিয়ে ঢেকেছিলি শুধু বুকের স্ফীত মাংসপিণ্ড
ঢাকতে পারিস নি হিমালয় সমান বুকের ক্ষত।
ছায়া হয়ে দেখেছি কাল রাতে
নিজের শবদেহ ভাসিয়েছিলি নিজের ভেলায়
পাশফেরা অনিচ্ছুক কান্নাশরীর তোর
মুখে জমানো একদলা থুথু দেখেছি! জল দেখিনি চোখে।
মনরক্ষায় কি শেষরক্ষা হলো মেয়ে?
ওই যে আগ বাড়িয়ে দেয়া এবং
চেয়ে নেয়া ওড়না... বুঝে কিংবা না বুঝে,
ঢাকতে পেরেছে তোর শরীরের স্ফীত মাংসপিণ্ড
ঢাকতে পারে নি বুকের হিমালয় সমান ক্ষত।
কেনো সেদিন তুই ছিঁড়ে ফেললি না, ছুড়ে ফেললি না?
আজ ওরা উপগত শরীরে নয়, তোর সত্তা আর সিদ্ধান্তে।
কষ্ট হয় রে মেয়ে, তোর জন্যে খুব কষ্ট।
বুকের জমিন নয়, ওড়না ঢেকে দিলো জীবনভূমিকে
না আসলো আলো, না বইলো হাওয়া
ফাংগাস ধ’রে গেল মেয়েজীবনটাতে...
আসমানি ওড়নায় ঢেকে দিলো
তোর আকাশী রঙের আকাশটাকে।
ও মেয়ে, কবে আর তুই মুক্তি লিখবি আকাশে আকাশে!