কাজী মাহিন

ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডায় অবস্থানরত কাজী মাহিন পুষ্টি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে লাঙ্গারা কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন। বর্তমানে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিউ ওয়েস্টমিনিস্টার, ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় কর্মরত আছেন।

নিরাকার/অদৃশ্য ঈশ্বর কি চালাকি মাত্র?

আচ্ছা আধুনিক ঈশ্বর ধারনায় গড কেনো নিরাকার বা অদৃশ্য? সনাতন ধর্মে বা আরো আগে যখন টোটেম বিশ্বাসী ছিলো মানুষ তখন কিন্তু গড নিরাকার ছিলো না। ধর্ম যদি ধার্মিকতার নামে রাষ্ট্র বা সমাজ চালনা এবং মানুষকে বশে রাখার জন্যে ব্যাবহার হয়ে থাকে তাহলে বুঝাই যায় নিরাকার বা অদৃশ্য গড অনেকটা আধুনিকতা/ চতুরতার ফসল। যুগে যুগে মানুষ অন্ধত্ব আর কুসংস্কারকে জয় করে বিজ্ঞানের পথে এগিয়েছে আর পুরনো অনেক বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত, দার্শনিক, বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষেরা ধর্মের উপরে হুমকি হয়ে এসেছিলো। ধর্ম ব্যাবসায়ী বা বিশ্বাসী ভীতুরা ধর্মের আধুনিকায়ন করে ঈশ্বরকে অদৃশ্য করে দিয়েছে। ক্ষমতালোভী কিংবা অবোধ ধার্মিকরা ঈশ্বরের স্থান দিয়েছিলো দুর্গম অলিম্পিয়া বা হিমালয়ে, তারপর অতিচালাকি করে তাদের জায়গা দিলো ব্রহ্মলোকে, চন্দ্রলোকে, সূর্যলোকে, ইন্দ্রলোকে ইত্যাদি| কিন্তু দিন দিন মানুষ যে এসবের ফরেন্সিক রিপোর্ট করে ফেলবে আর পাহাড়, সমুদ্র, চন্দ্র, সূর্যকে জেনে ফেলবে ব্যাটারা বুঝতে পারেনি।

শেষে ঝামেলায় পরে গিয়ে ঈশ্বরকে নিরাকার বানিয়ে দেয়া হলো তবুও ঈশ্বর থাকা লাগবে। এবার কোথায় খুঁজবে? কোথাও পাবে না, তবে আছে! অদৃশ্য এই ঈশ্বরের জায়গা হলো মনের ভেতরে বিশ্বাস নামক অন্ধত্বের মধ্যে। যেখানে মাটির ঠাকুরকে সন্দেশ খাওয়ানো যায়, আকাশে মেরীকে দেখা যায়, নবীর মুখে ঈশ্বরের বাণী শোনা যায়, গাধাসদৃশ প্রাণীর পিঠে সপ্ত আসমানে যাওয়া যায়, স্বর্গে হুরীর বাস খুঁজে পাওয়া যায়।

অবিশ্বাসীরা কিন্তু বসে নাই, এদিকে নাসার চন্দ্র বিজয়, মহাকাশ বিজয়, মহাশুন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো সব আগাচ্ছে আর নিরাকার ঈশ্বরের অস্তিত্বও যুক্তি আর বিজ্ঞানের কাছে শিশু হয়ে পড়ছে। এবার ভন্ড বিশ্বাসীরা নতুন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসলো, "শালা নাস্তিক প্রমাণ কর যে ঈশ্বর নেই!” এখন সেই পুরনো উদাহরণটা সামনে আনা যাক, আচ্ছা নাই জিনিসের প্রমাণ কেমন করে হয়? যে নাই জিনিসের প্রমাণ চায় সে ধুর্ত, কুযুক্তিপ্রিয় লোক নিশ্চয়?

এখন কেউ যদি এসে বলে, আমি ওখানে পৃথিবীর মতো আর একটা দুনিয়া দেখলাম, কিন্তু আমি বললাম যে হতেই পারে না! আবার সে বললো আমি দেখেছি!

তারপর আমি বললাম -আচ্ছা চলেন কোথায় দেখেছেন? প্রমাণ দিন! তারপর সে আমাকে বললো- আপনি বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করে দেখান ঐখানে পৃথিবীর মতো আর একটা দুনিয়া নাই! তাকে আপনি কি বলবেন? ধার্মিক, ভন্ড, অন্ধ আর যুক্তিবিমুখ লোকেরাই এমন দাবীর উপরে বসে থাকতে পারে। 

লল, দুনিয়াটাই নাই তা আবার প্রমাণ কিভাবে করবে বিজ্ঞান? আরে ভাই আপনি যদি আরেকটা দুনিয়া দেখছেন তাহলে বলেন কোথায় দেখছেন? প্রমাণের দায়ীত্ব দাবীদারের এটা বুঝতে কি অসুবিধা হয়! ফলে ধার্মিকদের উচিত ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করে দেখানো। নাস্তিকদের কোনো দায় পড়ে নি যে ঈশ্বর নেই - সেটা প্রমাণ করে দেখানোর। ধার্মিকরা যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায় তবে তাদের-

১) বস্তুগত (Materialistic)

২) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য (Sensory)

৩) অডিও-ভিডিও (Audio Visual) প্রমাণ দিতে হবে।

কোরানে কী লেখা আছে -সেটা কোনো প্রমাণ নয় কেননা বই যে কেউই লিখতে পারে। ফলে, যারা বলে কোরানে বা কিতাবে ঈশ্বরের কথা লেখা আছে তাদের বুঝা উচিত ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে কোনো বইয়ের কথার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

অদৃশ্য ঈশ্বরও যখন কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন তখনও গোঁয়ারেরা বলে যায়, বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারে নাই যে ঈশ্বর নাই, তাই ঈশ্বর আছে। কিন্তু মানুষের বানানো সবগুলো ঈশ্বর/সৃষ্টিকর্তা যে ভুয়া সেটা বিজ্ঞান হাজার হাজার প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে আর কোনো নিখোঁজ ঈশ্বর থাকলেও থাকতে পারে তাকে তো খুঁজে পাওয়া যায় নি তবুও কেনো ধর্ম নিয়ে এত ভেদাভেদ। আর জন্মসুত্রে পাওয়া ধর্মকে নিয়ে গুয়ার্তুমি "আমার ধর্ম সেরা তোমার ধর্ম ভুয়া" এই অর্থহীন বিশ্বাস! বিজ্ঞানের কেনো এত দায় যে, নাই জিনিসও প্রমাণ করে দেখাবে?

7245 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।