অর্জয়িতা রিয়া

লেখক

শোষিত শাসকদের এলিয়েন রস

মানুষ হিসাবে নিজের সীমাবদ্ধতাগুলার কথা ভাবতে গেলে, এই অসুস্থ সমাজ ব্যবস্থায় মাইয়া হইয়া জন্মানোর কারণে তৈরি হওয়া সীমাবদ্ধতাগুলাই মূলত সামনে আইসা দাঁড়ায়। আমি স্বাধীনচেতা। কিন্তু যেইসব মাইয়ারা নিজেরে সতীর লেভেলে রাখনের লেইগা অন্ধের মতো সমাজের তৈরি কইরা দেওয়া সকল অযৌক্তিক এবং অমানুষিক সব নিয়ম-কানুন মাইনা চলে, তাদের কথা ভাবতে গেলে একটা কথাই মনে হয়, এমন অমানুষের মত জীবন লইয়া কেমনে বাঁচে? এরা বুঝব কবে?

 

সমাজের পুরুষদের অবস্থা আরো শোচনীয়। এরা নিজেগোরে সমাজের শাসকশ্রেণী ভাবলেও, সমাজই মূলত এগোরে শাসন করতেছে। অর্থাৎ, নিজেদের শাসন ব্যবস্থা দ্বারা নিজেরাই শাসিত হইতেছে সব চেয়ে বেশী। সোজা কথায় বলতে গেলে, নিজেরাই নিজেদের চিন্ত ভাবনার বড় দাস।

তাই তারা, নিজেগোরে যতটা না মানুষ তার থেইকাও অনেক বেশী পুরুষ ভাবতে পছন্দ করে। পুরুষ হইতে পারাটা মানুষ হইতে পারার চাইতে বেশী সম্মানজনক।

তবে পুরুষেরাও মানুষ, তাদেরও আছে সহজাত আবেগ, অনুভূতি, তাদেরও কষ্ট হয়, তাদেরও কান্না পায় কিন্তু, তারা কাঁদে না। কারণ, তাদের বিকৃতমনা মনীষীগণ প্রাচীন আমলেই সফলভাবে এই মিথ্যার খুঁটি সমাজে গভীর কইরা গাইরা দিয়া গেছেন, "পুরুষেরা কাঁদে না। কান্নাকাটি একটা অতি মেয়েলি কাজ, আর মেয়েলি কাজ পুরুষগোর করা শোভা পায় না। তাই তারা সকল আবেগের মুখে পাথর মাইরা থ্যাতলাইয়া দিয়া পশুর মতো জীবন যাপন করেন। কিন্তু পশুগোও তো কষ্ট হয়।

হুমায়ুন আহমদ’র একটা বিখ্যাত বাণীর কথা বলা যাক। তিনি পুরুষতান্ত্রিক ছিলেন, এটা স্পষ্ট। সেইটারই শাখা কিনা ওইটা তা নিয়া আমার সন্দেহ আছে। ওই যে, ...মেয়েরা যদি বলে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে, ছেলেরা বুঝবে অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা।

আমি নিজেও হুমায়ুন আহমদ’র লেখার ভক্ত। কিন্তু তার এই সকল কথায় আমার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হইয়া যায়। দুনিয়াতে যদি কোনো বিষয় নিয়া সবচাইতে বেশী গবেষণা হইয়া থাকে, সেইটা হইতেছে নারী।  তাদের পায়ের নখ থেইকা শুরু কইরা চুলের আগা পর্যন্ত সমাজের ম্যাগনিফায়িং গ্লাসের তলায় যায়। মাইয়াগো প্রত্যেকটা আচরণই যেহেতু মানুষ থেইকা ভিন্ন, তাই সম্ভবত তাদের নখের ভাঙনের ধরন নিয়াও কোনো তত্ত্ব থাইকা থাকবে। সিগমান্ড ফ্রায়েডের সুরে কেউ হয়তো বইলা গিয়া থাকবে, "মেয়েদের নখ কী চায়?"।

যাই হোক, আহমদ সাহেবে ফিরত আসি। মেয়েদের প্রেমে পড়া নিয়া পুরুষেরা কম গবেষণা করে নাই। প্রেমের জলে হাবুডুবু খাওয়া নত মুখের লাজুক রমণীর চিত্র তো কবিদের আরাধ্য চিত্র। প্রেমে পড়লে মেয়েদের চেহারা এবং হাসি দেখলেই নাকি সহজেই বোঝা যায়। তারাই তো বলছে। মাইয়ারা ওই পছন্দের মানুষের সামনে কেমন আচরণ করে সেইটাও শ্রদ্ধেয় মনীষীগণ লেইখা রাইখা গেছেন। এত কিছু কইরাও তারা নাকি ব্যর্থ, কারণ নারী হইতেছে রহস্যময়ী, নারী হইতেছে গোলকধাঁধা। এবং এই বুলি আওড়ায়া রোম্যান্টিক মানুষজন নারীরে মানুষ থেইকা ভীনগ্রহের প্রাণী বানায়ে ফেলছে।

তারপর আরেকটা আছে না, ওই যে, মাইয়ারা যখন বলে হ্যাঁ তার মানে হইতেছে না,  যখন বলে না তার মানে হ্যাঁ, হি হি হি। পুরুষেরা তাঁর মানে সদাসর্বদা সত্যি কথা কয়। তারা রোবট। হি হি হি। তাদের সব হ এর মানে হ, না এর মানে না। হি হি হি হি হি। দাড়ান আরেকটু হাইসা লই। তাদের সঙ্গানুসারে তাইলে আমারে নারী নামক পদার্থ বলা যাইতেছে না তার মানে।  কারণ আমি স্পষ্টভাষী।


আমার জানা মতে আমি  পুরুষ না, কিন্তু আবার হিজড়াও না। মিল্লা গেছে, আমি এলিয়েন। হি হি হি হি। কালকে একজন আমারে বেত্তমিজ বলছেন। তার মানে আমি একটা বেত্তমিজ এলিয়েন। হি হি হি হি।

এইসব কথাবার্তা যখন শুনি, আপনি পুরুষ হইলে বুঝবেন না এগুলা প্রতিনিয়ত শোনাটা কতটা অপমানজনক। কতটা কষ্টকর। মইরা যাইতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। এইগুলারে সমাজের সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত পুরুষেরাও হাস্যরস বা স্রেফ মজা হিসেবে ব্যবহার করেন।  একজন মানুষের মানুষ হওয়াটা অস্বীকার, তারে মানুষের মর্যাদা না দিয়া, পা তলায় পিষা ফালানো ঠিক কোন ধরনের মজার মইধ্যে পড়ে আমার তা বুঝে আসে না। কয়দিন আগে একটা পোস্টের কমেন্টে এক ছেলে লিখছে, "নারীদের ব্রেইন যদি কোনো মেশিনের ভিতরে দেওয়া হতো, তাহইলে মেশিনের স্ক্রু বের হয়ে আসত।“ কীভাবে সম্ভব! বিবেক বুদ্ধি, মনুষ্যত্ব বলতেও কিছু আছে। তারা তো নিজেগোরে মানুষ বইলাই দাবী করে, তাইলে এমন আচরণ করে ক্যান?

2124 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।