একটা ভিডিও শেয়ার দেখলাম, কোনো এক সভায় তসলিমা নাসরিন কে কিছু লোক মারার চেষ্টা করছে, কিছু লোক থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মার খাচ্ছে।
যে ভিডিও টি শেয়ার দিয়েছে, তার ক্যাপশন হচ্ছে, বেশ হয়েছে, ব্লাডি ফেমসিকার, অন্যদের রিলিজিয়ন নিয়ে বাজে কথা বললে এমনই হবে।
তসলিমার উপর এটাক হওয়াতে অবাক হই নি। গত ২০ বছরে তসলিমাকে মাইর দিতে হবে, এটা একটা আইডলজি হয়ে গেছে, যেমন জাফর ইকবাল নাস্তিক, এমন কি মশাররফ করিম ও নাস্তিক (কেম্নে, সে উত্তর অধিকাংশ ই জানেন না) তসলিমা কে যারা দেখতে পারেন না, তার মিটিং এ যাওয়ার লজিক টা বুঝলাম না। মাইর দিতে গেছে?
আমি দুঃখ পেয়েছি, আমার বন্ধুর কথায়। একজন মহিলাকে পথেঘাটে মারধোর করতে দেয়ার প্রশ্রয়ের মধ্যে যে বিপদ আছে, সেটা তিনি ধরতে পারছেন না। কাল উনাকে মাইর দেয়ার জন্য অজুহাত বের হবে। বের হবার অবশ্য দরকার নেই, এখনি আছে। উনি একজন গাইনি ডাক্তার, উনি টাকার জন্যে সিজার অপারেশন করেন, এই ইস্যুতে উনাকে মাইর দেয়া যেতে পারে (আদৌ করেন কি না, সে প্রমাণের দরকার কি? দেশে কি সিজার এম্নে বাড়ছে? আর সিজার ত গাইনি ডাক্তারই করে)।
আমি বরিশালে ডাক্তারের উপর হামলার পোস্ট দেয়াতে একজন কমেন্টে সিলেটে নবজাতকের লাইফ থ্রেটেনিং মিসম্যানেজমেন্টের লিংক দিয়েছেন। সিলেটের ডাক্তারের দোষে কেনো বরিশালের ডাক্তার পিটাইতে হবে এটা আমি জিজ্ঞেস করি নাই। মানুষ কে বুঝিয়ে বললে সে বুঝবে, এটা যে একটা ভুল ধারণা সে আমি বেশ বুঝে গেছি।
কিছুদিন আগে, একটা পোস্ট দেখলাম, একজন মেয়ে ডাবের দোকানে ডাব খাচ্ছিলো। সেখানে একদল কিশোর মাদ্রাসা ছাত্রের দল এসে হাজির। তারা মহিলাকে বলছে, দাঁড়ায় পানি খাওয়া নিষেধ, আপনি বসে ডাব খান। উনি হতভম্ব, এই ফুটপাতে আমি কোথায় বসবো? মাদ্রাসার ছাত্ররা মাথা নাড়েন, সেটা উনাদের দেখার বিষয় না, ইসলামে নিষিদ্ধ কাজ উনারা করতে দিবেন না। মহিলা রেজিস্ট করতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে ডাব ফেলে চলে এসেছেন। মাইন্ড ইট, আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পানি খাবেন, এই স্বাধীনতা অচিরেই চলে যাচ্ছে।
কোনো মেয়ে যখন মুখে বা লেখায় সমাজের, ধর্মীয় রীতির কোনো অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলেন, সে প্রথম গালি খান তসলিমা হইছো? মেয়েটি অপমানিত হন, ছিঃ, তসলিমা হতে যাব কেনো?
আর আপনি যদি আমার মতো গবেট হন, তাহলে বুঝবেন, তসলিমা সেইজন যে সেই আমলে আমরা ভাল বিয়া এবং বাচ্চার চিন্তার যুগে ছিলাম, ফেসবুক ছিলো না, ভাবনার অক্ষরে রুপান্তরের গণ্ডি একমাত্র লেখকদের ছিলো, তখন থেকে নারী নিগ্রহের ব্যাপারে আওয়াজ তুলে গেছে। আপনি তাকে যতই অপছন্দ করেন, তার মতো কুখ্যাত আর একজন ও হতে পারে নাই। এই সমাজ এখনো যখন মেয়েদের দাবায়া নিজেদের কম্ফোর্ট নিশ্চিত করতে চায়, তাদের মনে যে প্রতিরোধের আশংকা আসে, সেটা তসলিমার রুপ ধরে আসে। তসলিমা যেইদিন মরবে, আপনার কথায় তসলিমার ছায়া দেখে আতকে ওঠার ভয়টাও মরে যাবে।
আমার মধ্যে একটি দোষ আছে। আমি সহজে কোনো কিছুতে দোষ খুঁজে পাই না। মোটিভ পাই। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে পরস্পর বিরোধী মানুষ থাকেন। কেউ উদার, কেউ রক্ষণশীল, কেউ প্রতিবাদী, কেউ নির্যাতিত, কেউ তর্কবাগীশ, কেউ ছিদ্রান্বেষী, কেউ গৃহিণী কেউ কর্মজীবী, মহাধার্মিক, মহানাস্তিক। আমার বেশিরভাগের কথা যুক্তিযুক্ত মনে হয়। লোকে নারীবাদী হতে চায় না, তাতেও দোষ দেখি না। বাপের ঘরে বড় হয়ে স্বামী ঘরে রাঁধিয়া খাইবো, এত আরাম স্বাধীনতার নামে ছাড়ে কোন উল্লুকে? আর দুইটা ভাত কাপড় দিয়ে নিত্যদিন ৪ বেলা ফ্রেশলি কুকড খাবার, বিছানা, বিছানাসঙ্গীর সিস্টেমই ভাঙ্গার দরকারটা পরলো কিসে? বেশ ভালো চলছে। চলুক।
অস্ট্রেলিয়ান একটা ব্যাপার আমার খুব পছন্দ, সেটা হলো ডাইভারসিটি। রেডফার্ণ ষ্টেশন কনকোর্সে দাঁড়ালে আপনি দেখবেন, কত রকম মানুষ। সাদা, বাদামী, একটু সাদা, বেশি সাদা, শ্যামলা, উজ্জল কালো, ভয়াবহ কালো, বডিবিল্ডার, মরবিড অবেস, ডিজেবেল, স্কেটিং এ চড়া। আমার কাউকে কুৎসিত লাগে না। মনে হয় বেশ তো। এই যে এত রঙের মানুষ, এইতো বেশ সুন্দর। আমরা পাশাপাশি ছুটতে ছুটতে ট্রেন ধরি। সমস্যা হয় নাতো কোনো!
ঝামেলা তখন শুরু হবে, যখন আমি সুদানের লোকটা কে নিগ্রো বলবো, আমাকে কেউ ব্লাডি ইন্ডিয়ান বলবে, আমি একজন হোয়াইট কে রেসিস্ট বলে দোষারোপ করবো। যদি কেউ কালো লোক্টিকে হ্যারাস করে, আর আমি বলি কাল্লুরে পিটা, এইগুলা ড্রাগ ডিলার (অনেকেই) আরেকদিন আমাকে আইএস বলে মাইর দিবে, হিজাবি যেহেতু আইএসের সাথেতো লিংক আছেই। আছে না?
এই সমাজে নারীবাদী, সংসারী, গৃহিণী, কর্মজীবী সবার রোল আছে। কোনো সিনেমাতে যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রেমিক প্রেমিকা ভিন্ন আর কোনো চরিত্র না থাকে, মুভিটা ৫ মিনিট ও দেখবেন না। কেনো না সেটা বোরিং, বৈচিত্র্য নেই।
অন্যের নির্যাতনে কখনো চুপ থাকবেন না, এটলিস্ট ব্লেমিং করবেন না। তসলিমা আবোলতাবোল বলেন, আপনার লিমিট ও আপনার বক্তব্য ক্লিয়ার করা পর্যন্ত, নট ফিজিক্যাল এটাক। তাকে কেউ শারীরিক ভাবে নির্যাতন করলে আনন্দিত হবেন না আপনাকে নির্যাতন করার জন্যে কারণের অভাব নেই। আপনার প্রোফাইল দিন, নির্যাতন করার মোটিভ বের করে দিচ্ছি।