জাহানারা নুরী

কথা সাহিত্যিক জাহানারা নুরী একজন হিউম্যান রাইটস একটিভস্ট।

মাফিয়া চালিত রাষ্ট্রের জন্য দায়ী আপনার মানসিকতা

ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে কথা বলুন। যে সরকার ক্রসফায়ারে মদদ দেয় সে গুপ্তঘাতক। সে আপনাকে বিচারকের দোর গোড়ায় যেতে দিচ্ছে না। বিচারকের ন্যায়বিচার করার স্বাধীনতাকে হরণ করেছে সে। অপরদিকে নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইমপিউনিটিধারী অস্ত্রধারী বাহিণীকে লেলিয়ে দিয়েছে। ক্রসফায়ার প্রমাণ করছে অদক্ষ সরকার ও এর প্রশাসন অপরাধপ্রবণ। আইনের শাসনের চেয়ে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে আগ্রহী গোষ্ঠীর হাতে এরা দেশটাকে জিম্মি হতে দিয়েছে।

আইনের শাসনকে অগ্রাহ্য করে, অকার্যকর করে দিয়ে একটি সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তমূলেই আঘাত করে। বিচার ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে রেখে যখন সশস্ত্র বাহিনী ও ছদ্মবেশী মাস্তান, মাসলম্যানরা এলাকা ভিত্তিক দখল কায়েম করতে সমর্থ হয় তখন তা হয় মাফিয়া চালিত রাষ্ট্র।

মাফিয়া রাষ্ট্রে সরকারের অস্ত্রধারী একজনকে যখন ক্রসফায়ারে দিচ্ছে তখন আরো অনেক অপরাধীকে তাদের হাতে খেলাবার জন্য রেখে দিচ্ছে। এক অপরাধীর ইমপিউনিটির মূল্য মেটাতে যাকে প্রয়োজন নেই তাকে বা কোনও নির্দোষকে ক্রসফায়ারে দিচ্ছে। যেমন এরশাদ দিয়েছে, যেমন বি এন পি দিয়েছিলো লাল পতাকাকে নির্মূল করে নিজের দলের মাস্তান ও বাইশ জোটের জঙ্গীদের। রাজনৈতিক দলগুলোর অগণতান্ত্রিক দলীয় ব্যবস্থা, সরকারী অথবা দলীয় অস্ত্রধারীদের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহা করার প্রবণতা, দেশকে লুটেপুটে খেয়ে নিজেরা ফুলে ফেঁপে ওঠার লোভী মনোবৃত্তি ইত্যাদি নানা পশ্চাদকরণ দেশটাকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। গণতন্ত্র আজ চরম বিপদগ্রস্ত।

এই পরিস্থিতিতেই হয়েছে ইসলামী জঙ্গীদের উত্থান ও বেড়ে ওঠা। আজ আপনার আমার দেশ গণতন্ত্র নয় বরং সপ্তম শতাব্দীর পশ্চাদপদ কুসংস্কারের পায়ের তলে দলিত হচ্ছে। দেশের ভবিষ্যত শিশুদের মাদ্রাসায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখুন, ক’টিতে এপ্লাইড ফিজিক্স পড়ানো হয়? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা যারা বলে, যারা দেশের, আপনার আমার অঞ্চলের যা কিছু সুন্দর সে সব নিয়ে কথা বলে তাদের জীবনকে গুপ্তঘাতকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার ভেতর নাগরিকদের ঠেলে দিয়ে লুটেরারা, লুটে নিচ্ছে শ্রমজীবি মানুষের অর্জিত সহায় সম্পদ।

র‌্যাব, এন এস আই, আর্মি দেশের বিচার ব্যবস্থার সম পর্যায়ের হতে পারে না। বলা হয় তাদের কারো হাতে দেশের নিরাপত্তা, কারো হাতে দেশের আভ্যন্তরীন সন্ত্রাস দমন। এই সব কাজেরই আল্টিমেট লক্ষ্য সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বিধান। জনগণের প্রটেকশন। বিচার ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়ে সেই প্রটেকেশনের অধিকারকে শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সরকার এখন নিজেই রেপিস্ট, হত্যাকারী, ঘাতকের ভূমিকায়। এই সব ভয় উৎপাদন করে, ভয়কে তৈরী করেই ভয়াতুর পরিবেশ থেকে পুঁজির বেড়ে ওঠা, মিলিয়নিয়ারের সংখ্যাবৃদ্ধি।

ক্রসফায়ারে জনগণের, নাগরিকের প্রটেকশনের অধিকারকে অস্বীকার করে সরকারের ও রাজনৈতিক দলের একটি গোষ্ঠীর হাতে মানুষের জীবনকে তুলে দেওয়ার মানে হচ্ছে চরম স্বৈরাচারী একটি ব্যবস্থাকে সমর্থন দেয়া।

এই ব্যবস্থাকে আপনারা আগেও সমর্থন করেছেন। এখনও করে চলেছেন। সমর্থকরা এই ব্যবস্থারই অংশ। বুঝুনরে ভাই। আপনার ভিতরের অগণতান্ত্রিক মানসিকতা এই অপরাধী ব্যবস্থাকে সমর্থন করার কারণেই দেশটা এইখানে এসে পৌছেছে। যদি আপনি বদলান, তাহলে গণতন্ত্রের আশা আছে। যদি আপনি না বদলান, গণতান্ত্রিক দেশ চাইবার অধিকার আপনার নিজেরই থাকে কি?

1610 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।