মশালের সলতে হয়ে তিন চারজন মানুষ পুড়ছে, যার মধ্যে দুটি শিশু! সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে। আমিও দেখলাম। আমার কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুনসান শুন্যে এক কণা জলীয় বাস্পের মতো আমি দোল খেতে থাকলাম শুয়ে শুয়ে। ঋণের আগুন পোড়াচ্ছিলো খুব কৃষক পরিবারটিকে, বিষে বিষ ক্ষয়ের মতো আগুন দিয়ে তারা মিটিয়ে ফেললো জীবনের আগুন! আমারও খুব ইচ্ছে হতে থাকলো মিটিয়ে দেই না মনুষ্য জন্মের ঋণ অমনি কোনো আগুনে!
পর পর তিনটি ইনবক্স সাউণ্ডে জেগে উঠলাম, প্রায় দিনই নতুন নতুন মেয়েদের কান্নায় ভরে উঠছে ভেতর ঘর। শোধ করা হয় না কোনো ঋণ, আমাকে উঠতে হয়, কথা বলতে হয় অনেকক্ষণ, এই সব ছিঁচ কাঁদুনে মেয়েগুলোর সাথে, বেশির ভাগ সময় আমি শ্রোতা, কারণ আমি জানি তারা বলতেই চায়, বলে হালকা হতে চায়। কেউ বলে -আপুরে গালাগালি আমি সইহ্য করি, কিন্তু শরীরতো আর মাইর সইতে পারে না। কোনদিন শুনবা মাইর খাইয়াই মইরা যাবো! আমার বলতে হয়- এই কাঁদবা না একদম, চোখের ভেতর আগুন জালো! মাইর সহ্য করবা না, বেরিয়ে যাও, শিক্ষিত একটা মেয়ে, পড়ে পড়ে মার খাবে কেনো? দুই বেড রুমের সংসার পৃথিবী না, পৃথিবীটা অনেক বড়, রাস্তায় গিয়ে পৃথিবী দেখো, তুমি যে আছো সেটা পৃথিবীকে জানতে দাও।
মেয়ে আবার কাঁদে- বলে আপুরে এই কথাটাই কোনোদিন কেউ বলে নাই, আমি যে আছি এইটাই সবাই ভুইলা গেসে। কথা চলতে থাকে, অনেক কথা। মেয়েটা ঠিক করেছিলো শিশুটিকে বিষ খাইয়ে নিজে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়বে! কথার ফাঁকে বলি তোমারতো দেরি হয়ে যাচ্ছে, ফ্যানে দড়ি বাঁধবে না?
-ক্যান যে মনে হইলো এই আপুটা এতো সাহস কেমনে পায় একটু জানি!
কাউকে বলি হাতের রগ কাটবে না?
-না আপু, রগ কাটলে আমি তো আর তোমার সাথে চ্যাট করতে পারবো না। স্বপ্ন দেখতে শিখবো না!
ইথারে ভেসে আসা এই সব মেয়েদের আমি কোনোদিন দেখিনি। ওরা প্রতিদিনি আমাকে নাকি দেখে ফেসবুকে! সাহস নামের শব্দটির মধ্যে ওরা মূর্ত করে তোলে একজন সাহসী ’নারী’কে, তারপর ফ্যানের দড়ি খুলে নিয়ে বারান্দায় টাঙিয়ে শিশুর রঙিন জামা শুকাতে দেয়, যে শিশুর মুখে বিষ দেয়ার কথা ছিলো তার জন্য খিচুড়ি রাঁধে। যে হাতের রগ কাটবে বলে ছুরি নিয়েছিলো সে আপেল কেটে খেতে খেতে আরেক ‘নারী’কে লিখে জানায় দেখো পৃথিবী -আমিও আছি! থাকবো!
আমারও মনুষ্য জন্মের ঋণ বাড়তে থাকে শোধ করা হয় না !