অপ্রিয় কথা

লেখক একজন নারীবাদী, ব্লগার এবং অনলাইন একটিভিস্ট।

সতীত্ব নামক এক উদ্ভট ধারণা

অনেকদিন আগে আমার বন্ধু মিলন চারজন বন্ধুকে নিয়ে শোকে দুঃখে পার্টি দিচ্ছিল। কারণ প্রেমিকার সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। বন্ধু মিলন পেগ খেতে খেতে আমাদের বলে, -ইলা আমাকে ছেড়ে কিভাবে চলে যেতে পারল সেটাই ভাবছি! তার সাথে....

কথা শেষ না হতেই আহসান বলল, -আরে বাদ দে! তুই তো ওরে খাইয়া দিছস, ভোগ করছস, ওর জামাই কিন্তু এখন দুই নম্বর মাল পাবে!

আমি বললাম, -আহসান, ইলা দুই নম্বর মাল হতে যাবে কেন? ইলা যদি দুই নম্বর মাল হয়, তাহলে মিলনও তো দুই নম্বর মাল হয়ে গেল!

আহসান, -কিভাবে?

আমি, -সিম্পল! এখন মিলন যদি বিয়ে করে, মিলনের বউও কিন্তু মিলনকে দুই নম্বর মাল হিসেবে পাবে। তোর কথা অনুযায়ী। আর মিলন কি শুধু ইলাকে ভোগ করেছে? ইলাও কি মিলনরে ভোগ করে নাই? ইলাও কি মিলনরে খাই নাই? ইলাও কি তৃপ্তি পাই নাই? কিরে মিলন আমি কি ভুল বললাম?

মিলন আমাকে বলল, না দোস্ত ঠিক কইছস। ইলা আমার কাছে শারিরিক সম্পর্কটা বেশি চাইত। বাসায় কেউ না থাকলে সাথে সাথে কল দিত। আমি অনেকটা অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও তার ইচ্ছেটুকু পুরন করার জন্য চলে যেতাম।

বীরু এতোক্ষন চুপ ছিল, সেই মিলনকে বলল, -আচ্ছা ইলার সাথে কতোবার করেছিস?

মিলন, -অনেকবার হবে, ঠিক মনে নেই....

উপরের উল্লেখিত ঘটনাটা কাল্পনিক নয়, বাস্তব। এই লেখার স্বার্থে ঘটনাটা উল্লেখ করলাম। বাস্তবিক অর্থে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি জানি না, কোনো মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সহবাস করার পর, "আজ আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে খাইছি", এই কথাটি তার বান্ধবীদের বলে কিনা। বা আমি বয়ফ্রেন্ডকে ভোগ করছি। পুরুষ বন্ধুদের মুখে এই কথা অজস্রবার শোনা যায়, অমুক প্রেমিক তমুক প্রেমিকারে খাইয়া দিছে! তমুক প্রেমিকাকে উমুক প্রেমিক খাই দিছে। যেন শুধু তারায় খায়, মেয়েরা খায় না। মেয়েরা যেন এক সেক্স মেশিন। শুধু যেন আমরাই তাদেরকে খাই।

আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে নারীর কাছে পুরুষরা কখনো কোনো ভাবেই নত শিকার হতে চায়না। আমি অনেক অনেক বিবাহিত পুরুষকে দেখেছি, বউকে তৃপ্তি দেওয়ার জন্য কিংবা একটু দীর্ঘ সময় ভোগ করার জন্য, ঔষধের দোকান থেকে সেক্স পাওয়ারের বাড়ানোর ঔষধ কিনতে। আমি জানিনা কোনো বউ তার স্বামীকে ভোগ করার জন্য এমন ঔষধ কিনে কিনা। কিন্তু পুরুষরা কিনে। তো এখানে দুর্বল কে?

শারিরিক পরিশ্রমের দিক থেকে তো বটেই, শক্তির দিক থেকেও একজন নারী পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমাদের সমাজে একজন বিবাহিত নারী সংসারের রান্নাবান্না আর সন্তানদের জন্য যা খাটুনি খাটে, পতি দেবতাটি কিন্তু তার অর্ধেক ও খাটে না। দিনেশেষে ঐ জম্মদাতার কৃতিত্ব কিন্তু পুরুষই পায়। নারীটা দশমাস দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করে পেটের ভিতর যে সন্তান নির্মাণ করে চলে, অথচ তার কোনো অধিকার নেই জম্মদাতা হবার! আমাদের সমাজে নারীকে ছোট কাল থেকে শেখানো হয় তুমি দুর্বল। তাদের আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয়া হয়- তোমার নরম কোমল দুটি স্তন আছে, তুমি দুর্বল। তোমার মাথায় লম্বা চুল আছে, তুমি দুর্বল। তোমার তুলতুলে নরম একটা দেহ আছে, তুমি দুর্বল। রাত বিরাতে তোমার কোত্থাও যেতে নেই। কুকুর শেয়ালে খাবে তোমাকে। তুমি লক্ষী মেয়ের মতো ঘরে বসে থাকবা। তোমার জীবন স্বার্থক হবে স্বামীর সোহাগে।

-নারী তুমি দুর্বল নও। ছোটকাল থেকে দুর্বল ধারণাটা তোমার কচি মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমাকে বলা হয়েছে আস্তে চলতে, ধীরে চলতে। গলা উঁচিয়ে কথা না বলতে। যোনির সতীত্ব নামক এক উদ্ভট ধারণা তোমার মনে গেঁথে দেয়া হয়েছে। এই বলে বিয়ের আগে তোমার যৌনতার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই সমাজে ওরা তোমাদের পতিতা বানিয়েছে, কিন্তু তোমাদের জন্য ওরা পুরুষ পতিত লয়ের ব্যবস্থা করেনি। বিয়ের ক্ষেত্রে তোমার মধ্যে ওরা ঠিকই ভার্জিনিটি খুঁজে। কিন্তু নিজের যে ভার্জিনিটি নাই, একথা তারা ভুলে স্মরণ করেনা। তুমি মুক্তির জন্য বেরিয়ে এসো। পুরোনো সমস্ত জঞ্জালময় শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেরিয়ে এসো। কেউ স্বাধীনতা এনে দিলে তা সঠিক নয়। দুর্গম পথ তোমাকেই পেরোতে হবে। মুক্তির পথ তোমাকেই আবিস্কার করতে হবে।

4203 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।