নীল জোনাকি

নীল জোনাকি নামে যিনি লিখেন, তিনি একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং লেখক।

আত্মহত্যা কি সমাধান?

রোমেনা। জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। পুরো ঠিকানা- গ্রাম-কবির পুর, পাটলি ইউনিয়ন, উপজেলা- জগন্নাথপুর, জেলা-সুনামগঞ্জ।

গত ২৫ জুলাই কলেজ থেকে ফেরার পথে খালাতো ভাই সিএনজি চালক ইউনুছ তাকে বাড়ী পৌছে দেয়ার কথা বলে কেশবপুর মসজিদের সামনে থেকে সিএনজিতে উঠায়। ইউনুছের সাথে ছিল তার বন্ধু শাহেদ। আপন খালাতো ভাইকে বিশ্বাস না করার কোন কারণ ছিল না বলেই রোমেনা সিএনজিতে উঠেছিল। ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি কিছুক্ষণ পরই তার জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছে।

কিছুদূর যাওয়ার পর অনেকটা নির্জন জায়গায় সিএনজি থামিয়ে, সিএনজি থেকে নামিয়ে ইউনুছ ও শাহেদ মিলে রোমেনার মুখ বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। হতবিহ্বল রোমেনা বাড়ী ফিরে পরিবারকে ঘটনাটি জানালে বাবা আকলুছ মিয়া ও বড় ভাই জুনায়েদ ইউনুছের বাড়ী চর কাছিমপুর গিয়ে তার বাবা আবু মিয়াকে জানিয়ে বিচারের দাবী করে। কিন্তু ইউনুছ সব অস্বীকার করে রোমেনার বাবা, ভাইকে গালাগালি করে। গালাগালির সূত্র ধরে তাদের মধ্যে বাক বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ইউনুছ তার চাচাতো ভাইদের নিয়ে চড়াও হয়ে মারধর করে রোমেনার বাবা ও ভাইকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়।

 

ধর্ষকের বাবার কাছে ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে পিতা-পুত্র মিলে মার খেয়েও বিচারের আশা ছাড়েননি আকলুছ মিয়া। এবার তিনি যান কাছিমপুর গ্রামের সালিশ আরিফ উল্লার কাছে কন্যার ধর্ষণের বিচার চাইতে। আরিফ উল্লাহ তাকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেন।

এরপর আকলুছ মিয়া কয়েকবার যান আরিফ উল্লার কাছে। কিন্তু তিনি নানান টালবাহানা করতে থাকেন। একসপ্তাহ পর আবার আরিফ উল্লার বাড়ী চর কাছিমপুর যাওয়ার পথে ইউনুছ তার লোকজন নিয়ে আকলুছ মিয়াকে মারধোর করে। ২য় বার মার খেয়ে তিনি বাড়ী ফিরে আসেন।

লজ্জা, অপমানে সেদিন রাতে রোমেনা বিষ পান করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর সেখান থেকে তাকে জরুরীভিত্তিতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে রোমেনার ভাই জুনায়েদ বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুই ধর্ষক, সালিশ আরিফ উল্লাহ সহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও আসামিরা কেউই পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। ওসি হারুনুর রশীদ জানান- অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, ধরা পড়তেই হবে।

ধর্ষকদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও তাদের খুব বেশী চিন্তার কারণ নেই। উকিলের কারসাজিতে আইনের ফাঁক ফোঁকর গলে বের হয়ে আসার পথ তাদের জন্য খোলা রয়েছে। শুধু খোলা নেই রোমেনাদের বাঁচার পথ। ইউনুছরা টিকে থাকবে বহালতবিয়তে, টিকে থাকবে তাদের গৌরবের বস্তু লিঙ্গ। আর সেই লিঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে রোমেনারা বিষপানে আত্মহত্যা করবে। তবুও ইউনুছরা টিকে থাকবে, টিকিয়ে রাখবে আরিফ উল্লারা। আরিফ উল্লারা রক্ষা করবে ইউনুছদের, রক্ষা করবে তাদের লিঙ্গকে। আর বারবার ধর্ষিত হবে রোমেনারা।

আত্মহত্যাকে সাধারনত কেউ সমর্থন করে না। কিন্তু রোমেনার আত্মহত্যাকে আমি পুরোপুরিভাবে সমর্থন করি। মরে গিয়ে রোমেনা বেঁচে গেছে। বিষপানে একবারই মাত্র মরেছে, কিন্তু ধর্ষিত হয়ে বেঁচে থাকলে লজ্জায়, ঘৃনায় প্রতিদিন মরতো, বারবার মরতো- যখন দেখতো ধর্ষকের জন্যও আমাদের মানবতাবোধ চুয়ে চুয়ে পড়ে, বেশীরভাগ মানুষই পরোক্ষভাবে ধর্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ধর্ষণকে জায়েজ করার প্রতিযোগিতায় নামে।

এই বেশ ভাল। রোমেনারা ধর্ষিত হবে আর ঘরের দড়জায় খিল আটকিয়ে বিষপান করে নীরবে চলে যাবে। এতে ধর্ষকের প্রতি মানবাধিকারও পুরোমাত্রায় রক্ষা পাবে।

আসুন আমরা প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলে রোমেনাদেরকে আত্মহত্যার সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ধর্ষকের মানবাধিকার রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখি।

2283 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।