বাংলাদেশের মানুষের বাচ্চাদে্রকে সম্মান করতে শেখাটা খুব জরুরি। আপনি জীবনের ত্রিশ চল্লিশ বছরে যা করতে পারেন নি তা যখন তের চৌদ্দ’র বাচ্চারা করে দেখাচ্ছে তখন পাকনামো করে তাদের ডিক্টেট করতে যাওয়াটা 'গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল' এর মতন।
শুধু রাজনদেরকে পিটিয়ে মারার ভিডিও প্রকাশ হলেই লোকের মনে পড়ে শিশু নির্যাতনের কথা। অথচ এদেশের শিশুদেরকে অর্ধেক মানুষের সমান গণ্য করা হয় পরিবার থেকেই। এক একজন সেলিব্রেটি আগ বাড়িয়ে পাকনামো করতে যাচ্ছে, লাইভে এসে উপদেশ দিয়ে ভরিয়ে ফেলছে, ফেসবুকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে খুঁত বের করছে। বাচ্চাগুলো দৃঢ়তার সাথে প্রত্যককে নাকচ করে দিয়েছে। বেশ ঔদ্ধত্যই বলা যায়।
আপাদমস্তক মাতব্বরি করা স্বভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ানো জাতি কি তাই সহ্য করতে পারে? এক্ষণ মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে বাচ্চাদের বাবা মায়ের আয়ের উৎস খুঁজলেও তারা লাইসেন্স খুঁজে পাবে না। বাহ বাহ! বিএনপি সমর্থকরা দাবি করে এই সরকারের আমলেও লুটপাট হয়েছে তাই তাদের নেত্রীর বিচার করা যাবে না। তেমনি এই সব সুশীলদের ও আত্মবিশ্বাস যে এই সব ছেলেমেয়েদের বাবা মায়েদের উপার্জন ও সৎ না, তাই সড়কে দাঁড়িয়ে সবার লাইসেন্স চেক করে বেড়ানোটা ধৃষ্টতা হয়ে যাচ্ছে। এরাই পরীক্ষার সময় প্রশ্নফাসের অপেক্ষায় নাকি থাকে তাই এদের এসব বড় বড় কথা মানা যাচ্ছে না। ওয়াও! বুড়ো বুড়ো দামড়ারা দেশের প্রত্যেক কোণায় কোণায় পরতে পরতে দুর্নীতি করছে, যে যেখানে যার যতটুকু ক্ষমতা ততটুকু দিয়ে দুর্নীতি করে উলটে দিচ্ছে, একটি বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নও তারা পরীক্ষার হল পর্যন্ত নিরাপদে নিয়ে যেতে পারে না। অথচ তারা আশা করে এই বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো প্রশ্ন হাতে পেয়েও প্রশ্ন না দেখার লোভ সামলাবে! আর না সামলাতে পারলে কি তাহলে নিরাপদ সড়ক ও চাওয়া যাবে না? গ্রেট! যে জাতি মারা খাইতে চায়, তাকে উঠতে বসতে মারা খাইতে দাও।
একজন ক্রিকেটার, প্রতি ম্যাচে যে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বাড়ি গাড়ি উপহার পাচ্ছে, সে কি আর নিজে নিজের অধীনে আছে? আপনি যখন আপনার ন্যায্য পাওনার অধিক নিয়মিত কারো কাছ থেকে পেতে থাকবেন, তখন আপনার স্বাধীনতা অবশ্যই আর আপনার হাতে থাকবে না। সাকিব আল হাসান তো আগেই রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কথা হলো, সাকিব আল হাসানদের কেনো মনে হচ্ছে যে তারা বাচ্চাদের আন্দোলনকে ডিক্টেট করার ক্ষমতা রাখে? বিনোদন আর জীবনের মধ্যে মানুষ আগে জীবনকে বেছে নেবে।
আন্দোলন ওরা ডেকেছে। ওরা করছে। ওরা এখন অব্দি কাউকে সাথে ডাকে নি। বরং ফিরিয়ে দিয়েছে। বয়সে বড় হলেই পায়ে পড়ে প্রণাম করার দিন শেষ। এরকম একটা ম্যাচিউর প্রজন্মের দিকে প্রণাম নেয়ার জন্য পা বাড়াতেও তো লজ্জা পাওয়ার কথা মশাই। সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে আসুন। ওদের মতামতের মূল্য দিতে শিখুন। অর্ধেক মানুষ নয়, মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে শিখুন, বন্ধু ভাবতে শিখুন। তাহলে আর ডিক্টেট করতে ইচ্ছে হবে না। সময় লাগবে। বহুদিনের মোড়লগিরির অভ্যাস তো! আমারও সমস্যা হয়।
পরিবর্তনের জোয়ার বাংলাদেশে এসে গেছে। এই প্রজন্মকে আপনার এতদিনের বদ্ধমূল মাতব্বরির সংস্কৃতি দিয়ে বাগে আনতে পারবেন না। নিজেকেও বদলাতে না পারলে হারিয়ে যাবেন। বৃদ্ধরা কখনো পরিবর্তন আনে নি। পরিবর্তনের সূচনা কাঁচা নবীনেরাই করে। পৃথিবীতে বেশি সময় থাকলে মানুষ অবাক হওয়ার এবং অবাক করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পরিবর্তন সুনিপুণ ভাবে আসে না। বিশৃঙ্খলভাবে আসে ঝোড়ো হাওয়ার মতো। চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে আসুন শিখি ওদের কাছে। পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই।